ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২,৭৪৩টি এমপিওভুক্ত

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৭ আগস্ট ২০১৯

২,৭৪৩টি এমপিওভুক্ত

সরকারী বেতন স্কেলের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন এক অনিবার্য বিষয়। অবশ্য সরকারও প্রয়োজনে বেসরকারী পর্যায়ের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করার কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়। এবার ২ হাজার ৭৪৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার তালিকা প্রস্তুত করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আওতাভুক্ত করে তালিকায় ১ হাজার ৭৬৩টি স্কুল ও কলেজ, ৯৮০টি মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া অনুদানপ্রাপ্ত ১ হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও তা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন ঈদের আগে হবে কিনা তা বলা হয়নি। তবে যখনই হবে কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত সরকার থেকে মূল বেতন এবং কিছু ভাতা পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সরকার এমপিওর আওতাভুক্ত করলেও এখনও অনেক শিক্ষাঙ্গন এমন কার্যক্রমের অধীনে আসতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও বাকি, যারা সরকারী কার্যক্রমের আওতায় আসতে পারেনি। সুতরাং এ নিয়ে আন্দোলন-প্রতিবাদ সব সময়ই চলতে থাকে। ৮ বছর পর ২০১৯ সালে সরকার পুনরায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবিকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারী সুযোগ-সুবিধা দিতে তালিকা প্রস্তুত করেছে। তবে সরকারী এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যূনতম চারটি শর্ত পূরণ করতে হয়, যেখানে শিক্ষার্থী ও পাসের হার অন্যতম বিষয়। এ ছাড়া শিক্ষা ও শিক্ষকের মানসম্মত অবস্থাও নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। এবারও শর্ত সাপেক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও অযোগ্য বিবেচনায় বাদ পড়া স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যাও কম নয়। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এমন শর্ত শিথিলও করা হয়েছে। হাওড় অঞ্চল, পাহাড়ী এলাকা, নারী-শিক্ষা, প্রতিবন্ধীদের প্রতিষ্ঠান এবং চরাঞ্চলেও কিছু শর্ত কমিয়ে দিয়ে সেগুলোকে এমপিওভুক্তের তালিকায় রাখা হয়। তবে এমপিওভুক্ত অনেক মাদ্রাসায় অনিয়ম-দুর্নীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার কোন মানসম্মত পর্যায় না থাকায় প্রায় ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও, আবারও ২০০ প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার কার্যক্রম চলছে। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা এতই অপ্রতুল যে, সরকারী শর্তের প্রতিকূলে যায়। শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন নাÑ এমন অভিযোগও আছে। তবে মাসের শেষে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রতি মাসে বেতন নিতে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানে আসেন। ব্যস এটুকুই। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মাদ্রাসার এমন বেহাল দশা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এলেও কেন যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে নমনীয় ও সহনশীল। অনেক পাবলিক পরীক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পাসের হার একেবারে শূন্য। পর্যায়ক্রমিক ব্যর্থতায় গত ২-৩ বছরে ৩ থেকে ৪শ’ মাদ্রাসার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। শুধু তাই নয়, গত বছর ২০২টি মাদ্রাসা বন্ধ করেও দেয়া হয়েছে। সেখানে আবার নতুন করে মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্তের তালিকায় রাখায় জনমনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অনেক অনিয়ম আর বিধিবহির্ভূত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসাগুলোর যে অব্যবস্থাপনা, সেখানে আরও নজরদারি অত্যন্ত আবশ্যক। নতুন করে যাদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে তাদের ব্যাপারে আরও পর্যবেক্ষণ একান্ত জরুরী।
×