ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ৭ আগস্ট ২০১৯

পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর

নেহরুর দর্শন থেকে বেরিয়ে আসছে ভারত। কাশ্মীর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদক্ষেপই তার সাম্প্রতিক উদাহরণ। সোমবার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারত সরকার। বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও আটলান্টিক। ভারত শাসিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিতে সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ, তা বিলোপের একদিন পরেও পুরো অঞ্চল বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ রবিবার সন্ধ্যায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং সেগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি। কাশ্মীরের রাস্তায় হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনিশ্চিত এবং ঘোলাটে রয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় জহরলাল নেহরুর দেখানো যে পথে ভারত এতদিন চলেছে সেখান থেকে দেশকে বের করে আনতে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। আধুনিক ভারতের রূপকার গণ্য করা হয় জওহরলাল নেহরুকে। ১৯৪৭ সালে ভারত প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি আমৃত্যু দেশটির শীর্ষ পদে ছিলেন। ক্যামব্রিজ শিক্ষিত নেহরু সমাজতন্ত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তার দর্শন ছিল- সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও বৈজ্ঞানিক পরিবেশ। এগুলোর ওপর ভর করে ভারত পাঁচ দশকের পথ পাড়ি দেয়। তার চতুর্থ ধারণা ছিল কাশ্মীরের জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’, যার মূল্য এখনও অনুভূত হচ্ছে। সোমবার ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয়, যেটার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। এর ফলে এখন থেকে কাশ্মীর কিভাবে শাসিত হবে সেটার দেখভাল করবে নয়াদিল্লী। বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের ফলে নিশ্চিতভাবেই অশান্ত হয়ে উঠতে পারে কাশ্মীর। ইতোমধ্যে ১৯৮০’র দশক থেকে সেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধের কারণ হয়ে উঠেছে। আর কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হবে। এর আগে গত বছর সুপ্রীমকোর্ট রুল জারি করেছিল যে, ৩৭০ ধারা বাতিল করা যাবে না। তবে আদালত যেই সিদ্ধান্তই দিক না কেন, সোমবারের ঘোষণা ভারতের জন্য নেহরুর দর্শন বাতিলের কয়েকটি পদক্ষেপের অন্যতম। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর সমর্থকদের মতামত হচ্ছে, নেহরু ছিলেন অতিমাত্রায় পশ্চিমাধাঁচের, তিনি ভারতকে বুঝতে সক্ষম ছিলেন না। তার সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতি দশকের পর দশক ধরে প্রবৃদ্ধিও পথ রুদ্ধ করে রেখেছে এবং ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিমদের প্রতি তার দর্শন তুষ্টির শামিল। বিজেপির দর্শন হচ্ছে নেহরুর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে নেয়া নীতি থেকে সরে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। আর এই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে কাশ্মীর। উল্লেখ্য, নেহরুর পরিবারের আদি নিবাস ছিল কাশ্মীর। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম। কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বিলোপের পক্ষে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এ বছর তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও ধারাটি বিলোপের প্রতিশ্রুতি ছিল। ফলে মে মাসে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই তা পূরণে তৎপর হয় মোদি সরকার। শুরু থেকে এর বিরোধিতা করছিলেন কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা। ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না,’ বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মেহবুবা নিজেও। বিজেপির সঙ্গে জোট করে মেহবুবা একসময় জম্মু-কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রী হলেও গত বছর জুনে সে জোট ভেঙ্গে যায়। পতন হয় সরকারের। কেন্দ্র সরকার কাশ্মীরে সেনা বাড়াতে শুরু করলে মেহবুবা রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কাশ্মীরে নিরাপত্তা ক্রমেই জোরদার হতে থাকার প্রেক্ষাপটে শনিবার সর্বদলীয় বৈঠক করেন মেহবুবা, ওমর আবদুল্লাহসহ অন্যরা। রবিবার রাতে তাদের গৃহবন্দী করার পরদিন তারা গ্রেফতার হন সোমবার সকালে রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা বিলোপের কথা ঘোষণা করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিরোধীরা। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এর মধ্যেই মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হলো। কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের জেরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতেও সোমবার উপত্যকায় বাড়তি আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা, স্কুল, কলেজ এবং অফিসও।
×