ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অতনু রায়

সফলদের গল্প শোনাতে টেডএক্সবুয়েট

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৬ আগস্ট ২০১৯

সফলদের গল্প শোনাতে টেডএক্সবুয়েট

বিশ্বের সকল সফলদের স্বপ্ন, জীবন সংগ্রাম, পথচলা আর সফলতার গল্প সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ইভেন্টের আয়োজন করে আসছে টেডএক্সবুয়েট। বিভিন্ন আলোচিত বিষয় নিয়ে ১০০টিরও বেশি ভাষার বিখ্যাত, আলোচিত, অনুকরণীয় ব্যক্তি নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও বিখ্যাত, আলোচিত, অনুকরণীয় ব্যক্তির অভাব নেই। একটু খুঁজলেই পেয়ে যাব সেই সব ব্যক্তিত্ব যাদের কর্ম, নিষ্ঠা, সততা, সংগ্রাম আমাদের আগামীর পথচলাতে হবে অনুপ্রেরণা। তেমনই পাঁচজন ব্যক্তির জীবনকথা নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের আয়োজন। টেডএক্সবুয়েটের মডারেটর হিসেবে রয়েছেন ডাঃ মোঃ সাব্বির মোস্তাফা খান, কো-মডারেটর ডাঃ সেলিয়া শাহনাজ, জলবায়ু পরিবর্তন গবেষক ও টেডএক্সবুয়েটের কো-মডারেটর সানিয়া বিনতে মাহতাব, লাইসেন্সি মাফতাহুল ইসলাম, কো-অর্গানাইজার আলিফ আল আরেফিন প্রধান। জীবন সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে কি করব চিন্তা করতে করতে বেইলি রোডে কোন্ আইসক্রিমের দোকান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু পরে তা আর হয়নি। মায়ের ইচ্ছা ছিল বিসিএস নয়ত সেনাবাহিনী। কিন্তু আমার স্বপ্ন তৈরি হলো ব্যবসা নিয়ে। গার্মেন্টস নিয়ে স্বপ্নটা দেখতে শুরু করি। ধার-দেনা করে ২০টি নতুন আর ২০টি পুরনো মেশিন কিনে নিজেদের বাসায় তৈরি করলাম কারখানা। শুরু হলো কঠোর পরিশ্রম। সেই পরিশ্রম আজও থামেনি। ব্যবসার শুরুতেই পর পর দুবার বড় ধরনের হোঁচট খাই। পরিবারের সহযোগিতায় সেই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠি। হাল ছেড়ে দেইনি। স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে ছিলাম। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। কঠোর পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছি ‘ ইসলাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।’ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও আইইইই বাংলাদেশ সেকশনের চেয়ারম্যান ডাঃ সেলিয়া শাহনাজ বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ালেখায় আগ্রহী মেয়েদের সংখ্যা খুবই কম। কঠিন বিষয় ভেবে হয়ত এদিকে অনেকেই পা বাড়াতে চান না। কিন্তু বিষয়টা মোটেও কঠিন না, আমি তা দেখিয়ে দিয়েছি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকৌশল পেশাদারদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্সেও (আইইইই) বাংলাদেশ সেকশনের সভাপতি হয়ে প্রমাণ করেছি যে, মনের মধ্যে স্বপ্ন থাকলে সব করা যায়। স্বপ্ন দেখতে হবে আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া কোন কিছুই অর্জন করা সম্ভব না। আজকাল অনেক ছাত্রছাত্রী সহজ পদ্ধতিতে পড়ালেখা করে বড় অর্জন করতে চায়। কিন্তু সেটা সম্ভব না। আমার অর্জনের পেছনে রয়েছে পরিশ্রম, মনোবল আর নিষ্ঠা।’ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদ বলেন, ‘রাজধানীর মিরপুর টু এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল প্রকল্প, বাড্ডা রোডে ইউলুপ, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মতো দেশের অনেক প্রকল্প আমার হাত দিয়েই বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্প হাতে নেয়া সহজ কাজ ছিল না। প্রচ- ইচ্ছাশক্তি আমাকে এগিয়ে নিয়েছে। সবার পরামর্শ আর নিজের ইচ্ছাশক্তি নিয়ে যখন কাজ শুরু করেছি তখন কঠিন কাজ সহজ হয়ে গেছে। কঠোর পরিশ্রম করেছি। কোন কিছু অর্জনের পেছনে কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।’ বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান বলেন, ‘১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হতাশাব্যঞ্জক ফলাফলের পরেই অধিনায়কের দায়িত্ব নেই আমি। কিভাবে কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেই সময়ে বোর্ডের সিনিয়র-জুনিয়র সবাই আমাকে সাহস দিয়েছিলেন। আমার মধ্যে একটা স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছিলেন। স্বপ্নটা নিয়ে মায়ের কাছে যাই, মা আমাকে সাহস দিয়েছিলেন। আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে আমার পরিবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। জীবনে বড় হওয়ার পেছনে পরিবারের অবদান অনেক বড় ব্যাপার। যে পরিবার ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না সেই পরিবারে বড় অর্জন আসে না। নিজেকে এই অবস্থানে আনার পেছনে আমার স্বপ্ন, আর স্বপ্নকে অর্জন করতে করেছি কঠোর পরিশ্রম। সেই পরিশ্রমেই বের হয়ে এসেছে আজকের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম।’ নিজের জীবন আর স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে এভারেস্ট জয়ী প্রথম বাংলাদেশী নারী নিশাত মজুমদার বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি আমাকে খুব টানতো। আমার জন্ম লক্ষ্মীপুরে। বড় হয়েছি ঢাকায়। গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এলেও প্রকৃতির সঙ্গে প্রেম বদলে যায়নি। পাহাড় আমাকে খুব টানতো। পাহাড়ে ওঠা আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন নিয়েই ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া (৩,১৭২ ফুট) কেওক্রাডং জয় করি। এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ২০০৮ সালে মে মাসে হিমালয়ের সিঙ্গুচুলি পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ৩২৮ ফুট) উঠি। অবশেষে ২০১২ সালের ১৯ মে শনিবার সকাল নয়টা ৩০ মিনিটে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করি। এসব অর্জন করার পথে বহু বাধা এসেছে, আমি থেমে যাইনি। আমি জয় করতে পারব এমন মনোবল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি। আসলে স্বপ্নকে জয় করতে দরকার সততা, নিষ্ঠা আর মনোবল। তবেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেবে।’
×