ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ বছর ধরে ঝুলছে কয়লানীতি

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৬ আগস্ট ২০১৯

১৬ বছর ধরে ঝুলছে কয়লানীতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০০৪ সালে কয়লানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন চূড়ান্ত হয়নি কয়লানীতি। ২০১৪ সালে (প্রথম দফায়) বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই নসরুল হামিদ বলেছিলেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়লা নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সেই ঘোষণার পরও ছয় বছর হতে চললেও কয়লা নীতি চূড়ান্ত হয়নি। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও ভুলে গেছেন নীতির কথা। যুগ্ম-সচিব (অপরেশন) শের আলী ফাইলটি ফলোআপ করার কথা। তিনি নিজেই জানেন না, তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না। অথচ এই কয়লা নীতিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর। তিনি ২০১৪ সালে ২ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলা পরিদর্শনের সময় বলেছিলেন, দেশ, জনগণ ও পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনা করেই সুষ্ঠু কয়লা নীতি প্রণয়ন করা হবে। কয়লা নীতি যত দ্রুত প্রণয়ন করা হবে ততই দেশের মঙ্গল। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কয়লার জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। আইআইএফসি নামের দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে খসড়া কয়লা নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয় ২০০৫ সালে। আইআইএফসি প্রণীত খসড়া অনুমোদন না দিয়ে বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে রিভিউ (সংশোধন সংযোজন) করার দায়িত্ব দেয় বিএনপি। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম খসড়া কয়লানীতির অনেকগুলো বিষয়ে পরিবর্তনের সুপারিশ করে রিপোর্ট জমা দেন। এরই মধ্যে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ক্ষমতার পালা বদলে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুয়েটের সাবেক ভিসি প্রফেসর আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করে দেয় কয়লা নীতি প্রণয়নের জন্য। পাটোয়ারী কমিটি খসড়া জমা দিলেও চূড়ান্ত করার আগেই বিদায় নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। মহাজোট সরকার পাটোয়ারী কমিটির খসড়া অনুমোদন না করে রিভিউ করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে। এতে প্রধান করা হয় তৎকালীন জ্বালানি সচিবকে। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি পাটোয়ারী কমিটির খসড়া যাচাই-বাছাই শেষে, খসড়ার নীতি ও বাস্তবায়ন অংশকে দুই ভাগে ভাগ করে কিছু সংশোধনীসহ শুধুমাত্র নীতি অংশটি অনুমোদনের সুপারিশসহ জমা দেয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ মোতাবেক চূড়ান্ত না করে আবারও উচ্চ পর্যায়ের রিভিউ কমিটি গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই কমিটিও একটি সুপারিশ জমা দেয়। এভাবে রিভিউয়ের পর রিভিউ করতে করতে ১৬ বছর পেরিয়ে যেতে চলছে। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে পেট্রোবাংলায় একটি পেজেন্টেশন হয়। এরপর আর কোন হদিস নেই। ওই সূত্রটি জানায়, জ্বালানি সচিবের চাকরির মেয়াদ আর বেশি নেই। সে কোন রকম জটিল কাজে হাত দিতে আগ্রহী না। সচিব বিদায়ের আগে কোন অগ্রগতি হবে বলে মনে হচ্ছে না। আর এই কয়লা নীতির অজুহাত দেখিয়ে দিঘিপাড়া, খালাশপীর, ফুলবাড়ী ও জামালগঞ্জ কয়লা খনির উত্তোলন প্রক্রিয়া ঝুলে রাখা হয়েছে। এই চারটি কয়লা ক্ষেত্রে ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক এমডি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, বড়পুকুরিয়া ক্ষেত্র কোন আইনের আওতায় উত্তোলন করা হচ্ছে। নীতিমালার জন্য বসে থাকার নজির সম্ভবত বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানি বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, কয়লা ক্ষেত্রগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিতে এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে নীতিমালার কোন প্রয়োজনীয়তা দেখি না আমি। তিনি বলেন, কয়লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের সময়তো পরিবেশ ইস্যু জড়িত। আমরা যদি সেটাকে মোকাবেলা করতে পারি, তাহলে কয়লা ক্ষেত্রের বিষয়ে নয় কেন। এমন হতে পারে যদি আমরা কয়লা ব্যবহারই না করি। সে ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫টি কয়লা ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্য চারটি ক্ষেত্র হচ্ছে রংপুরের খালাশপীর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, দীঘিপাড়া ও জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ। ৫টি খনির মধ্যে জামালগঞ্জ কয়লা খনিটি ১৯৫৯ সালে আবিষ্কৃত হয়। সেই সূত্র ধরে ১৯৬২ সালে জয়পুরহাটে জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে। এ যাবত আবিষ্কৃত কয়লাক্ষেত্র সমূহের মধ্যে এখানে সর্ববৃহৎ কয়লার মজুদ ধারণা করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রটিতে আনুমানিক কয়লার মজুদ ধরা হয়েছে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন টন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক অধিদফতর আবিষ্কার করে খালাশপীর, দীঘিপাড়া ও বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্র। আর ফুলবাড়ি কয়লা ক্ষেত্র আবিষ্কার করে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি।’
×