ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফল আটকে রাখায় ১৮ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১০ আগস্ট ২০১৯

 ফল আটকে রাখায় ১৮ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ১৮ পরীক্ষার্থীর ফল আটকে রাখায় তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বরিশাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগের পাশাপাশি বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফল আটকে রাখাসহ তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে এক পরীক্ষার্থীকে কক্ষের মধ্যে আটকে মারধরের অভিযোগ করেছেন ওই ১৮ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। ১৮ পরীক্ষার্থীর অভিভাবকদের পক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিভাবক মাহবুব আলম বলেন, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই এইচএসসি (সেশন ২০১৭-১৮) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমাদের ১৮ জনের স্থগিত রাখা হয়। এজন্য ফল প্রকাশের আবেদন জানিয়ে গত ১৮ জুলাই বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৪ জুলাই বোর্ডের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা পরবর্তী ১৮ পরীক্ষার্থীর ফল প্রকাশের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল আজিম। কিন্তু সভা পরবর্তী ২৫ জুলাই বোর্ডের ওয়েবসাইটে ১৮ শিক্ষার্থীর ফল পূর্বের ন্যায় স্থগিত দেখা যায়। এজন্য পুনরায় বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়। এদিকে ১৮ পরীক্ষার্থীর উচ্চতর গণিত পরীক্ষায় একই ফল আসার বিষয়টিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষের সন্দেহের সৃষ্টি হলে গত ৫ আগস্ট ১৮ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বোর্ড চেয়ারম্যান, সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ অন্য কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উচ্চতর গণিত প্রথমপত্রে তারা ১৮ পরীক্ষার্থী কেন অধিকতর নম্বর পেল, কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবং বোর্ড সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ অস্বীকার করলে তাদের বোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি এবং হুমকি প্রদর্শন করেন। এমনকি তারা জোরপূর্বক বোর্ডের অফিস সহকারী গবিন্দ’র নাম বলতে বাধ্য করেন। তা না করলে ১৮ শিক্ষার্থীর ফল বাতিল করার হুমকি দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ফল স্থগিত থাকা নুসরাত কবির নামের বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে চেয়ারম্যানের বিশেষ কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়। এছাড়াও ওই ছাত্রীকে অফিস সহকারী গবিন্দর বিরুদ্ধে অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতা করার বিষয়ে জোরপূর্বক লিখিত রাখা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট স্থগিত রাখা ফল প্রকাশের কথা থাকলেও অদ্যাবধি তা প্রকাশ করা হয়নি বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, অভিভাবকরা চাইলে আইনী সহায়তাও নিতে পারেন। কিন্তু আমরা বোর্ডের আইনের বাইরে যাব না। দুষ্টু চক্রের মূল উৎপাটন করে ছাড়ব। তিনি বলেন, ১৮ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল স্থগিত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা গুরুতর। তারা অসদুপায়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। কেননা অপরাধী অপরাধ করে কোন না কোন চিহ্ন রেখেই যায়। ওই ১৮ শিক্ষার্থীর বেলায় একই হয়েছে। তিনি বলেন, যে ১৮ পরীক্ষার্থীর ফল স্থগিত রাখা হয়েছে তারা বরিশাল বিভাগের বিভিন্নস্থানের ১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে ওই ১৮ জনের পরীক্ষার খাতাই যে কোন একজন পরীক্ষকের হাতে পৌঁছেছে। এটা বোর্ডের কারোর সহযোগিতা ছাড়া করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ১৮ পরীক্ষার্থীর উচ্চতর গণিত প্রথমপত্রের উত্তরপত্রের বিশেষ স্থানে একই ধরনের দাগ দেয়া রয়েছে। তাছাড়া প্রতিজনের খাতার সঙ্গেই লুজ শিট রয়েছে। যা মূল উত্তরপত্রের সঙ্গে পিনআপ বা রশি দিয়ে বাঁধা থাকবে। কিন্তু তেমনি করে পাওয়া যায়নি। লুজ শিটগুলো আলাদা পাওয়া গেছে। এমনকি তাতে পিন মারা বা রশি দিয়ে আটকার কোন চিহ্নও নেই। চেয়ারম্যান আরও বলেন, উচ্চতর গণিতে পরীক্ষার্থীরা যে অঙ্ক করেছেন তার মধ্যে একটি অঙ্ক নুসরাত নামের এক ছাত্রীকে পুনরায় করে দিতে বলা হয়। যতটুকু পারে ততটুকু করতে বলা হয় তাকে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী তাও করে দেখাতে পারেনি। এ থেকে বোঝা যায় ওই অঙ্ক সে করতে পারেনি। সুতরাং এর পেছনে অন্য কারোর হাত থাকতেই পারে। শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া বলেন, এটি স্রেফ গুজব। ওই মেয়েকে আমি মা বলে ডেকেছি। ওকে নিজের মেয়ে বলে সম্বোধন করেছি সত্য ঘটনা বের করার জন্য। ওর গায়ে হাত দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
×