ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁসের খামারেই জাকিরের হাসি

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১০ আগস্ট ২০১৯

 হাঁসের খামারেই জাকিরের হাসি

একটি হাঁস খামারই বেকার জাকির হোসেনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মাত্র ১৭ বছরের ব্যবধানে গোটা পরিবারে সচ্ছলতা এনেছে। এসেছে একের পর এক সাফল্য। একের পর এক প্রতিষ্ঠান বাড়িয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন আত্মপ্রত্যয়ী যুবক জাকির হোসেন। তিনি এলাকার প্রায় ৯০টি পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। সরেজমিন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী যুবক জাকির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আবদুর রশীদ মোল্লা ও আজিমুন্নেছা দম্পতির ৮ ছেলে মেয়ের মধ্যে সে সপ্তম। তার বাবা ছিলেন সামান্য বর্গাচাষী। অনেক কষ্টে চলত তাদের জীবন। অভাবের সংসারে তার বাবার সহযোগিতা করার জন্য ২০০২ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে দৈনিক ৫০ টাকা হাজিরায় পানের আড়তে মহুরীর কাজ শুরু করেন। সে কাজে সামান্য টাকায় তার মন বসছিল না। তার পরও বাবার সংসারের চাপ কমাতে বেশ কয়েক মাস সেখানে কাজ করে সামান্য কিছু পুুঁজি জোগাড় করেন। ছোটবেলা থেকেই পশু-পাখির প্রতি তার টান ছিল। এ টান থেকেই পার্শ্ববর্তী রুইতনপুর গ্রামের একটি হাঁস খামার দেখতে যান। সেখানে স্থানীয় বিলের পানিতে শত শত হাঁস চরে বেড়াতে দেখে হাঁস পালনের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। তখন সে ঐ খামারীর সঙ্গে হাঁস চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে সহযোগিতা না করে বরং অপমানিত করেন। এরপর থেকেই হাঁস পালনের জেদ চেপে বসে জাকিরের। সেখান থেকে ঘুরে এসেই তিনি দেখা করেন চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অজয় কুমার রায়ের সঙ্গে। তার পরামর্শে জাকির হোসেন খুলনার আঞ্চলিক হাঁস উৎপাদন খামারে যান, তার সঞ্চিত মাত্র ১ হাজার ৬শ টাকা নিয়ে। এ টাকায় খাকি ক্যাম্বেল ও জিনডিং জাতের ২শ’ হাঁসের বাচ্চা কিনে বাড়ি ফেরেন। এ দেখে প্রতিবেশীরা হাসাহাসি করলেও সেদিকে কান দেননি জাকির। বাড়ির উঠানে গড়ে তোলেন ছোট্ট খামার। পাশাপাশি চলতে থাকে তার লেখাপড়া। ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বিকমে। এরই মধ্যে পরম যত্নে পালন করা হাঁসগুঁলো ডিম দিতে শুরু করলে স্বপ্ন পূরণ হতে থাকে জাকির হোসেনের। পরিচিতি পান হাঁস জাকির নামে। বর্তমানে জাকির হোসেন নিজ গ্রাম কুলপালাতে তার অন্য ভাইদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন আধুনিক মানের মেসার্স জাকির এ্যান্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম এ্যান্ড হ্যাচারী। এখান থেকে সে প্রতিমাসে ৩ লাখ হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করেন। এছাড়া এলাকার প্রায় ৫০ বেকার যুবক তার কাছ থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। জাকির হোসেনের ফার্মে হাঁস রয়েছে খাকি ক্যাম্বেল জাতের ১৫ হাজার, বেইজিং জাতের ৫ হাজার, মৎস্য খামার করেছেন ২০ একর, ২৮টি মোটাতাজা গরু এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে শ’খানেক। এগুলো দেখাশোনা এবং পরিচর্যার জন্য জাকির হোসেনের খামারে কাজ করছেন তার সহোদরসহ বেতনভুক্ত ৩২ কর্মচারী। সফল খামারী হিসেবেও জাকির হোসেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। আত্মপ্রত্যয়ী জাকির হোসেনের কুলপালার মেসার্স জাকির এ্যান্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম এবং হ্যাচারী দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বেকার যুবকসহ ছোট ছোট খামারীরা আসেন। এছাড়া তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। -রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা থেকে
×