ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট কার্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৮ আগস্ট ২০১৯

স্মার্ট কার্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি

আশঙ্কা যা করা হয়েছিল আগেই, তাই সত্য প্রমাণিত হলো অবশেষে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ, সরবরাহ ও বিতরণে দুর্নীতি-অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে সাড়ে ৯ বছরের জন্য এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাড়ে ৬ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে। অবশ্য এই অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়ী নয় কোন অবস্থাতেই। বিশ্বব্যাংক প্রশ্ন তুলেছে ২০১৫ সালের ইসির কর্মকা-ের স্বচ্ছতা নিয়ে। কেননা, এই সময়েই স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ ও সরবরাহের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। সেজন্য উপরোক্ত সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কে কিভাবে এর সঙ্গে জড়িত ছিল তারও যথাযথ তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ২০১১ সালের ১৪ নবেম্বর ভোটারদের স্মার্ট কার্ড দেয়ার জন্য আইডিয়া (আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যানসিং এ্যাকসেস টু সার্ভিসেস) শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয় বিশ্বব্যাংক থেকে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, টাইগার আইটি এবং এর প্রধান নির্বাহী বিশ্বব্যাংকের অনুদান ও ঋণনির্ভর কেনাকাটার নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্রে অশুভ আঁতাত করে আশ্রয় নেয় দুর্নীতি-অনিয়মের। স্মার্ট কার্ড তৈরির জন্য একাধিক যোগ্য প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করলেও টাইগার আইটির সঙ্গে যোগসাজশে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ না দিয়ে এই কাজের দায়িত্ব দেয় আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের ওবারথুরকে, যেটি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত। বাস্তবে স্মার্ট কার্ড মুদ্রণের কাজটি করেছে টাইগার আইটি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের জাতীয় তথ্য ভা-ারটিও তত্ত্বাবধান করে থাকে তারা। ওবারথুুরের সঙ্গে ইসির চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি। ইসির শর্ত অনুযায়ী তারা ৯ কোটি ভোটারের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরি ও ভোটারের তথ্য সংরক্ষণ করবে এবং তা উপজেলা ও থানা পর্যায়ে বিতরণ করবে। ইসির সঙ্গে ওবারথুরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালের জুনে। দুঃখজনক হলো, একাধিকবার সময় বাড়ানোর পরও তারা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে ২০১৮ সালে ওবারথুরের সঙ্গে চুক্তি বাতিলে বাধ্য হয় ইসি। মালিকানা বদল হওয়ায় ওবারথুুর এমনকি সময়মতো খালি কার্ডও সরবরাহ করতে পারেনি। এই নিয়ে টাইগার আইটির সঙ্গে তাদের বিরোধও দেখা দেয়, যা শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে ঢাকার আদালতে। অভিযোগটি যেহেতু বিশ্বব্যাংকের সেহেতু স্থানীয়ভাবে এর যথাযথ তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় বৈকি। মহা হিসাব নিরীক্ষা অফিস অথবা দুর্নীতি দমন কমিশন চাইলে তদন্ত করে দেখতে পারে বিষয়টি। কারিগরি ত্রুটিসহ নানা কারণে খোদ রাজধানীতেই এখন পর্যন্ত অনেক নাগরিক স্মার্ট কার্ড পাননি অথবা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, রাজধানীতে স্মার্ট কার্ড বিতরণের হার ৬০ শতাংশের কিছু বেশি। সে অবস্থায় সারাদেশের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এনআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত প্রিন্টার পর্যন্ত তাদের হাতে নেই। এমনকি ফ্রান্সের ওবারথুর নামের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্মার্ট কার্ড তৈরির ব্ল্যাঙ্ক কার্ড সরবরাহের চুক্তি থাকলেও তা তারা দিতে পারেনি। ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার ব্ল্যাঙ্ক কার্ড সরবরাহ করেছে। অথচ দেশে ভোটারের সংখ্যা ৯ কোটির বেশি। তদুপরি ১৮ বছর বয়সী নতুন নতুন ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তাদের জন্য কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রই ভরসা! সে অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের স্মার্ট কার্ড বিতরণে আরও কার্যকর ও গঠনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ইতোপূর্বে সংঘটিত বিশ্বব্যাংক আনীত দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত হওয়াও বাঞ্ছনীয়।
×