ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ লাখ সিম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ৯ আগস্ট ২০১৯

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ লাখ সিম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মোবাইলফোন হাতে থাকায় আশ্রয় শিবির ও শিবিরের বাইরে অপরাধ তথা অস্ত্র-মাদক বিকিকিনি, ওপার থেকে ইয়াবার চালান ক্যাম্পকেন্দ্রিক নিরাপদে পৌঁছানো ও রাতেরবেলায় অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ ইত্যাদি চালিয়ে গেলেও ধরা পড়ছে না রোহিঙ্গারা। সচেতন মহল বলেন, মোবাইলফোন ব্যবহার করতে পেরে রোহিঙ্গাদের স্পর্ধা বেড়ে গেছে। তারা এখানে নিজেদের উদ্বাস্তু মনে করছে না। বাংলাদেশের বাসিন্দার চাইতেও বেশি সুবিধা ভোগ করতে চাইছে। তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আইন অনুসারে মোবাইলফোন ব্যবহার অবৈধ হলেও তারা তা লুকিয়ে ব্যবহার করে না। প্রশাসনের লোকজনের সামনেই পর্নোগ্রাফি ও সাইবার অপরাধের মতো অপকর্ম করছে রোহিঙ্গারা। তবে প্রশাসন এক্ষেত্রে অসহায়। যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মুঠোফোন ও সিম জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়নি, তাই তারা প্রায় সাত লাখ সিম জব্দ করতে পারছে না। জানা গেছে, ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ব্যবহার করছে মোবাইলফোন। শরণার্থী আইন অনুসারে উদ্বাস্তুরা অবৈধভাবে মুঠোফোন ব্যবহার করতে না পারলেও কয়েকটি এনজিওর কারণে এ পর্যন্ত ক্যাম্পে মোবাইলফোন উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়নি। নানা অপরাধ দমন করতে সরকার রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও এ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। নেটওয়ার্ক বন্ধকরণ সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী কয়েকটি এনজিও’র কারণে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ব্যবহার করছে মোবাইলফোন। রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা মোবাইলের নেটওয়ার্ক বন্ধ না হওয়ায় শিবিরে প্রতিনিয়ত নানা অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা যায়, আশ্রয় শিবিরে ইতোপূর্বে মুঠোফোনে বেআইনী কর্মকা- ঘটছে মর্মে নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ওই চিঠিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা না পায়, সেজন্য অপারেটরগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি মোবাইলফোন অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছিল। তবে এ পর্যন্ত তারা ওই চিঠির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এছাড়াও বিভিন্ন অপারেটরের ফ্রিকোয়েন্সি সীমান্তের ওপারে বিস্তৃত হওয়ায় এদেশের সিম মুঠোফোনে ও ইন্টারনেটে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের নাগরিকরা। এমনকি দেশটির সরকারী বাহিনীর সদস্য অনেকে বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অপারেটর কোম্পানির ফ্রিকোয়েন্সি মিয়ানমারের অন্তত ৫কি.মিটার ভেতরেও পাওয়া যাচ্ছে। এতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো স্থায়ী বাসিন্দাদের বসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের নেটওয়ার্ক বন্ধ করলে স্থানীয়রাও নেটওয়ার্ক সুবিধা বঞ্চিত হবে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা কেন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে? মোবাইল-কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি সুবিধা পেয়ে রোহিঙ্গারা দিনের খবর দিনে পৌঁছে দিচ্ছে বহির্বিশ্বে। নেটওয়ার্ক সুবিধা পাওয়ায় সরকারের গোপনীয় তথ্যও পাচার করছে রোহিঙ্গারা। এটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের হাতে মোবাইল থাকায় স্থানীয় অধিবাসীরাও নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক চালু থাকায় রোহিঙ্গারা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের আরসা-আরএসও (জঙ্গী) সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ডাকাত সর্দার রোহিঙ্গা জঙ্গী আবদুল হাকিম, মৌলবি শফিক, আবু নফর, আবদুর রহিম, মৌলবি আয়াছ, হাফেজ হাসিমসহ প্রথমসারির জঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা যোগাযোগ করছে মুঠোফোনে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করলে চিহ্নিত এনজিওগুলোর অর্থনৈতিকভাবে স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এজন্য গোপনে তারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে চলেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আগে বাংলাদেশের জাতীয় সনদ না থাকলে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি থেকে সিম ক্রয় করা মুশকিল ছিল। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম বিক্রি করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে হাটে-বাজারে, পথেঘাটে বিভিন্ন কোম্পানির সিম বিক্রেতারা মোবাইল সিম বিক্রি করছে। এতে অহরহ সিম কিনে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। ইতোপূর্বে দেয়া বিটিআরসি’র চিঠিতে জানানো হয়, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সিম বিক্রি ও অপব্যবহারের তথ্য পেয়েছে। চিঠিতে অপারেটরগুলোকে মোবাইল নেটওয়ার্ক যেন মিয়ানমার পর্যন্ত না পাওয়া যায় এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু অপারেটরগুলো সরকারের ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে চলেছে।
×