ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মীরসরাইয়ে মজুমদারের রসগোল্লার কদর বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১০ আগস্ট ২০১৯

 মীরসরাইয়ে মজুমদারের রসগোল্লার কদর বাড়ছে

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও রম্য রচনার প্রবাদপুরুষ সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত চমৎকার এক রম্যকাহিনী রসগোল্লার কথা আমরা প্রায় সকলেই জানি। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঝান্ডুদা বন্ধুর মেয়ের জন্য এক টিন ভ্যাকুম প্যাকেটজাত মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছেন ইতালি। ইতালির কাস্টমস ঘরে কাস্টমস অফিসারের সঙ্গে তা নিয়ে বাক্বিত-া হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাকে তিনি বোঝাতে ব্যর্থ হন যে, প্যাকেট খুললে মিষ্টি নষ্ট হয়ে যাবে। এরই মধ্যে কাস্টমস অফিসারের ভাঙাচোরা চেহারার বর্ণনা রসগোল্লা খাওয়ার আগে মিষ্টির আনন্দ দেয় যেন পাঠকদের। কাস্টমস ঘরে নানা হাস্যরসাত্মক কান্ডের পর ঝান্ডুদাকে প্যাকেট খুলতে হয়। আর রসগোল্লার স্বাদ যে কমন হতে পারে তা গল্পের পরতে পরতে ফুটে ওঠে। দেশ ছাড়িয়ে সুদূর ইতলিতে স্বদেশী রসগোল্লা কিভাবে সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল সেই ঘটনা লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চলে এরকম মুখরোচক রসগোল্লার খোঁজ পাওয়া যায়। মিষ্টিপ্রেমী বাঙালীর জীবনে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয় মিষ্টি। আর মিষ্টি জাতীয় পণ্যের মধ্যে রসে ভরপুর রসগোল্লা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি উপাদান। এই জনপ্রিয়তাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত রসগোল্লা প্রস্তুত করে আসছেন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মস্তাননগর এলাকার মজুমদার মিষ্টি ভান্ডারের কারিগর গৌতম মজুমদার। মজুমদার মিষ্টি ভান্ডার মানুষের মুখে মুখে অতি পরিচিত একটি নাম। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গরুর খাঁটি দুধের ছানা থেকে তৈরি উন্নত, টাটকা ও জিভে জল আনা রসগোল্লা বানিয়ে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বিক্রি করে যাচ্ছেন ‘মজুমদার মিষ্টি ভান্ডার’ এর কর্ণধার গৌতম মজুমদার। এই রসগোল্লা এতই সুস্বাদু যে নিজ উপজেলা ছাড়িয়ে অন্য উপজেলা ও জেলা শহরগুঁলোতেও জায়গা দখল করে নিয়েছে। মীরসরাই ছাড়াও সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম শহর, সোনাগাজী, ফেনী থেকেও অনেক ক্রেতারা ছুটে আসেন এই মিষ্টির ভান্ডারে। এ ব্যাপারে ক্রেতা রাশেদুল হাসান, সজীব দাশ, মিলন নাথ বলেন, টাটকা দুধ, পরিছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে এই রসগোল্লা তৈরি করা হয় বিধায় ক্রেতাদের কাছে এটি বাড়তি আকর্ষণ ও মর্যাদা লাভ করেছে। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ও সময় নিয়ে তৈরি প্রতিটি রসগোল্লা যেন এক একটি অমৃত-গোল্লা। এই এলাকার মিষ্টি পাগল মানুষেরা তাদের সামাজিক, পারিবারিক অথবা ধর্মীয় যেকোন ছোট বড় প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে মজুমদারের রসগোল্লা ১ম তালিকায় রাখা এক আস্থার নাম। এ ব্যাপারে মজুমদার মিষ্টি ভান্ডারের কর্ণধার গৌতম মজুমদার বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই রসগোল্লা মান সম্মত ভাবে তৈরি করে সুনামের সঙ্গে বিক্রি করে আসছি। প্রতিদিন প্রায় ৪০ কেজি রসগোল্লা বিক্রি হয়। আমার তৈরি রসগোল্লা কিনতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা ছুটে আসেন। ক্রেতাদের এত উচ্ছ্বাস ও রসগোল্লার প্রশংসা পেয়ে আমি খুব খুশি। এই রসগোল্লা বিক্রি করে আমার একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোসহ জায়গা কিনে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছি। এছাড়া তিনি রসগোল্লার পাশাপাশি ছানার সন্দেশ, লাল জাম, কালো জাম, লাড্ডু, সাদা মিষ্টি, নিমকি, জিলাপীসহ লুচি-হালুয়াও তৈরি করে বিক্রি করে থাকেন। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×