ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নজির গড়লেন গাজীপুরের মেয়র

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৭ আগস্ট ২০১৯

নজির গড়লেন গাজীপুরের মেয়র

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নিজ উদ্যোগে সিঙ্গাপুর থেকে আন্তর্জাতিকমানের কার্যকরী ওষুধ এনে নজির সৃষ্টি করলেন। শুধু তাই নয়, ওই ওষুধ তিনি বিনামূল্যে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনকেও সরবরাহ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত রবিবার তিনি স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তার এই আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন। এ বছর রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করায় বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে বিভিন্ন ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণ হয় ছিটানো ওষুধের কার্যকারিতা নেই। হাইকোর্টও জরুরী ভিত্তিতে ওষুধ আনা কেন হবে না তা জানতে চায় দুই সিটির কাছে। নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এডিস মশা নিধনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও পরীক্ষিত বিপুল পরিমাণ কার্যকরী ওষুধ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিন দিনের ব্যবধানে তিনি দুই দফায় ৫০ টন ওষুধ বিমানে করে আমদানি করেছেন। গত রবিবার ও সোমবার ২৫ টন করে ‘বেনটাসাইড’ নামের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ওই ওষুধ বিমানযোগে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো সিঙ্গাপুরেও এডিস মশার প্রকোপ বেশি। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনক্রমে সিঙ্গাপুর ‘বেনটাসাইড’ মশার ওষুধ নিজেরা উৎপাদন করে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এই ওষুধটি এডিস মশা নিধনে খুবই কার্যকর। ফলে বিশ্বের ২০ দেশ সিঙ্গাপুর থেকে ‘বেনটাসাইড’ আমদানি করছে। ঢাকার অতি সন্নিকটে হওয়ায় গাজীপুর শহরেও এডিস মশা ছড়িয়ে পড়ায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গাজীপুরের মেয়র দ্রুত ওই ওষুধ নিয়ে এসেছেন নিজ শহরে ব্যবহারের জন্য। সেখান থেকে উদ্বৃত্ত ওষুধ তিনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনকেও বিনামূল্যে দিতে চান। এ বিষয় তিনি স্থানীয় সরকার সচিবকে জানিয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ওই রোগ বহনকারী এডিস মশা নিধনের কার্যকরী ওষুধ আমদানি ও সরবরাহ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন, ‘রাজধানী ও গাজীপুরসহ দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ রোগের প্রকোপ বেশি। তাই মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এডিস মশা ও লার্ভা নিধনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং পরীক্ষিত প্রায় ৫০ টন কার্যকরী ওষুধ সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে আমি ঢাকাসহ অন্য সিটিগুলোতেও বিনামূল্যে তা সরবরাহ করে ডেঙ্গু মশা নিধনে সহযোগিতা করব। ইচ্ছে করলে যে কেউ এই ওষুধের মান যাচাই করতে চাইলে আমি তাতেও সহযোগিতা করব। তিনি জানান, এডিস মশা নিধনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট পরিমাণ কেরোসিন মিশিয়ে প্রতিদিন এক টন করে ওষুধ ব্যবহার করা হবে। নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রয়োজনে আরও ওষুধ আমদানি করা হবে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয়ে এই ওষুধ আমদানি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। মেয়র বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু মশক নিধনে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করেছি। আমি নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নগরবাসী সবার সহযোগিতা চাই।’ ডেঙ্গুর রোগ বহনকারী এডিস মশা নিধনের কার্যকরী ওষুধ সরবরাহ নিয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র যখন আদালতসহ বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েছেন, ঠিক তখনই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এডিস মশা নিধনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কার্যকরী ওষুধ নিয়ে আসায় নগরবাসীর মাঝে আশার আলো জেগে উঠেছে। গাজীপুরবাসীর মতে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির মেয়র দীর্ঘদিনেও ডেঙ্গুর রোগ বহনকারী এডিস মশা ও ওই মশার লার্ভা নিধনের জন্য কার্যকরী ওষুধ সরবরাহ করতে পারেননি। অথচ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর নগরীকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে এডিস মশা নিধনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে আন্তর্জাতিকমানের কার্যকরী ওষুধ সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করতে সক্ষম হয়েছেন।
×