ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফির রাজসিক বিদায় অক্টোবরের মধ্যেই!

প্রকাশিত: ১২:১২, ৭ আগস্ট ২০১৯

মাশরাফির রাজসিক বিদায় অক্টোবরের মধ্যেই!

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কবে ওয়ানডে থেকেও অবসর নেবেন? এ প্রশ্ন চলছেই। গুঞ্জনও ডালপালা মেলেই চলেছে। তবে যতদূর জানা গেছে, খুব বেশিদিন হাতে নেই। সামনে সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরেই মাশরাফির রাজসিক বিদায় ঘটবে। আর দুই মাসের মধ্যেই তাহলে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। বিশ্বকাপে যখন বল হাতে মাশরাফি উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। তখন থেকেই আসলে মাশরাফির অবসরের বিষয়টি বেশি করে উঠছে। ব্যাট হাতে তারতো তেমন কিছু করার নেই বললেই চলে। তিনি যে একজন পেসার। ৫ ম্যাচ ব্যাটিং করে ৮.৫০ গড়ে ৩৪ রান করেছেন। তবে বল হাতেই সবকিছু করার কথা মাশরাফির। ১৮ বছর ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটার। দলের অধিনায়কও তিনি। কিন্তু এখানেই ব্যর্থ হয়েছেন। আর তাতে করে একটা সময় গিয়ে একাদশ থেকেই মাশরাফিকে বাদ দেয়ার কথাও ওঠে। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে বোলিং করে ৫৬ ওভারে ৩৬১ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট শিকার করেন মাশরাফি। প্রতি ওভারে ৬ রানের বেশিও দেন। তার যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তাতে ভাটাও পড়ে। অবসরের কথাও তাই জোরেশোরেই শোনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেয়েছে মাশরাফিকে রাজসিক বিদায় জানাতে। সেটি আবার দেশের মাটিতেই। এ জন্য বিশ্বকাপে নয়, বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে একটি সিরিজ আয়োজন করে মাশরাফিকে বিদায় দেয়ার চেষ্টা করেছে বিসিবি। তাতে সফলও হতে যাচ্ছে বিসিবি। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। ৫ সেপ্টেম্বর টেস্টটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। টেস্ট ম্যাচটি শেষে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে আফগানিস্তান ও জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফাইনাল দিয়ে সিরিজটি শেষ হবে ২৩ সেপ্টেম্বর। এরপরই আফগানিস্তান ও জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ আয়োজন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিসিবি। এমনও হতে পারে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। সেই সিরিজ শেষেই ওয়ানডে থেকেও মাশরাফির রাজসিক বিদায় ঘটবে। জিম্বাবুইয়ে সিরিজটিতে খেলতে পারবে কিনা এ নিয়ে ছিল সংশয়। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকায় জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটকে নির্বাসিত করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি)। তাই জিম্বাবুইয়ে দলের খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। কিন্তু সেই সংশয় দূর হয়ে গেছে। নির্বাসিত হলেও বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে বাধা নেই জিম্বাবুইয়ের। এমনই বিসিবি সূত্রে জানা গেছে। জিম্বাবুইয়েও সব সমস্যা দ্রুতই সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাধান হয়েও যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইসিসির সঙ্গে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সমস্যা সমাধান না হলেও বাংলাদেশে এসে সিরিজ খেলতে পারবে জিম্বাবুইয়ে। আর তাই বিসিবিও সিরিজ আয়োজনের জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। মাশরাফির বিদায়কে যতটা রাজসিক করা যায় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেট দল যে আসবে সেই