ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের নানা দিক...

প্রকাশিত: ১২:০৯, ৬ আগস্ট ২০১৯

প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের নানা দিক...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং ঢাকার বাইরের ভেন্যুতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ... এই দুটি বিরল কীর্তি গড়ে বাংলাদেশের ফুটবলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে একটি ক্লাব, যার নাম বসুন্ধরা কিংস। ২০০৭ সালে যখন ‘বি’ লীগ শুরু হয়, তখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সদর্পে ঘোষণা দিলÑ এই লীগের মাধ্যমে পেশাদার ফুটবলের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। কিন্তু হাস্যকর ও দুঃখজনক হলেও সত্যÑ কোন ক্লাবই পেশাদার হিসেবে নিজেদের শতভাগ প্রমাণ করতে পারেনি। একযুগ পরেও চিত্রটা খুব একটা বদলায়নি। তবে একটি ক্লাব ব্যতিক্রম। তাদেও এখনই বলা যায় শতভাগ পেশাদার ক্লাব। ক্লাবটি বসুন্ধরা কিংস। যারা লীগসহ স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে ‘ডাবল’ করেছে। ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হওয়াতে অল্পের জন্য ট্রেবল জিততে পারেনি। ফুটবলে যুগে যুগে সবদেশেই একেক সময় একেক ক্লাব শক্তির উত্থান ঘটে। ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া, ওয়ারী, জিমখানা, মোহামেডান, আবাহনী, ব্রাদার্স, বিজেএমসি, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল ধানম-ি এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ... এখন ঘরোয়া ফুটবলের নতুন শক্তি বসুন্ধরা কিংস। ২০১৩ সালে গঠিত হয় বসুন্ধরা কিংস। ২০১৬ সালে পাইওনিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দলটি তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে উত্তীর্ণ হয়। তবে দলটি দ্বিতীয় স্তরের বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং কিছু শর্ত পূরণ করার পর দলটি সেটার জন্য উত্তীর্ণ হয়। ২০১৭ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগের শিরোপা জিতে ক্লাবটি বাংলাদেশ ফুটবল প্রিমিয়ার লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। তারপর তো ইতিহাসই গড়ে তারা। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ মোট ছয় ভেন্যুতে (অন্য ভেন্যুগুলো হচ্ছে : ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম, গোপালগঞ্জের শেখ মনি স্টেডিয়াম, নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়াম, নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম এবং সিলেট জেলা স্টেডিয়াম) গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় বিপিএল ফুটবল। ১৫৬ ম্যাচে গোল হয় ৪২৯। এর মধ্যে আত্মঘাতী গোল হয় ১১। ৪২৯ গোলের মধ্যে দেশী ফুটবলাররা করেছেন ১৫৮টি আর বিদেশী ফুটবলাররা করেছেন ২৭১টি গোল। এই আসরে ম্যাচপ্রতি গোল প্রায় পৌনে তিনটি করে। সবচেয়ে বেশি ৬০ গোল করেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। সবচেয়ে বেশি ৫৩ গোল হজম করেছে এবং সবচেয়ে কম ১৪ গোল করেছে অবনমিত হওয়া টিম বিজেএমসি। লীগে সবচেয়ে বেশি টানা জিতেছে, বসুন্ধরা কিংস, ১৪ ম্যাচে। সবচেয়ে বেশি ২০ ম্যাচে অপরাজিত থেকেই তারাই। সবচেয়ে বেশি ২০ ম্যাচেও জয় তাদের। সবচেয়ে কম ২ ম্যাচে জিতেছে বিজেএমসি। সবচেয়ে বেশি ১০ ম্যাচে ড্র করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী এবং রহমতগঞ্জ। সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছে আরামবাগ-রহমতগঞ্জ ম্যাচে, ৯টি (আরামবাগ ৬-৩ গোলে জয়ী)। সবচেয়ে বেশি টানা ১৫ ম্যাচে জয়হীন ছিল বিজেএমসি। আর সবচেয়ে টানা ৭ ম্যাচে হেরেছে ব্রাদার্স। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোল তৃতীয় হওয়া শেখ রাসেলের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওদোয়িনের, ২২। পেশাদার লীগে তিনিই প্রথম সবচেয়ে বেশি দু’বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন। গত লীগে তিনি শেখ জামালের হয়ে খেলে ১৫ গোল করেছিলেন। অবশ্য সেবার তার ক্লাব সতীর্থ ও গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড সলোমন কিং কানফর্মও করেছিলেন ১৫ গোল। লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় প্রথম ১০ জনের ৮ জনই বিদেশী। দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ গোল করেছেন রানার্সআপ আবাহনীর ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন। লীগে মোট ১০টি হ্যাটট্রিক হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত সবচেয়ে বেশি ২টি হ্যাটট্রিক শেখ রাসেলের রাফায়েল ওদোয়িনের। সবচেয়ে বেশি ৭টি করে হলুদ কার্ড পেয়েছেন নোফেলের এলিটা বেঞ্জামিন, সাইফের জামার ভুঁইয়া এবং বিজেএমসির মুখামেদভ ওতাবেক। আর সবচেয়ে বেশি ২টি লাল কার্ড পেয়েছেন সাইফের ডিফেন্ডার আসাদুজ্জামান বাবুল। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ১২টি করে গোল এ্যাসিস্ট করেছেন আরামবাগের ম্যাথিউ চিনেদু। গোলরক্ষকদের মধ্যে টানা ১২ ম্যাচে গোলপোস্ট অক্ষত রেখেছেন বসুন্ধরার আনিসুর রহমান জিকো। সবকিছু মিলিয়ে অন্যবারের চেয়ে আকর্ষণীয় লীগ হয়েছে এবার। ভালমানের বিদেশীর অন্তর্ভুক্তি ফুটবলের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বাড়ালেও দু-একটি নিম্নমানের মাঠ অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে উন্নতির সুযোগকে। তবুও বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা অপেক্ষায় থাকবেন নতুন মৌসুমের। প্রত্যাশা আরও জমজমাট লীগের।
×