ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার তুলনায় বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৯ আগস্ট ২০১৯

ঢাকার তুলনায় বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার চেয়ে দেশের অন্যত্র জেলাগুলোতে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট আক্রান্ত নতুন ২৩২৬ রোগীর মধ্যে রাজধানীতে ১১৫৯ জন এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ১১৬৭ জন শনাক্ত হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবারও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ১ জন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় ১ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সরকারী হিসাবেই ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বেসরকারী সূত্রসমূহ। আর প্রথমে বাসা-বাড়ি এডিস প্রজননমুক্ত করতে হবে এবং ‘ভেক্টর কন্ট্রোল’ করা ছাড়া এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান কীটতত্ত্ববিদ ডাঃ ভুপেন্দর নাগপাল। মুষলধারে বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে এডিস মশার প্রজনন ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার যে ধারায় বৃষ্টিপাত হয়েছে, সেই ধারা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে এডিস মশার প্রজনন ব্যাহত হবে। কিন্তু এমন আবহাওয়ার পর আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত না থাকলে অথবা বৃষ্টিপাত মুষলধারে না হলে এডিস মশার প্রজনন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সর্বমোট ডেঙ্গু আল্ডান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৪,৬৬৬ জন এবং ছাড়পত্র পাওয়া মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৫,৮৭২ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু আল্ডান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮,৭৬৫ জন। ঢাকার ৪০টি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু আল্ডান্ত ভর্তি রোগী রয়েছে ৫,১৪০ জন। দেশের অন্যান্য বিভাগে মোট ডেঙ্গু আল্ডান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩,৬২৫ জন। রাজধানীসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২,৩২৬ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৯ জন। জেলা ও উপজেলায় স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা ॥ দেশের সব ক’টি বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীতে আক্রান্তদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক দু’ প্রকার এডিস মশার মধ্যে ‘এডিস এজিপ্টি’ শহরে এবং ‘ এডিস এ্যালবোপিকটাস’ গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। ফলে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যাচ্ছেন তাদের শরীর থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু টেনে নিয়ে গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতে পারে ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ মশা। এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর) এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এ এস এম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকায় আক্রান্তদের অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। ডেঙ্গু মশা দু’ধরনের হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে ছড়ানোর আরেকটি কারণ হলো, ডেঙ্গু বাহক ‘এডিস এজিপ্টি’ মশা যেমন নাগরিক মশা, শহরের মশা। এ ধরনের মশা শহুরে এলাকায় মানুষের বাড়ি-ঘরে থাকে। ডেঙ্গুর আরেকটি বাহক ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ থাকে গ্রামাঞ্চলে। এই এডিস এ্যালবোপিকটাস যদি কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড় দেয় তাহলে এই মশাটিও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই গ্রামে যারা যাচ্ছে, তারা গিয়ে সেখানে মশার কামড় খাচ্ছে তাতে করে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। ফলে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তার লাভের সুযোগ রয়ে যাচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা বলেন, ঈদ উদযাপন করতে লাখ লাখ শহুরে মানুষ গ্রামে যাবেন । ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগী অথবা রোগীর অজান্তেই প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু রোগী হয়ে যাওয়া লোকজন গ্রামে যাবেন। এমনিতেই ঢাকার বাইরে নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঈদের সময়ে যখন মানুষ ঢাকা ছাড়বে, তখন তারা ‘রিজার্ভার’ হিসেবে কাজ করবেন।’ যদি এডিস মশা সেসব এলাকায় থাকে, তখন সেসব মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়াবে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা। কচুয়া ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কচুয়া চাঁদপুর থেকে জানান, কচুয়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দিনে শিশুসহ ১৫জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে । বুধবার উপজেলার গোহট উত্তর ইউনিয়নের বুরগী গ্রামের হুমায়ন কবীর নামে একজন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। টাঙ্গাইল॥ নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরিফ হোসেন কাজল (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের এম.এম.এ ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়। মৃত আরিফ হোসেন কাজল উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের খৈলসিন্দুর গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মোট ভর্তি ৬৪ জন এবং মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। মাগুরা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৭ জন মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ২জন নতুন ভর্তি হয়েছেন এবং ২জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। তাদের জরুরী বিভাগের পাশে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। খাগড়াছড়ি ॥ পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি থেকে জানান, খাগড়াছড়িতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১০ ডেঙ্গু রোগী খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে ১০ দিনে সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫ জনে। শনাক্তদের মধ্যে ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। চট্টগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানায়, এডিস মশা নিধনে চট্টগ্রামে স্কুল আঙ্গিনায় ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটিয়ে দিনব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মসূচী উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, সকলে নাগরিক দায়িত্ব পালন করলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ধংস করে নগরীকে ডেঙ্গুমুক্ত করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ মশার বিরুদ্ধে সারাবছরই যুদ্ধ চলবে। এদিকে, একই দিন চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সচেতনতামূলক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ। রাজশাহী॥ স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী প্রায় সকল লোকজন ডেঙ্গুজ্বর হুমকির সম্মুখীন বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
×