নিশ্চয়তা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনই দিয়েছেন। আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা, দেশবরেণ্য ক্রীড়া সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ক্লাব ভবনে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় থাকলেও জিম্বাবুইয়ে ঠিকই ঢাকা আসবে এবং আমরা যে আফগানিস্তান আর জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে তিন জাতি ক্রিকেট আসর আয়োজনের চিন্তা করছি তাতে অংশও নেবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়লেও জিম্বাবুইয়ের বাংলাদেশে আসা নিয়ে কোন সংশয় নেই। সেটা আইসিসির ওই নিষেধাজ্ঞায় ধর্তব্য হবে না। জিম্বাবুইয়ে ঠিকই বাংলাদেশে আসবে।’ জিম্বাবুইয়ে খেলতে আসা মানেই একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ হওয়া। সেটি এমনও হতে পারে টি২০ সিরিজ না হয়ে ওয়ানডে সিরিজও হতে পারে। তাহলে সেপ্টেম্বরেই মাশরাফির বিদায় ঘটবে। আর যদি ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ হওয়ার পর হয় ওয়ানডে সিরিজ তাহলে অক্টোবরে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হবে। টেস্ট খেলতে পারেন না মাশরাফি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই তা পারেন না। এই ফরমেটে মাশরাফির আর খেলা হচ্ছে না তা ধরেই নেয়া হয়েছে। তবে টি২০ ও ওয়ানডে চালিয়ে গেছেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে টি২০ থেকে হঠাৎ অবসর নেন মাশরাফি। এরপর শুধু ওয়ানডে খেলে যান। কিন্তু বিশ্বকাপে মাশরাফির যে ব্যর্থতা ছিল তা ওয়ানডে থেকেও ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’কে অবসরের দিকে ভালভাবেই ঠেলে দেয়। বিশ্বকাপে অবসরের বিষয়টি অনেক জোরেশোরে শোনা গেলেও দেশের মাটিতেই মাশরাফির বিদায় হবে, সেটি রাজসিক বিদায় হবে তা বিসিবি সভাপতি পাপনই জানিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ চলার ফাঁকে তিনি বলেছিলেন, ‘অবসর (মাশরাফির) হবে দেশের মাঠে। আমরা যত সুন্দরভাবে করা যায় (মাশরাফির বিদায়) সেটা করব। দেশের মাটিতে করাটাই উচিত হবে। তার সঙ্গে শেষ যেদিন কথা হয়েছে আমরা এটাই বলেছি। আমরা ভালভাবে দেশেই (বিদায়ী ম্যাচ) করতে চাই।’ সেই বিদায় সময় তাহলে ঘনিয়ে আসছে। দেশের সেরা ওয়ানডে অধিনায়কের বিদায় বেলা এসে পড়ছে। এ বছর ভবিষ্যত সফরসূচীতে কোন ওয়ানডে খেলা ছিল না। জিম্বাবুইয়ে খেলতে আসলে আফগানিস্তানকে নিয়ে হবে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ। তাতে ওয়ানডে খেলা মিলে যাচ্ছে। এই সময় যদি ওয়ানডে না হয় তাহলে আগামী বছর মে-জুন মাসে হবে ওয়ানডে খেলা। সেটিও আবার দেশের মাটিতে হবে না। আয়ারল্যান্ডে আইরিশদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। যদি মাশরাফির অবসর নিতে হয় তাহলে তখন আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে। কারণ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে যে দেশের মাটিতে কোন ওয়ানডে খেলাই নেই। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সেই ওয়ানডে সিরিজের মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে হলে তো মাশরাফিকে ১৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এ সিরিজটি বিসিবি ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আলোচনায়, সমঝোতায় ২০২০ সালের এপ্রিল-মে’তেও আয়োজন করা যায়। দুই দলেরই এই সময়টায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোন সূচী আপাতত নেই। কিন্তু তাতেও তো অপেক্ষা ৮ মাসের হয়ে যাবে। তখন না আবার ‘চোখের আড়াল হলে মনের আড়ালও হয়ে যায়’ টাইপ কিছু মাশরাফির ভাগ্যে জুটে যায়। তাই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই মাশরাফির সেই রাজসিক বিদায় হচ্ছে।
×