ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ৬ আগস্ট ২০১৯

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল

ভারত সোমবার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে। দেশটির সংবিধানের ৩৭০ ধারায় কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন বিরোধীদের তুমুল বাধা ও বাগবিতণ্ডার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বিবিসি, এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। ওই ধারা বলে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য যেকোন রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। এই ধারাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর ভিত্তিতেই কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, জম্মু ও কাশ্মীর নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকা পায়। এছাড়া পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল ৩৭০ ধারা। সোমবার সংসদে অমিত শাহ বিরোধীদের বাধা উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয় যাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ স্বাক্ষর করেছেন। সিদ্ধান্তটি ঘোষণার আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন অমিত শাহ। বিষয়টি বিজেপির পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডার একটি। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাই শুধু সেখানে বৈধভাবে জমি কিনতে পারতেন, সরকারী চাকরি করার সুযোগ পেতেন এবং সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতেন। কাশ্মীরের বাসিন্দা নয় এমন কেউ সেখানকার সম্পদের মালিক হতে পারতেন না। এখন জম্মু এবং কাশ্মীর ‘ইউনিয়ন টেরিটরি’ বা কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হবে। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইট করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে ভারতকে ঐ রাজ্যের দখলদার বাহিনী হিসেবে প্রমাণ করেছে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর রাজ্যের পুরো অংশের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে, উভয় দেশ বর্তমানে সেখানকার অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে। গত তিন দশক ধরে ভারত শাসিত কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। ৩৭০ ও ৩৫ ক সংবিধানের এ দুটো ধারা বাতিল করতে চেয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। ৩৫ ক নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে কয়েকটি মামলা চলমান। এ কারণে বিকল্প পথ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ ভেঙ্গে আলাদা তিনটি রাজ্য করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। এটি কাশ্মীরের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি আপনা আপনিই বাতিল করে দেবে। এছাড়া, মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটিতে অমুসলমানের সংখ্যা ও ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করার পরিকল্পনা থাকতে পারে বলেও ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সামনেই কাশ্মীরে স্থানীয় নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে দ্রুত। রাজনৈতিক কৌশল হোক বা নিরাপত্তার খাতিরেই, কাশ্মীরে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব আবার বিস্ফোরণের রূপ নিতে পারে। এদিকে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা ইফতি ও ওমর আবদুল্লাহসহ আরেক নেতাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। রবিবার রাতে তাদের গৃহবন্দী করার নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। বলা হয়, কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা ইফতি ও ওমর আবদুল্লাহ এবং আরও এক নেতা সাজাদ লোনকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। একই সঙ্গে কাশ্মীরের অনেক এলাকাতে ইন্টারনেট ও ল্যান্ডফোন পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সেখানে কোন ধরনের র‌্যালি এবং সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে কাশ্মীরের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এর মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে টুইটারে দেয়া বার্তায় মেহবুবা মুফতি লিখেছেন, আমাদের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি, যারা শান্তির জন্য লড়াই করছি, তারা আজ গৃহবন্দী। এর আগে সন্ত্রাসী হামলার হুমকির জেরে কাশ্মীরে সতর্কতা জারি করা হয়। একই সঙ্গে সেখানকার অমরনাথ মন্দিরে তীর্থযাত্রায় আসা হাজারো হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সাধারণ পর্যটকদের দ্রুত কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর থেকেই কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করেন তীর্থযাত্রী ও পর্যটকরা। পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গীরাই বার্ষিক এ তীর্থযাত্রায় হামলার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে ভারতের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কেরান গ্রামের সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্ডার এ্যাকশন টিমের (বিএটি) সদস্যদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় পাঁচ অনুপ্রবেশকারী নিহত হয়েছেন। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার অতিরিক্ত সৈন্য।
×