ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর হামলা

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৯ আগস্ট ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর হামলা

বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি গুলিবর্ষণে আবারও রক্তাক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্র। ৩ আগস্ট শনিবার রাতে দুটি শহরে ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন ২৯ জন। টেক্সাসের এল পাসোয় ওয়ালমার্টের ব্যস্ত বিপণি বিতানে বন্দুকধারী প্যাট্রিক ক্রুসিয়াসের গুলিতে নিহত হন ২০ জন। আর ওহাইওর ডেটনে একটি পানশালার সামনে বন্দুকধারী আততায়ী কনার বেটসের গুলিবর্ষণে মারা যান ৯ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে তার বোনও। সে দেশের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের মতে, ক্রুসিয়াসের হামলাটি বস্তুত ঘৃণাপ্রসূত ও জাতি বিদ্বেষমূলক অপরাধ, যা স্থানীয় সন্ত্রাসবাদ হিসেবে সুপরিচিত। এই হামলাকারী নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে শ্বেতাঙ্গ হামলাকারীর দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে উল্লেখ করেছে ফেসবুকের ইশতেহারে। তাৎক্ষণিকভাবে ডেটনের হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা না গেলেও এর পেছনেও কাজ করে থাকতে পারে জাতিগত বিদ্বেষ। শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ নতুন কিছু নয়। বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের কারণে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এক ধরনের অহংবোধ ও গর্ব তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। উপনিবেশকাল শেষ হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ইত্যাদির ক্রমবিকাশ ও ক্রমোন্নতির ফলে সেটা অনেকটাই কমে আসে। তবে এক শ্রেণীর শ্বেতাঙ্গের মনে ও বাসনায় তা বরাবরই সুপ্ত ছিল। গত কয়েক বছরে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জুড়ে জনতুষ্টিবাদ বা লোকরঞ্জনবাদী রাজনীতি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় উগ্র এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জঙ্গী শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অবকাশ পায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করে নির্বাচিত হলে সে দেশে নানা উগ্রগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে। এর মধ্যে অন্যতম এডরোপা, প্যাট্রিয়ট ফ্রন্ট, এ্যাটমওয়াফেন ডিভিশন, ডেইলি স্টর্মার, ভ্যানগার্ড আমেরিকা, আমেরিকান রেনেসাঁসহ আরও কয়েকটি ছোট-বড় দল ও সংগঠন। উগ্র ডানপন্থী এই দলগুলো শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ ও নব্য নাৎসিবাদের সমর্থক। তারা বর্ণবাদী, এ্যান্টি সেমেটিক তথা ইহুদী বিদ্বেষী, সর্বোপরি মুসলিম ও অভিভাসনবিরোধী। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এ্যান্টি ডিফেমেশন লিগ (এডিএল) নামের একটি সংগঠনের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের উস্কানিতে ১ হাজার ১৮৭টি হিংসা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪২১টি। অর্থাৎ এক বছরে বেড়েছে ১৮২ ভাগ। বিভিন্ন শহরে সমাবেশের আয়োজন করে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা, যার মাধ্যমে মুসলিম ও ইহুদী বিদ্বেষ ছড়ায়। তারা শুধু মসজিদ নয়, ইহুদীদের উপাসনালয় সিনাগগেও হামলা চালিয়ে থাকে। উগ্র জাতীয়তাবাদ, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞদের মতে, এরই বহির্প্রকাশ ঘটেছে নরওয়ে, সুইডেন, কানাডার কুইবেকে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও অন্যত্র। অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ ঘিরে ঘটে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। যেখানে প্রায় অর্ধশত মুসলিমের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। উল্লেখ্য, এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ব্রেন্টন টারান্টকে হাতকড়া পরা অবস্থায় যখন রিমান্ডের জন্য আদালতে হাজির করা হয়, তখন তার মুখে ছিল হাসি এবং হাতের আঙ্গুলের ইশারায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের প্রতীক। পৃথিবীতে কোন জাতি বা ধর্ম শ্রেষ্ঠ এই বিতর্ক অর্বাচীন ও অর্থহীন। সব ধর্ম ও জাতিতেই ভাল-মন্দ আছে। শিক্ষা-সভ্যতা ও সংস্কৃতি একটি দেশ জাতি ও ধর্মকে বুদ্ধিদীপ্ত ও শাণিত করে ক্রমশ। সেই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ ও নব্য নাৎসিবাদের ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বহুত্ববাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। অতএব সময় থাকতে সাবধান। বৈশ্বিক নেতাদের এ বিষয়ে সকর্ত ও সচেতন হওয়ার সময় সম্মুখীন।
×