ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবারের আসরে আরও ভাল খেলার প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৭ আগস্ট ২০১৯

এবারের আসরে আরও ভাল খেলার প্রত্যাশা

রুমেল খান ॥ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে থাইল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর চূড়ান্তপর্বের খেলা। যেখানে এশিয়ার সেরা আটটি দেশ অংশ নেবে। এদের মধ্যে আছে বাংলাদেশও। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নেবে তারা। বাংলাদেশ খেলবে ‘এ’ গ্রুপে। তাদের খেলাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ১৫ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ড, ১৮ সেপ্টেম্বর জাপান এবং ২১ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। গতবার এই আসরে খেলার অভিজ্ঞতার আলোকে এবার কেমন মনে হচ্ছে? এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এই আসরে খেলাটাই অনেক বড় ব্যাপার। কেননা এই আসরে দুই কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার সাতটি শক্তিশালী দল খেলে। এই দেশগুলো যুব পর্যায়ে শুধু এশিয়ারই নয়, বিশ্ব পর্যায়েরই সেরা দলগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের তুলনায় আমরা নবীন ও অনভিজ্ঞ। তারপরও ২০১৭ সালে প্রথমবার খেলতে গিয়ে আমরা তেমন খারাপ করিনি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৮০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়েছিলাম ২-১ গোলে। তখন আমাদের কৃষ্ণা অনাকাক্সিক্ষতভাবে লাল কার্ড পেয়ে গেলে ওরা আরও দুটো গোল করে ম্যাচ জিতে যায় ৩-২ গোলে। নইলে ওই ম্যাচে আমরাই স্মরণীয় এক জয় পেতে পারতাম।’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘আমাদের দলের ফুটবলাররা ২০১৭ সালের পর আরও বেশকিছু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও ম্যাচ খেলেছে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস, ম্যাচ টেম্পারমেন্ট এবং অভিজ্ঞতার ভা-ার সমৃদ্ধ হয়েছে। সবদিক দিয়েই তারা ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে।’ আগের আসরে দল কম থাকায় এই আসরের মূলপর্বে যেতে দলগুলোকে একটি বাছাইপর্ব খেলতে হয়েছিল। এবার দলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মূলপর্বে যেতে দলগুলোকে খেলতে হয়েছে দুটি বাছাইপর্ব। বাংলাদেশ দুটি পর্বেই কোয়ালিফাই করে চূড়ান্তপর্বে নাম লেখায় সাফল্যের সঙ্গে। এশিয়ার ৪৭টি দেশের মধ্যে সেরা বা সুপার আটটি দল চূড়ান্তপর্বে খেলবে। এদেরই একটি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। ছোটন বলেন, ‘আপনারা জানেনÑ শক্তিমত্তা এবং অবকাঠামোগতভাবে বাংলাদেশের চেয়ে বাকি ৭টি দেশই অনেক এগিয়ে। তবে আমাদের মেয়েদের ওপর আমার আস্থা আছে। কারণ বিগত বছরগুলোতে তারা অনেক বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছে এবং সাফল্যও পেয়েছে। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে তাদের ফিটনেস, টিম কম্বিনেশন, কনফিডেন্স আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই আমি মনে করি গতবারের চেয়ে এবার আমাদের মেয়েরা আরও অনেক বেশি ভাল খেলবে।’ ২০১৭ আসরের চূড়ান্তপর্বে খেলেছে এমন অনেকেই এবার বয়স বেশি হয়ে যাবার কারণে ২০১৯ আসরে খেলতে পারবে না। যেমন : রোকসানা, মাসুরা, নার্গিস, কৃষ্ণা, স্বপ্না, মৌসুমীসহ ১১-১২ জন খেলোয়াড় এবার নেই। তবে ২০১৭ আসরে খেলেছে এবং এখনও বয়স আছে এমন ১০-১১ খেলোয়াড় এবারও খেলবে। নতুন যোগ হয়েছে আরও জনা বিশেক। নতুন খেলোয়াড়দের নিয়েও ছোটন বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘নতুনরা ইতোমধ্যেই অনুর্ধ-১৫ সাফ, এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড, জকি কাপ এসব টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। মোট কথা এরা অনুর্ধ-১৬ দলে নতুন ঢুকলে একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।’ গত জুনে এই ৪৩ ফুটবলারকে নিয়ে ট্রায়াল শুরু করেছিল বাফুফে। কাটছাঁট করে এখন তাদের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয়েছে ৩০-এ। থাইল্যান্ডে খেলতে যাবার আগে আরেকটু কমিয়ে চূড়ান্ত স্কোয়াড গঠন করা হবে ২৩ জনের। ২৩ জনের দল হবার আগে এই ৩০ জনকে নিয়ে কিছু ‘ইন্টারনাল ম্যাচ’ অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকেই সেরা ২৩ জনকে বেছে নেয়া হবে বলে জানালেন ছোটন। এই দলটাকে ইউরোপে গিয়ে অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর যে ঘোষণা দিয়েছিল বাফুফে, সেটার কী হলো? ‘বিভিন্ন কারণে ইউরোপে গিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে না। তাই দেশেই প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের’ ছোটনের জবাব। সেই সঙ্গে আরও যোগ করেন ‘থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্ব খেলতে গিয়ে আমরা যেন থাইল্যান্ডের দুটি স্থানীয় দল বা জাতীয় দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারি বাফুফে সে চেষ্টাই করছে।’ দলে প্রতিটি পজিশনেই একাধিক ভালমানের বিকল্প খেলোয়াড় আছে ছোটনের। শুধু তাই নয়, দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এক সঙ্গে দুই-তিনটি পজিশনেও খেলতে পারদর্শী। আগের আসরে গোলরক্ষক পজিশনটা একটু নড়বড়ে থাকলেও এবার দলের প্রতিটি পজিশনই মজবুত বলে জানান ছোটন। গত আসরে দলের খেলোয়াড়রা ছোট ছোট অনেক ভুল করেছিল, সেগুলো নিয়ে এবার প্রচুর কাজ করেছেন, ফলে ছোটন মনে করেন এবার সেই ভুল অনেক কম হবে। আঁখি, মারিয়া, মানিকা, নীলা, আনুচিং, ঋতুপর্র্ণা, শামসুন্নাহার সিনিয়র ও জুনিয়র, সাজেদা ... এরা সবাই আগের চেয়েও অনেক বেশি পরিণত। দেশে এখন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী আকারে। এসএ গেমসের ক্যাম্পে ইতোমধ্যেই একাধিক খেলোয়াড় আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গুতে। ছোটনের শিষ্যাদের কী খবর? ‘গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সাজেদা এবং মারজিয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। তবে আল্লাহর রহমতে এখন ওরা সম্পূর্ণ সুস্থ। ফিজিক্যাল ফিটনেস টেস্টেও ওরা পাস করেছে। আমরা বাফুফের ক্যাম্পে এ নিয়ে খুবই সচেতন ও সতর্ক থাকি। প্রতিদিন মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়, সবকিছু পরিষ্কার করা হয়, নিয়মিত মশারি টানানো হয়। এখন পর্যন্ত আর কেউ অসুস্থ হয়নি। সামনেই কোরবানির ঈদ। এ উপলক্ষে বাফুফে অনুর্ধ-১৬ দলের মেয়েদের ছুটি থাকবে আগামী ১০-১৪ আগস্ট পর্যন্ত। নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে গিয়েও যেন মেয়েরা ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক-সচেতন থাকে এবং ফিটনেস ধরে রাখতে কোচের বেঁধে দেয়া রুটিন ফলো করে, সেটা নিয়ে খেলোয়াড়দের কাউন্সিলিং করানো হয়েছে বলে জানান ছোটন। ‘আশাকরি তারা ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসলে ফিটনেস নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।’ এই আসরে (এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব, সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল) নিজেদের মাঠে ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর এই আসরের মূলপর্বে (২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত) অংশ নেয়। মূলপর্বে অংশ নিয়েছিল আট দল। বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ আসরে মূলপর্বে যেতে একটি ধাপ পেরোতে হয়েছিল। কিন্তু এবার দল বেশি থাকায় দুটি ধাপ পেরোতে হবে বাংলাদেশকে। সবশেষে ছোটন বলেন, ‘থাইল্যান্ডে আমাদের মেয়েরা ভাল খেলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে।’
×