ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি

প্রকাশিত: ১১:০১, ৭ আগস্ট ২০১৯

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কোন ধরনের নির্যাতনের মানসিকতা সরকারের নেই এবং তাঁর সরকার এ ধরনের কাজ করে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যিকথা বলতে কি, এ ধরনের কোন মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটা করিও না।’ শেখ হাসিনা বিবিসিতে প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাতকারে একথা বলেন। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সিনিয়র সাংবাদিক মানসী বড়ুয়া এই সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, গণতন্ত্র এবং ঋণ খেলাপী হওয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কেও কথা বলেন। -খবর বাসসর। মানসী বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ইতিহাস অনেক দিনের। এটি কোন বিশেষ সরকারের আমলে যে ঘটেছে তা নয়। কিন্তু বর্তমান সরকার এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে? জানতে চান তিনি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনাচক্রে কিছু (দু-একটি) ঘটনা ঘটতে পারে। বরং আপনি যদি গত ১০ বছরে আমাদের অবস্থানটা দেখেন- আমরা কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি আমার নিজের কথাটাই চিন্তা করেন- যখন আমি আমার বাবা-মা-ভাইদের সব হারালাম, খুনীদেরকে বিচার না করে ইনডেমনিটি দেয়া হলো, অর্থাৎ আপনি অপরাধকে প্রশ্রয় দিলেন।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁকে বিচার পেতে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যে দেশে অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়েই একটা সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় সেই দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।’ ‘তবে আমরা যেকোন অপরাধের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন ওইভাবে কখনই হেফাজতে মৃত্যু হয় না বা নির্যাতনও যে খুব একটা করা হয়, তাও নয়,’ যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধীদের থেকে তথ্য সংগ্রহের যে কতগুলো নিয়ম রয়েছে- সেজন্য আমরা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসি। তারা এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহুদেশে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতিতেই অপরাধীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে কোন কিছুই করা হয় না, এটা হলো বাস্তবতা।’ শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হবার সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলো। এই কালচারটাই চলে এলো, এটাই প্রচলিত হলো। তিনি বলেন, ‘সে সময় দেশে সামরিক শাসন বলবৎ ছিল (কখনও সরাসরি আবার কখনও নাম পরিবর্তন করে) যেখানে ক্ষমতাটা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই ছিল।’ ‘সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে দেশকে একটু সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা একটা কঠিন দায়িত্ব, এই কঠিন দায়িত্বটা আমরা পালন করে যাচ্ছি,’ বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এখন যারা সমালোচনা করছে তাদেরকে যদি আপনারা সুনির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমার মনে হয়, এ সম্পর্কে তারা খুব বেশি তথ্য দিতে পারবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা শ্রেণী আছে যারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারটা বেশি করে চালাচ্ছে। দেশে অসাংবিধানিক এবং অস্বাভাবিক সরকার বা মার্শাল ‘ল’ থাকলেই তাদের খুব লাভ হয়।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা সারাক্ষণ আমাদের নানা খুঁটিনাটি দোষক্রটি খুঁজে বের করতে লেগেই আছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথা হলো আমার দেশের মানুষ স্বস্তিতে আছে কি না, তারা ভাল আছে কি না।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি, জেনেভাতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং আমাদের আইনমন্ত্রীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরাও সেখানে ছিলেন এবং এর যথাযথ উত্তর তারা দিয়ে এসেছেন।’ ঘরে এডিস মশার লার্ভা পেলে জরিমানা ॥ প্রধানমন্ত্রী, ডেঙ্গু মোকাবেলায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঘর থেকেই কাজ শুরুর ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কারও ঘরে এই মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানার ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দেন। এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ায় মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থা একেবারেই নেয়া হয়নি, তা ঠিক নয়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাতকার প্রচারের আগের দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ বি এন নাগপাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অন্য মশার সঙ্গে এডিস মশার জীবনাচরণের ভিন্নতা তুলে ধরে বাইরে ওষুধ না ছিটিয়ে ঘর ও আশপাশে পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেন। বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনাও ভবিষ্যতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আরেকটা ঘোষণা আমরা দিয়েছি যে, কারও ঘরের কাছে বা ঘরে যদি এ ধরনের পানি জমা যেখানে ডেঙ্গু মশা তৈরি হচ্ছে, এরকম আমরা যদি দেখতে পাই, তাহলে তাদের ফাইন করা হবে।’ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সাধারণত মানুষের আশপাশে থেকে স্বল্প গভীরতার পানি বিশেষ করে ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোসা, কার্নিসে জমে থাকা পানিতে ডিম ছাড়ে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধরেন আপনার দরজার কাছে বা যেটা আপনার আওতায় সেখানে যদি ওই ধরনের পানি জমে থাকে, তাহলে সেটা আপনার একটা দায়িত্ব থাকবে যে, তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া, যাতে পানিটা জমে না থাকে।’ যেখানেই পরিষ্কার পানি পাচ্ছে, সেখানেই ডেঙ্গুর লার্ভাটা হচ্ছে। প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে বা সব জায়গায় তো সিটি কর্পোরেশন যেতে পারবে না। সরকারও যেতে পারবে না। কিন্তু জনসচেতনতাটা এখানে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কাজেই মানুষ যদি আগামীর জন্য সব সময় এভাবে প্রস্তুত থাকে, তাহলে এটা এভাবে ব্যাপকহারে দেখা দেবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এতে মৃতের সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদফতর ২৩ জন বলে জানালেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৯০-এর বেশি মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই না, এভাবে মারা যাক।’ এবার ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আগাম সতর্কতা দেয়ার পরও সিটি কর্পোরেশন আগাম ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিটি কর্পোরেশন একেবারেই ব্যবস্থা নেয়নি, কথাটা কিন্তু ঠিক নয়। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সময় সময় যেটা হয়ে যায় যে, ঘটনাগুলো এমনভাবে ছড়ায়, আর সংবাদগুলো যখন বেশি আসে, মানুষ এত বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে, সেটাই সমস্যাটা সৃষ্টি করে। মশা নিধনের নিয়মিত কাজটি করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার ঘরের কাছে টবে বা কোথাও বৃষ্টির পানি যদি জমে থাকে, সেখানে মশার বিস্তার হয়। মশা নিধনের পদক্ষেপ সময় মতো নেয়া হয়নি- বিবিসির সাংবাদিক এ মন্তব্য করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সময় মতো হয়নি, এটা ঠিক না। হয়েছে। আমাদের সিটি কর্পোরেশনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে। ‘শুধু সিটি কর্পোরেশনকে দোষ দিলে তো হবে না। এই ডেঙ্গুর ব্যাপারে প্রত্যেকটা মানুষকে নিজেকে সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকটা পরিবারকে সতর্ক হতে হবে। যার যার নিজের ঘরবাড়ি, বাসস্থান পরিষ্কার রাখতে হবে।’ মশার ওষুধ কেনার বিষয়ে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখবেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে মশার ওষুধ কেনা হয়। যারা উপযুক্ত হয় দরপত্রে, তারা কিনে নিয়ে আসে ওষুধ। ‘ঠিক এডিস মশা বা কোন মশার জন্য কোন ওষুধ প্রয়োজন, সেটা হয়ত ওইভাবে বিভক্তিকরণ করা হয়নি তখন।’ বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া আগামীতে কিভাবে আরও সুষ্ঠুভাবে ডেঙ্গুর মোকাবেলা করা হবে? শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে না থেকে আমার দলের সকল নেতাকর্মী এবং সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে আমি আহ্বান করেছি। শুধু ঢাকা শহর না, সমগ্র বাংলাদেশে আমরা একটা পরিচ্ছন্নতার অভিযান আমরা শুরু করেছি। আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনের যত নেতাকর্মী তাদের যেমন সম্পৃক্ত করেছি, আবার সরকারী যত অফিস, আদালত প্রত্যেককে আমি নির্দেশ দিয়েছি। আর তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনগুলো তো আছেই। জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা সারাবছর ধরেই অব্যাহত রাখতে হবে।’ ডেঙ্গু ছাড়াও পদ্মা সেতুতে মাথা লাগার গুজব, ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত বিষয় নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগার গুজব এবং ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যা যা ব্যবস্থা নেয়ার নিয়েছি। দলের নেতাকর্মীদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। অনেক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গুজব ছড়ায়। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ এই গুজব এখন নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই গুজব যারা ছড়াচ্ছে অপরাধী তো তারা। আমাদের ওই জায়গাটাতে হাত দিতে হবে যে, এই মিথ্যা অপবাদটা কেন ছড়াচ্ছে? আসলে পদ্মা সেতু নিয়ে শুরু থেকেই একটা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ছিল।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটি করিও না। ঘটনাচক্রে কিছু ঘটতে পারে। বরং আপনি যদি গত ১০ বছরে আমাদের অবস্থানটা দেখেন, আমরা কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়েই একটা সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, সেই দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। তারপরেও আমরা ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি।
×