ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে নতুন ওষুধ ছিটাবে ডিএনসিসি

প্রকাশিত: ১১:২১, ৮ আগস্ট ২০১৯

আজ থেকে নতুন ওষুধ ছিটাবে ডিএনসিসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে এডিস মশার প্রকোপ কমাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা অধিক কার্যকরী নতুন ওষুধ বৃহস্পতিবার থেকেই ছিটানো শুরু করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। একইসঙ্গে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে এখন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি টিম পাঠাবে ডিএনসিসি। টিম প্রথমে গিয়ে যে বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে সেই বাড়ির সামনে এই বাড়িতে এডিস মশার উপাদান পাওয়া গিয়েছে লেখা সম্বলিত স্টিকার টানিয়ে দেয়া হবে। এতেও সতর্ক না হলে উক্ত বাড়িতে পুনরায় কোন লার্ভা পাওয়া গেলে জেল-জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। বুধবার গুলশানের নগর ভবনে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে ডিএনসিসির নেয়া উদ্যোগসমূহ সম্পর্কে জানাতে অয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোঃ মোশাররফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রাথমিক ফিল্ড টেস্টে নতুন আনা মশার ওষুধের নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় চূড়ান্তভাবে পরীক্ষার জন্য ল্যাব টেস্টে পাঠিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ এ ওষুধ ছিটানোর কাজে ব্যবহার করা শুরু হবে তা সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারেনি। অনুষ্ঠানে আতিকুল ইসলাম দীর্ঘ বছরের মশার ওষুধ আমদানির গঠিত সিন্ডিকেট ভেঙ্গে বিশেষ উদ্যোগে মশার ওষুধ আনতে দেরি হওয়ায় ও এ সময়ের মধ্যে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, যার স্বজন মারা গেছে সেই বুঝে এর কষ্ট কী? এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমরা মনে করি এটি মোটেও কাম্য নয়। যে পরিবারে ডেঙ্গু হয়েছে সেই বুঝবে এর জ্বালা। তাই আমি বিনয়ের সঙ্গে বলব, আসুন আমরা শুধু ওষুধ ওষুধ না এর সঙ্গে সচেতনতাও বৃদ্ধি করি। মেয়র বলেন, নতুন ওষুধ প্র্রথমে ডিএনসিসি এলাকার অল্প কিছু ওয়ার্ড এবং পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে চীন থেকে আনা নতুন কীটনাশক প্রয়োগ করা হবে। আমরা এ ওষুধ কার্যকরভাবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করেছি। এখন থেকে অধিক কার্যকরী এ ওষুধ ছিটানো হবে। তিনি বলেন, মশা নিধন কার্যক্রম ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে উপ-সচিব মর্যাদার অফিসার দেয়া হয়েছে। এ উপ-সচিবকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের টিম কাজ করবে। যার প্রধান উপদেষ্টা ওয়ার্ড কমিশনারকে করা হয়েছে। এই টিম প্রতিটি বাড়িতে যাবে যে বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে সেই বাড়িতে লাগানো হবে নোটিস ‘সাবধান এই বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে’। এরপরও কেউ লার্ভা ধ্বংস না করলে পরবর্তীতে আবার অভিযান পরিচালনার সময় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে। মেয়র বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত না ফেরার দেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে দেশকে মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য মেয়র প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের অনেক মশক কর্মী ফিল্ডে যান না, আবার ফিল্ড অফিসারও ঠিকমতো থাকেন না এমন অভিযোগ প্রায়শই পাই। তাই আমরা মনিটরিং করার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়েছি। এমনকি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছি ওই এলাকায় আমাদের এই মশক নিধনকর্মী এবং সুপারভাইজার যাবেন, তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়েছি। এছাড়া এখন জিপিআরএস-এর মাধ্যমে ট্রাকিং করা হচ্ছে। এছাড়া মশার লার্ভা চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করতে ও জনসচেতনতার সৃষ্টি করতে ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই মাঠে নামবে ডিএনসিসি। তিনি বলেন, শুধু ওষুধ আনলেই চলবে না। আমাদের পর্যাপ্ত ফগিং মেশিন নেই। তাই আমরা দ্রুত ফগিং মেশিন আনার ব্যবস্থা করেছি। আগামী চারদিনের মধ্যে ২০০ ফগিং মেশিন চলে আসবে। মেয়র বলেন, নতুন ওষুধ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। নতুন ওষুধের ফিল্ড টেস্ট ও ল্যাব টেস্ট শেষ হয়েছে। এগুলো সরকারের নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা হয়েছে। আমার উপস্থিতিতে হতে হবে তা নয়। এর দায়িত্বে টেকনিক্যাল কমিটি রয়েছে। লার্ভাবিরোধী অভিযান ॥ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভাবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এই মশা নির্মূলে ভিন্ন চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। বুধবার ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়।
×