ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মিথ এখন মাটির মানুষ

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৭ আগস্ট ২০১৯

স্মিথ এখন মাটির মানুষ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এজবাস্টন টেস্টে বড় জয়ে ঐহিহ্যের এ্যাশেজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। সদ্য ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে টিম পেইনের দল। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২২ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে ২৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি এনে দেন স্টিভেন স্মিথ। বহুল আলোচিত বল টেম্পারিংয়ের অপরাধে পাওয়া এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দীর্ঘ ১৬ মাস পর সাদা পোশাকে ফিরেই খেলেন ১৪৪ রানের ইনিংস, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪২! এ্যাশেজের দীর্ঘ ইতিহাসে মাত্র পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে পেয়েছেন দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে দ্রুত ২৫তম সেঞ্চুরির পথে বিরাট কোহলিকে টপকে নাম লিখিয়েছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পেছনে। প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক গল্প লিখে অবধারিত ম্যাচসেরা সাবেক অধিনায়ক এখন অনেক পরিণত। উচ্ছ্বাসে ভেসে না গিয়ে এভাবেই দলকে সার্ভিস দেয়ার প্রত্যয় তার কণ্ঠে। দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ৯০০+ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ফের র‌্যাঙ্কিংয়ের তিনে ফিরেছেন স্মিথের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বর্তমান অধিনায়ক টিম পেইন, গ্রেট স্টিভ ওয়াহসহ আরও অনেকে। ‘প্রতিটি সকালই (এজবাস্টন টেস্টের প্রথম চারদিন) ছিল বড়দিনের সকালের মতো’ অনুভূতি স্মিথের। আর জোড়া সেঞ্চুরি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিকার অর্থেই বিশেষ কিছু। আমার জীবনের কোন পর্যায়ে কোন ধরনের ক্রিকেটেই আমি দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করতে পারিনি। এ্যাশেজ টেস্টে ফিরেই এটা করেছি। সেটা আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, তাই আমি কৃতজ্ঞ।’ তিনি হয়তো ভাগ্যের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন, তবে পুরো অস্ট্রেলিয়া তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে এজবাস্টন টেস্টে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর জন্য। বল টেম্পারিং কাণ্ডে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব হারিয়েছিলেন স্মিথ। আবার কি সুযোগ এলে সেই দায়িত্ব নেবেন? ‘এটা আমার মাথায় নেই এই মুহূর্তে। আমি মাঠে নামতে চাই, ব্যাটসম্যান হিসেবে রান করতে চাই। দলে আমি এখন অভিজ্ঞ একজন। টিমকে যে কোনভাবে সহযোগিতা করতে পারি। ও (অধিনায়ক পেইন) জানে আমি আছি, যে কোন পরামর্শের জন্য। যদি দেখি ওকে কিছু বলা দরকার আমি যাব ওর কাছে, দলের ভালর জন্য কাজ করব’ বলেন বদলে যাওয়া স্মিথ। একই সঙ্গে ২০১০-এ লর্ডসে স্মিথের সঙ্গে অভিষেক হয়েছিল। তবে বল টেম্পারিং কাণ্ড না হলে পেইন অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব পেতেন কি না সন্দেহ আছে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার যখন বিশ্বকাপ দিয়ে দলে ফেরেন তখনই প্রশ্নটা উঠেছিল, এত বড় তারকা ওরা কী পারবে অন্যের অধীনে খেলতে? ড্রেসিং রুমে মানিয়ে নিতে? কিন্তু বিশ্বকাপে এ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে তাদের এতটুকু বিভ্রান্ত মনে হয়নি, দু’জনই ছিলেন দারুণ প্রাণবন্ত। আচার-আচরণ, কথাবার্তা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবকিছুতে স্মিথ এখন বদলে যাওয়া অন্য এক মানুষ। প্রত্যাবর্তনে আলো ছাড়ানো স্মিথকে নিয়ে অধিনায়ক টিম পেইনের মন্তব্য, ‘স্মিথের সম্পর্কে বলার কিছু নেই। আমরা টেস্টে সেরা পারফর্মেন্স দেখলাম। দীর্ঘদিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে যেভাবে দুটি ইনিংস খেলল স্মিথ। এটিই সত্যি অসাধারণ। দলের বিপদের সময় জ্বলে ওঠে তার ব্যাট। আমরা এটির সাক্ষী হতে পেরে ভাগ্যবান। আমি অবাক বলব না, কারণ সে এরকমই। এক সময় শঙ্কা হচ্ছিল যে হয়তো আমরা ব্যাকফুটে চলে গেছি, তবে ক্রিজে আমাদের সেরা খেলোয়াড়ই ছিল।’ গ্রেট স্টিভ ওয়াহর মূল্যায়ন, ‘সে জানে কি করবে। সে এটাও জানে প্রতিপক্ষ কি করবে, কিভাবে তাকে আউট করার চেষ্টা করবে। ওকে দেখে মনে হয়, সব উত্তর ওর জানা। সে অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। আমার মনে হয় না এমন কাউকে আমি দেখেছি এবং রানের জন্য ওর যে ক্ষুধা এটা আর কারও নেই। ওর টেকনিক দুর্দান্ত। এক কথায় অনন্য। সে জানে কি করছে এবং কিভাবে রান করতে হয়। সে প্রতিটি বল বিশ্লেষণ করে। অনেকটা কম্পিউটারের মতো, প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দেয়।’ স্মিথের প্রশংসা ঝরেছে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটের কণ্ঠেও, ‘এমন হার কষ্ট দেয়, হতাশ করা। আমরা ভেবেছিলাম, আমরা ভাল ক্রিকেট খেলছি কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। স্মিথের দুটি অসাধারণ ইনিংস। ওকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে।’ আইসিসির প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে একধাপ এগিয়ে তিনে উঠে এসেছেন স্মিথ। এই টেস্ট শুরু করেছিলেন ৮৫৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে। টেস্টের পর সেটি বেড়ে হয়েছে ৯০৩। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে সিরিজে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন, সেই সিরিজে ডারবান টেস্টের পর ক্যারিয়ার সেরা ৯৪৭ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন। এখন স্মিথের ওপরে থাকা সেরা দুইয়ে কোহলির রেটিং পয়েন্ট ৯২২ ও কেন উইলিয়ামসনের ৯১৩।
×