ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করতে চাই’

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৬ আগস্ট ২০১৯

‘ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করতে চাই’

ডি-প্রজন্ম : বর্তমানে আপনি কী হিসেবে কর্মরত আছেন? নাঈম আশরাফী : ন্যাশনাল সিনিয়র কনসালট্যান্ট, টিম লিডার, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইসিটি ডিভিশন। ডি-প্রজন্ম : আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন? নাঈম আশরাফী : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, পরে এমবিএ করেছি, বর্তমানে উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে পড়ছি। ডি-প্রজন্ম : আপনার কর্মক্ষেত্রের পরিধি নিয়ে বলুন? নাঈম আশরাফী : বিগত ১৭ বছর ধরে আমি আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক সেক্টরে কাজ করছি। আমি মূলত ব্যবসায়ের কৌশল, পরিকল্পনা, পরিচালনা, পণ্য ব্যবস্থাপনা, বিপণন, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে সিনিয়র পরামর্শক হিসেবে কাজ করছি। ডি-প্রজন্ম : এই সেক্টরে কেমন করে এলেন? নাঈম আশরাফী : সাধারণের মতোই কোন ধরনের পেশাগত পরিকল্পনা ছাড়া আইসিটি সেক্টরে এসেছি, আমি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম সেলসম্যান হিসেবে, সফটওয়্যার ও ট্রেনিং সেলস ছিল আমার প্রথম চাকরি। পরে ধাপে ধাপে ব্যবসায় উন্নয়ন, পণ্য ব্যবস্থাপনা, কৌশলগত পরিকল্পনা, পরিচালনা ইত্যাদির দিকে অগ্রসর হয়ে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিইও) হই। ডি-প্রজন্ম : বর্তমানে কী বিষয়ের ওপর কাজ করছেন? নাঈম আশরাফী : মেধাবী তরুণরা যারা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন আইডিয়া নিয়ে আসে তাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকায় এখন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে স্টার্টআপ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি। বর্তমানে আমি পলিসি, অপারেশন, স্ট্র্যাটেজি, ইনোভেশন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করি। স্টার্টআপ বাংলাদেশ থেকে আমরা উদ্ভাবনী, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপদের ফান্ডিং, মেন্টরিং, কো-ওয়ার্কিং স্পেস, ট্রেনিং, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট, ইনভেস্টর ম্যাচমেকিং সাপোর্ট ইত্যাদি দিই। ডি-প্রজন্ম : আমাদের তরুণদের জন্য আপনারা কী করছেন? নাঈম আশরাফী : আমি মনে করি তরুণ প্রজন্মই আসল পরিবর্তনের দিশারী। সারা পৃথিবীতে এখন উদ্ভাবনের জয়জয়কার। নতুন, রূপান্তর ও ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তি প্রতিটি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে। আইসিটি ভিত্তিক সেবা বা পণ্যে মূলধনী ব্যয় লাগে না বিধায় ব্যবসা দ্রত সম্প্রসারণ করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকের কাছে পৌঁছানো যায় বলে সুবিধাভোগীর সংখ্যা অগণন। এ ধরনের ব্যবসার বড় ব্যয় প্রযুক্তি তৈরি, দৈনন্দিন ব্যয় ও গ্রাহক সংগ্রহে। এ ধরনের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণে আমাদের তরুণদের সম্পৃক্ত করতে আমরা কাজ করছি। ডি-প্রজন্ম : তরুণদের উদ্ভাবনী ভাবনা কিভাবে সঞ্চার করা যায়? নাঈম আশরাফী : ২৫০ কোটিরও বেশি লোকের স্মার্টফোনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকা, আনলিমিটেড প্রসেসিং আর স্টোরেজ ক্ষমতা এবং সহজে জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশাধিকারের ফলে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সমস্যা সমাধানে তরুণদের উদ্ভাবনী ধারণাকে ব্যবসায় রূপান্তরিত করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, কর্মসৃজন ও অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ যানজট নিরসন, পার্কিং সমস্যা, রুম শেয়ারিং বা যে কোন বাস্তব স্থানীয় সমস্যা সমাধানের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। তারুণ্যের উদ্ভাবনী ধারণা কিভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে তার ধারণা আমরা টম গুডউইনের একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি থেকে পাই ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি উবারের নিজের কোন ট্যাক্সি নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া ফেসবুক নিজে কোন কনটেন্ট তৈরি করে না, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ পাইকার আলিবাবার কোন গুদাম নেই এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রোভাইডার এয়ারবি এন বি’র নিজেদেও কোন রিয়েল এস্টেট নেই।’ ডি-প্রজন্ম : উদ্ভাবনী উদ্যোগে তরুণদের মূলধন লাগলে তা কিভাবে যোগাড় হবে? নাঈম আশরাফী : সারা বিশ্বে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপে বিনিয়োগ করে থাকে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এক ধরনের হাই-রিস্ক হাই-রিটার্ন ইনভেস্টমেন্ট যা ক্ষদ্র ও প্রাথমিক পর্যায়ের উদীয়মান প্রতিষ্ঠানে করা হয় যার উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে, এদেরকে স্টার্টআপ বলা হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখনও ব্যবসায় ঋণের জন্য আমাদের মূল ভরসার জায়গা হলো ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংক নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে ঋণ দিতে রাজি হয় না। এ ক্ষেত্রে একটি বিকল্প হচ্ছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ। বর্তমান বিশ্বের বড় বড় টেকনোলজি কোম্পানি যেমন ফেসবুক, গুগল, এপল, ডিজনি, মাইক্রোসফট, এইচপি, এ্যামাজন, উবার ইত্যাদি এভাবে হয়েছে। হ্যাম্পলটন পার্টনার্সের বিশেষণ থেকে জানা যায় যে, ২০১৮ সাল বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপে মূলধন বিনিয়োগের একটি রেকর্ড বছর যেখানে মোট ১৮৫ বিলিয়ন ডলারের ১২ হাজার ৫০০টিরও বেশি বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ডি-প্রজন্ম : কর্মসংস্থান তৈরি কিভাবে সম্ভব? নাঈম আশরাফী : আগামী ১১ বছরে দেশে ৩ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। একা সরকারের পক্ষে এত কর্মের সংস্থান করা সম্ভব নয়। কারণ, কর্মবাজারের ৯০ শতাংশই বেসরকারী খাতের। সুতরাং এটি শুধুমাত্র উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমেই সম্ভব। গত দুই বছরে দেশের একটি ছোট্ট স্টার্টআপ কোম্পানি যত নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, সেটির কথা ভাবতেও পারে না আমাদের ৫০ বছর বয়সী কোন কর্পোরেট সংস্থা। মোটরবাইক শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও গত কয়েক বছরে প্রায় দেড় লাখ বাইকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে; যদিও এর জন্য তার একটিও মোটরসাইকেল কিনতে হয়নি! স্বয়ংক্রিয়করণ ও রোবটিকসের ফলে ২০৩০ সালে বিশ্বের ৮০ কোটি বর্তমান চাকরি থাকবে না। এই ঝড় মূলত বয়ে যাবে শ্রমনির্ভর কাজের বেলায় এবং স্বভাবতই আমাদের মতো শ্রমনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো বিপদে পড়বে। তাই এখন থেকেই আমাদের তৈরি হতে হবে। ডি-প্রজন্ম : ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? নাঈম আশরাফী : আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন উদ্যোক্তা, স্ট্র্যাটেজিস্ট, স্টার্টআপ বিনিয়োগকারী ও মেন্টর। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে স্টার্টআপ ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে। এছাড়াও ডাটা এনালিটিকস, ফিনটেক ও ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে।
×