ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের আমেজ সারাদেশে ॥ কোরবানির হাট জমে উঠেছে

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৯ আগস্ট ২০১৯

ঈদের আমেজ সারাদেশে ॥ কোরবানির হাট জমে উঠেছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ। দেশজুড়ে সাজ সাজ রব। ঘরে ঘরে উৎসবের প্রস্তুতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে আপনজনের সান্নিধ্য পেতে ঘরমুখো লাখো মানুষ। নৌ, সড়ক ও রেলপথে বাড়ছে মহাব্যস্ততা। তবে দ্বিতীয় দিনে কমলাপুরে বিলম্বে ট্রেন ছাড়াসহ নানামুখী দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। এদিকে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ঢাকার চব্বিশসহ সারাদেশে দুই হাজার ৩৬২ অস্থায়ী হাটে চলছে পশু কেনাবেচা। উৎসাহ আনন্দ নিয়ে হাটে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মেসি, হিরো, ডিপজল, বসসহ তারকাদের নাম দেয়া হয়েছে পশুদের। গলায় ঝোলানো হয়েছে নেমপ্লেট। ঈদ-উল-আজহার মূল আকর্ষণ কোরবানি হলেও পোশাকের বাজারেও ভিড় কম নয়। রাজধানীর নামী-দামীসহ সব ধরনের মার্কেট-শপিংমল বিপণি বিতানে চলছে কেনাকাটার ধুম। সখের পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শাড়ি, আতর, টুপির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। অনেকে প্রিয়জনকে খুশি করতে মনের মতো পোশাক ও শৌখিন পণ্য কেনার চেষ্টায় ঘুরছেন মার্কেটে মার্কেটে। মসলার বাজার থেকে শুরু করে দা-বঁটি ছুরির দোকানের ছোটখাটো কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন অনেকেই। পশুর খরসহ রকমারি খাদ্য বিক্রিও চলছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। সরকারী-বেসরকারী প্রায় সব পর্যায়েই উৎসব বোনাস হয়েছে। ঈদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে শৌখিন কিছু একটা কেনা চাই। তাই ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসি কিনতে ইলেকট্রনিক্স দোকানগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। নানা মডেলের ইলেট্রনিক্স পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে নামী-দামী শোরুমগুলোতে। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা ঈদ উপলক্ষে পোস্টার দিয়ে সাধারণ মানুষকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে দেখা যায় শুভেচ্ছার ঢল। গোটা দেশের চিত্র ঠিক এরকমই। এদিকে নি¤œচাপের কারণে সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে থেমে চলছে বৃষ্টি। এতে পশুর বাজারে কিছুটা বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে টেনশন বাড়ছে সড়ক মহাসড়ক নিয়ে। এমনিতেই বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়কের অবস্থা তেমন একটা ভাল নয়। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রাস্তার জোড়াতালির সংস্কার নষ্ট হতে পারে। ফলে সামনের দিনগুলোতে ঘরেফেরা মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, কাঠালবাড়িসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানজট শুরু হয়েছে গত কয়েকদিন ধরেই। প্রবল ¯্রােত ও ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় এবারের ঈদে ফেরিঘাটের দুর্ভোগ অনেকটা নিশ্চিতই বলা চলে। আসন্ন ঈদ-উল-আজহার এর আগে তিন দিন সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২১ জেলার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত ॥ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের কেন্দ্রীয় বন্যা তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলমান বন্যায় দেশের ২১ জেলায় ৬৩৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সড়ক আছে ১২০ কিলোমিটার। আঞ্চলিক মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২ কিলোমিটার। এর বাইরে ৪০৫ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে বেশি সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ ১৮৫ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৪ কিলোমিটার জাতীয় ও ১৫২ কিলোমিটার জেলা সড়ক। সড়ক বিভাগ ও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্তত ১০ জেলায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও সড়কের বেশি অংশ, কোথাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের সড়কই সবচেয়ে বেশি। কুড়িগ্রামে ১ হাজার ৩৬৭ কিলোমিটার, লালমনিরহাটে ৯০৮ কিলোমিটার, গাইবান্ধায় ৮৫৯, জামালপুরে ৬৪৭, সিরাজগঞ্জে ২২০, সুনামগঞ্জে ১১১, মৌলভীবাজারে ১০, বান্দরবানে ২৬, টাঙ্গাইলে ১৯৫ ও সিরাজগঞ্জে ২২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদের অন্তত তিনদিন আগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মহাসড়ক সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, ঈদের অন্তত সাতদিন আগেই বন্যা-বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক মেরামত সম্পন্নের। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মেরামত কাজ ঈদের তিনদিন আগে শেষ করার নির্দেশ দেন। এ হিসাবে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কগুলোর মেরামতকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে বাস্তব চিত্র উল্টো। বেশির ভাগ অংশেই এখনও চলছে সংস্কারকাজ। আর যেগুলোয় সংস্কার হয়েছে, সেগুলোয় দায়সারা কাজের অভিযোগ উঠছে। ভাঙাচোরা সড়কে দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই ঘরে ফিরছে মানুষ। ভিড় বাড়ছে মার্কেটগুলোতে ॥ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল নগরজুড়ে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি টানা বর্ষণ হয়। তবে কেউ থেমে ছিলেন না। যার যেটা কাজ তা করেছেন। ভুগতে হয়েছে পরিবহন সংকটে। আর বৃষ্টিতে কাক ভেজা কোন বিষয় ছিল না। উৎসবের আনন্দে সামান্য ভেজা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে রাজি সবাই। বসুন্ধরা সিটি, নিউ মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাস, গাউসিয়া, পীর ইয়ামেনি মার্কেট, যমুনা সিটিসহ সবখানেই কমবেশি ভিড় রয়েছে। জুয়েলারি দোকানগুলোও জমজমাট। ঈদ উপলক্ষে পছন্দের গহনা কিনছেন কেউ কেউ। বিলাসী ক্রেতারা ভিড় করছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডসহ এরকম নামী-দামী ব্র্যান্ডের শো রুমে। আর লিফস্টিক, কাজল, চুরি, সাবানসহ প্রশাধনী কেনা কাটার যেন জুড়ি নেই। ধুম কেনাকাটা চলছে এসব পণ্য। ভিড়ের কারণে দেখে নেয়ার সময় নেই। বাছাই করা মাত্রই কেনার বিয়টি ঠিক করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বস-মেসি-টাইটানিকদের কদর বাড়ছে ॥ ১ হাজার ৪৫০ কেজি ওজনের ব্রাহামা জাতের ‘বস’ ৩৭ লাখ আর একই জাতের ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের ‘মেসি’ বিক্রি হয়েছে ২৭ লাখ টাকায়। দেড় হাজার কেজি ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের ‘টাইটানিক’ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৭ লাখ টাকায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থিত সাদিক এগ্রো থেকে এসব দামে গরু বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ মোঃ মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সর্বনিম্ন ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৮ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে আমাদের খামারে। গত বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ১ হাজার ৩০০টির মতো গবাদিপশু বিক্রি করা হয়েছিল। এবার আড়াই হাজারের মতো গবাদিপশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘লাইভ ওজন করে বিক্রি করার পাশাপাশি ওসৗন্দর্য বিবেচনা করেও বিক্রি করা হয় গবাদিপশু। বিক্রি শেষে কাগজের রঙিন মালা পরিয়ে পশুদের বাড়ি নিয়ে ফিরতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। কেউ কেউ বেন্ডপার্টি নিয়ে পশু কিনতে আসেন বিভিন্ন মার্কেটে। জমছে ঢাকার ২৪ হাট ॥ রাজধানীর ২৪টি পশুর হাটে পশু বেচাকেনা চলছে। বৃহস্পতিবার অফিস শেষে ছুটি শুরু। তাই বিকাল থেকেই হাটে জমে ভিড়। