ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সব চ্যানেলের সম্প্রচার

প্রকাশিত: ১১:০২, ৭ আগস্ট ২০১৯

তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সব চ্যানেলের সম্প্রচার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার করা হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর বেসরকারী টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (এ্যাটকো) নেতারা একথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, টেলিভিশনের সম্প্রচারে ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এতে এ্যাটকো নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ্যাটকোর সদস্য ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার আমাদের টেকিনিক্যাল প্রতিনিধিরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসবেন এবং টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো দূর করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশা করি, ২/৩ মাসের মধ্যে আমরা পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের সব চ্যানেল (টিভি চ্যানেল) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করতে পারব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পর্কে আমাদের কমিটমেন্ট আছে। আমরা এ্যাটকোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কমিট করেছি যে, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে যাচ্ছি এবং যাব। ইতোমধ্যে অনেকেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সবকটি চ্যানেলই টেস্ট ট্রান্সমিশনে আছি। টেস্ট ট্রান্সমিশন চলাকালীন ফাইবার কানেক্টিভিটি যেহেতু ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, উন্নয়ন কর্মকা-সহ নানা কারণে মাঝে মাঝে ফাইবার কাটা পড়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ কনসার্নগুলো তাদের ব্যক্ত করেছি। স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল বাবু বলেন, দু-তিনটা বিকল্প লাইন থাকলে যাতে কোন একটা এক্সিডেন্টালি কাটা পড়লেও কোন অসুবিধা না হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সর্বশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি স্যাটেলাইট। আমরা যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে এর চেয়ে বেশি ভাল ছবি এবং ব্রডকাস্ট কোয়ালিটি পাচ্ছি। শুধু কমিউনিকেশন ফাইবার কানেক্টিভিটি সমস্যাটা দূর হলে আমাদের বর্তমান স্যাটেলাইট সম্পূর্ণ ডিসকানেক্ট করে দেব, এতে ৩০ থেকে ৬০ দিনের বেশি সময় লাগবে না বলে মনে হয়। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করতে হবে। সেটির বিষয়ে তারা অলরেডি ক্যাবল অপারেটরদের চিঠি দিয়েছেন। ডিজিটাল হওয়ার পরে আমাদের চ্যানেলগুলো পে-চ্যানেল হিসেবে কিছু সুযোগ পাওয়ার সুবিধা আমাদের সৃষ্টি হবে। ফলে আমাদের কিছু সঙ্কট সমাধান হবে। মোজাম্মেল বাবু বলেন, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিরাজমান অনেক সমস্যা সমাধান হতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিল জন্মের ক্রমানুযায়ী টেলিভিশনের ডিস্ট্রিবিউশন সিরিয়ালের বিষয়টি। এটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলাম, এটা হয়নি। এখন সেটা কার্যকর হয়েছে। বিদেশী চ্যানেল সম্পর্কে তিনি বলেন, বিদেশী চ্যানেলের ক্লিন ফিড যাতে সম্প্রচার করে এ বিষয়ে সরকার কড়াকড়ি নির্দেশ জারি করেছে। তাদের চাপ দেয়া ও আলোচনা অব্যাহত আছে। সবক’টি বিদেশী চ্যানেল অচিরেই ক্লিন ফিড প্রচার করবে, যেখানে বাংলাদেশের কোন বিজ্ঞাপন ও বিদেশী কোন বিজ্ঞাপন ওভারফ্লো করবে না। বিদেশী চ্যানেলের ক্লিন ফিড (বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে শুধু অনুষ্ঠান) সম্প্রচারের বিষয়ে কোন সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে কি না -জানতে চাইলে মোজাম্মেল বাবু বলেন, ক্লিন ফিডের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশে পাচার হয় এবং বিদেশী বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে ওভারফ্লো করে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশে পাচার হয় এটা শতভাগ বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, আমরা চেক করব। বিদেশী বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে ওভারফ্লোর ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত ফাইন্ড টিউনিংয়ের ব্যাপার আছে। ওই চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে সরকার কথা বলছে। সরকার আশাবাদী, ক্লিন ফিডের বাইরে পর্যায়ক্রমে কোন চ্যানেল থাকবে না। তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, টেলিভিশনের সম্প্রচারে ইতোমধ্যে যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেজন্য তারা (এ্যাটকো নেতারা) সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন চ্যানেলে বিদেশী সিনেমা দেখানো হচ্ছে, এতে আমাদের কলাকুশলীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডাবিংকৃত সিরিয়াল দেখানো হচ্ছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে নানা ধরনের সুপারিশ এসেছে। তিনি বলেন, চ্যানেলে ডাবিং করা বিদেশী অনুষ্ঠান ও সিনেমা প্রচারের নিয়ম পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। বেসরকারী টিভি চ্যানেলে বিদেশী সিরিয়াল ও ডাবিংকৃত বিদেশী অনুষ্ঠান সরকারের অনুমতি ছাড়া চালানো যায় না। ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন লাগে। এছাড়া প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিদেশী সিনেমা প্রচারের ক্ষেত্রে সেন্সর সনদপত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটি অনেক ক্ষেত্রে পালন করা হচ্ছে না। কোন বিদেশী কলাকুশলীর বেসরকারী চ্যানেলে কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেটিও অনেক সময় পুরোপুরি মানা হচ্ছে না বলে আমাদের কাছে খবর আছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের গর্বের একটি স্যাটেলাইট, শুধু বিটিভি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারে গেছে। ইতোমধ্যে ছয় টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবাগ্রহণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বাকি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সহসা যাতে এ সেবাগ্রহণ করে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অ্যাটকোর পক্ষ থেকে কিছু কনসার্নের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আলোচনা করা হয়েছে। সভায় খুব সহসাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আলোচনা হয়েছে। কবে নাগাদ সব টিভি চ্যানেল চুক্তি সই করবেÑ জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, খুব সহসাই। ডেডলাইন আজকেই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। সেই সিদ্ধান্ত নেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ। সবাই সম্মত হয়েছে, খুব সহসা চুক্তি স্বাক্ষর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় তথ্য সচিব মোঃ আবদুল মালেক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এসএম হারুন-অর-রশিদ, বাংলা ভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, কাজী মিডিয়া লিমিটেডের (দীপ্ত টিভি) পরিচালক কাজী জাহিন এস হাসান উপস্থিত ছিলেন।
×