ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের জোয়ারে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

আতঙ্কের সেই বাগমারা এখন বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৬ আগস্ট ২০১৯

আতঙ্কের সেই বাগমারা এখন বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে জেলার বাগমারা উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ। সেখানে এখন বিশাল বিশাল দালাল ঘর। গড়ে উঠেছে আধুনিক বিপণি-বিতান। বিশাল নিউমার্কেট। নিউমার্কেট ঘিরে এখন সারাক্ষণ মানুষের কোলাহল। পরিপাটি করে সাজানো দোকানঘর। রাতের বেলা বিদ্যুতের আলোয় ঝলমলে সর্বত্র। শুধু নিউমার্কেট কিংবা বড় বড় পাকা ঘর নয়, বর্তমান সরকারের আমলে গত ১০ বছরে এ উপজেলায় ঘটেছে শিক্ষার প্রসার। গ্রামের ধুলাময় আর কাদাযুক্ত সড়কগুলো হয়ে উঠেছে পিচঢালা সুপ্রশস্ত মেঠো পথে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। গড়ে উঠেছে চিকিৎসাকেন্দ্রও। অথচ একসময় ছিল এ উপজেলা রক্তাক্ত জনপদ। রাতে তো দূরের কথা দিনের বেলা সাধারণ মানুষ একা চলতে ভয় পেত। তবে সময়ের ব্যবধানে এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ বাগমারায় এখন উন্নয়নে, আধুনিকতায়, শিক্ষা-দীক্ষায় লেগেছে শহরের ছোঁয়া। উপজেলার মানুষ এখন একান্ত কাজ ছাড়া শহরমুখী হন না। কারণ সবকিছুই এখন তাদের হাতের কাছেই। বিভাগীয় শহর রাজশাহী নগরীর চেয়ে বড় আকারের নিউমার্কেট গড়ে উঠেছে এখন সেই সময়ের রক্তাক্ত জনপদে। ১০ বছর আগের সেই বাগমারা এখন আর নেই। সেখানে এখন সবখানে উন্নয়নের ছাপ। খুব নিভৃত পল্লী গ্রামেও এখন উঁকি দেয় সুউচ্চ দালান, বড় বড় ভবন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বড় বড় ভবনে এখন চলে পাঠদান। সময়ের ব্যবধানে রক্তাক্ত জনপদ নামে খ্যাত বাগমারায় পাল্টে গেছে সার্বিক চিত্র। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরে সকল প্রতিকূলতা ছাপিয়ে পরিণত হয়েছে শান্তির জনপদে। বিগত সময়ে চরমপন্থী ও জঙ্গীদের হাতে হত্যা নির্যাতনের ঘটনা নিত্য ঘটলেও এখন তা আর নেই। এলাকার লোকজন শান্তিতে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছেন। এক সময়ে বাগমারার বিভিন্ন স্থানে চরমপন্থী ও জেএমবির হাতে খুন ছিল প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। তারা একের পর হত্যাকা- ঘটিয়ে চলত। চাঁদাবাজিও করত ওইসব সন্ত্রাসী সংগঠন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাদের হাতে নির্যাতিত হতে হতো। স্থানীয় কিছু বিপদগামীদের সহযোগিতায় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসব হত্যাযজ্ঞ চালাত। তাদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহতও হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাগমারায় চরমপন্থীদের হাতে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ ২৫ জন খুন হয়েছেন। অন্যদিকে জঙ্গীদের হাতে খুন হয় আরও আটজন। কুখ্যাত বাংলাভাই তার জেএমবি নিয়ে প্রথম আস্তানা গড়েছিল এই বাগমারায়। জেএমবির জঙ্গীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শতাধিক মানুষ। তবে এ সরকারের সময়ে বাগমারায় কোন খুন বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। বাগমারা এখন চরমপন্থী ও জেএমবিমুক্ত। চরমপন্থী ও জেএমবিকে নির্মূল করা ছিল বর্তমান সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় সেই রক্তাক্ত বাগমারায় ফিরে এসেছে এখন শান্তি। বর্তমানে বাগমারায় আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভাল। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজি, খুন, ডাকাতির মতো বড় কোন অপরাধ এখন বাগমারায় সংঘটিত হয় না। এক সময় এখানে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ লোকজনকে বিপদে ফেলে মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতেন। বর্তমান সময়ে এসে ঘটেছে তার উল্টো। আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ মামলা থানায় হতো তা থেকে অনেকটায় মুক্ত অবস্থানে ফিরে এসেছে লোকজন। দুটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জেলার বাগমারা উপজেলা। এটি জাতীয় সংসদের একটি আসন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এখানে স্থাপন করা হয়েছে হাটগাঙ্গোপাড়া ও যোগিপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভবন। আইনশৃঙ্খলার অবনতি যেন না ঘটে সে কারণে একটি থানার পাশাপাশি তিনটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। কখনও কোন প্রকার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে জেলা পুলিশের সদস্যরা ছুটে আসেন। জেলার সঙ্গে যোগাযোগ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে। বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, বাগমারা একটি বিশাল উপজেলা এখানে অনেক লোকের বসবাস। তারপরও এই আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের হস্তক্ষেপে এলাকায় এখন শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করছে। বাগমারায় এখন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই নাই। মাদকও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। থানায় এসে কোন দালালি কিংবা হয়রানি করার সুযোগ কেউ আর পায় না। বাগমারা উপজেলায় শিক্ষা ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে এর আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন স্থানীয় এমপি এনামুল হক। নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষা ও পাসের হার বৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ, নতুন নতুন প্রকল্প চালু করেছেন।
×