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব হাট চলবে। আসন্ন ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে সারাদেশে এ বছর ২ হাজার ৩৬২টি কোরবানি পশুর হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে বসছে ২৪টি। যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার রাজধানীর চারপাশে হাট বরাদ্দ দিয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পশুরহাট বসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এই হাটগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি হাট থাকবে। হাটে গরু, ছাগল, খাসি, উট, দুম্বাসহ নানা জাতের পশু তোলা হয়েছে। ক্রেতারা সাধ্যমতো কেনার চেষ্টা করছেন। বিক্রেতারাও দাম হাঁকাচ্ছেন নিজেদের মতো করেই। সব মিলিয়ে বাজারজুড়ে এখন সরগরম অবস্থা। কমলাপুরে হাসিমুখেও বিষাদের ছায়া ॥ স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার...। একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের এই গানটি বাজছিল কমলাপুরে যাত্রীদের মোবাইলে মোবাইলে। যারা রেলস্টেশনজুড়ে বসে ছিলেন তারা সবাই বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। কারো ট্রেন এসেছে। কারো ট্রেন আসার প্রতীক্ষা। তবে কোন কোন এলাকার ট্রেন কিছুটা বিলম্ব হলেও খুব একটা বিরক্তি নেই যাত্রীদের মুখে। কখন বাড়ি যাবে, প্রিয়জনের সান্নিধ্য মিলবে সেই আকুতিই যেন কাজ করছিল বেশি। যাত্রীদের দাবি ছিল, যে কোন মূল্যেই হোক সিডিউল বিপর্যয় রোধ চাই। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রায় সব ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেনগুলো স্টেশনে পৌঁছাতে না পারার ফলেই এ বিপর্যয়। স্টেশন থেকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে ট্রেন দেরিতে ছেড়ে যাওয়ার কথা। এর আগে ৩০ জুলাই যারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন তারা বৃহস্পতিবার ঢাকা ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কমলাপুর ছেড়ে যায় সাড়ে আটটার দিকে। চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন ছাড়ে ১০টা ২৫ মিনিটে। এছাড়া সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হলেও ছেড়েছে ১১টায়। দিনাজপুর-পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে সোয়া ১১টায়। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে স্টেশন থেকে তিনটি স্পেশালসহ মোট ৫৫টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। আমরা সার্বিক চেষ্টা করছি ট্রেনগুলোর শিডিউল ঠিক রাখার। আসলে যে ট্রেনগুলো দেরি করে স্টেশনে এসে পৌঁছেছে সেগুলো দেরিতে ছাড়তে হয়েছে। বাকি ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়েই স্টেশন ছেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। পাটুরিয়া ঘাটে সঙ্কট ॥ ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় প্রাইভেটকারের চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে পাটুরিয়া প্রান্তে দুই শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে ছিল। এসব গাড়ির পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাট ছেড়ে টেপড়া-নালী সড়কের কে আলী ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহীউদ্দিন রাসেল বলেন, সকাল ৬টার পর থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে। দুপুরের পর থেকে যাত্রীবাহী বাসের চাপ বাড়বে। তবে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফেরি থাকায় যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘেœ পারাপার করা যাবে। বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোত রয়েছে। এই ¯্রােতের বিপরীতে চলতে গিয়ে ফেরিগুলোকে ঘাট এলাকা ছেড়ে প্রায় এক কিলোমিটার উজান হয়ে অপর প্রান্তে যেতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সময় প্রায় দ্বিগুণ লাগছে। ১৭ ঘণ্টা পর শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি ঘাট সচল ॥ প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া হয়ে কাঠালবাড়ির পথে পদ্মা পারাপারে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ঘাট এলাকায় এখনও কয়েকশ গাড়ি আটকে থাকায় বহু যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চারটি ফেরির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোটও চলাচল শুরু হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আব্দুল আলিম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পদ্মায় ঢেউ একটু কমেছে। তাই সকাল থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়। তবে ১৫টি ফেরির মধ্যে রো রো ও কে-টাইপসহ মাত্র ৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ¯্রােতের তীব্রতা কমলে অন্য ফেরিগুলোও চলাচল শুরু করবে। মঙ্গলবার রাত থেকেই পদ্মায় প্রচ- ঢেউ ও তীব্র ¯্রােতের কারণে ফেরি পারাপার ব্যাহত হয়। নি¤œচাপে বাড়ছে টেনশন ॥ ভারতের উপকূলে সৃষ্ট নিম্নচাপটি মৌসুমি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। নিম্নচাপটি স্থলভাগে উঠে আসায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হয়ে দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হবে। লঘুচাপ থাকাকালীন সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, এটি মৌসুমি স্থল নিম্নচাপ। এই নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। নিম্নচাপটি স্থলভাগে উঠে আসায় দুর্বল হয়ে গেছে। তবে এটি লঘুচাপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হবে। একদিকে বর্ষা ঋতুতে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকে, অন্যদিকে এই নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা বেশি। এ কারণে সাগরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। প্রকৃতি বিরূপ হওয়ায় টেনশন বেড়েছে সড়ক ও নৌপথের লোকদের মধ্যে। ঝড় বৃষ্টি থাকলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌ রুটের যাত্রীদের বাড়ি ফিরতে সমস্যা হবে। বিআরডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া খারাপ থাকলে যাত্রী নিরাপত্তার কারণে নৌযান ছাড়া হবে না। সড়ক সংশ্লিষ্টদের চিন্তার যেন আর শেষ নেই। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বৃষ্টি মানেই দুশ্চিন্তার কারণ। বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে। এতে রাস্তার পরিধি কমে যায়। যানজট বাড়ে। তেমনি বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সড়ক নষ্ট হয়। সৃষ্টি হয় গর্তের। ফলে যানজট ও দুর্ভোগ বাড়ে সমানতালে। তিনি বলেন, ছুটি শুরু হওয়ায় সড়কপথে যাত্রী চাপ বেড়েছে। তিনি জানান, এবারের ঈদেও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা আছে। এছাড়া টাঙ্গাইলও সিলেট অংশের কিছু সড়ক খারাপ থাকায় দুর্ভোগ হতে পারে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সিমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বৃষ্টির কারণে টেনশন বাড়ছে। বৃষ্টি না হলে তেমন একটা দুর্ভোগের আশঙ্কা নেই। আমরা চেষ্টা করি সব সময় নিরাপদে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর। তিন দিন সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক-লরি-কাভার্ডভ্যান বন্ধ থাকবে ॥ আসন্ন ঈদ-উল-আজহার আগে তিন দিন সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ঈদের আগে সাতদিন এবং পরে পাঁচদিন সারাদেশে সিএনজি স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট কার্যকর থাকবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সড়ক-মহাসড়ক অপেক্ষাকৃত ভাল। তাই এবার ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াত অধিকতর স্বস্তিদায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে বিআরটিএর ভিজিল্যান্স টিম কার্যকর থাকবে। ঈদের আগের দিন যাত্রীদের অধিক চাপ নিয়ন্ত্রণে গার্মেন্টসসমূহ ধাপে ধাপে ছুটি দেয়ার জন্য বিজিএমইএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া কোথাও যানজট কিংবা পরিবহনের সঙ্কট দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিআরটিসির অতিরিক্ত বাস প্রস্তুত রাখা হবে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব জানান। তিনি আরও জানান, ঈদের সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ রাখতে টোলপ্লাজাসমূহের সকল বুথ চালু রাখা হবে। কঠোরভাবে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা এবং সকল শ্রেণির অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
×