ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ধাপে তিন স্তরের মনিটরিংয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

প্রকাশিত: ১১:১২, ৬ আগস্ট ২০১৯

দুই ধাপে তিন স্তরের মনিটরিংয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র ধোঁয়াযুক্ত ওষুধ ছিটিয়ে নয়, সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে গৃহীত নানা ব্যবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মত দিয়েছেন কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। একইসঙ্গে দুই ধাপে তিন স্তরে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নিলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি। সোমবার গুলশান নগর ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবেলায় মেয়র আতিকুল ইসলাম কলকাতা কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র অতীন ঘোষের পরামর্শ নেন। কলকাতা যেভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সফল হয়েছে তা জানতে ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য এই ভিডিও কনফারেন্সের অয়োজন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এদিকে ডেঙ্গু নির্মূলে কলকাতার মেয়র ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অতি দ্রুতই কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জনকণ্ঠকে জানান মেয়র আতিক। ডেঙ্গু সম্পর্কে আরও বেশি অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য শীঘ্রই ঢাকা উত্তরের প্রতিনিধিদল কলকাতায় যাবে বলে জানান তিনি। তিন স্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে অর্গানোগ্রাম বদলেরও উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম। অপরদিকে কলকাতার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ধোঁয়া বা কীটনাশক দিয়ে ডেঙ্গু মশা নিধন করা যাবে না। ডেঙ্গু নিধন শুধু সরকারের কাজ নয় সবার সচেতনতাও জরুরী। ডেঙ্গু বহনকারী মশা পানি ছাড়া যে কোন স্যাঁতসেঁঁতে যদি জায়গায় ডিম পাড়ে তাহলে সে ডিম তিন বছর জীবিত থাকবে। বর্ষার মৌসুম না থাকলেও স্যাঁতসেঁঁতে বাড়িতে পানির ছোঁয়া পেলে ডিম জেগে উঠবে। তাই শুধু বর্ষাকালে নয় শীতকালেও ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ প্রান্তে মেয়রের সঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন, প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মঞ্জুর হোসেন, সচিব রবীন্দ্র বড়ুয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কলকাতা প্রান্তে ছিলেন কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের সঙ্গে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক মুখ্য পরামর্শক তপন মুখার্জী, উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. সুব্রত রায় চৌধুরী ও চীফ ডিরেক্টর কন্ট্রোল অফিসার ড. দেবাশীষ বিশ্বাস, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রধান তৌফিক হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। অতীন ঘোষ বলেন, মোট তিন স্তরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ওয়ার্ড লেভেল, বোরো বা জোন লেভেল এবং কেন্দ্রীয় লেভেল। এই তন স্তরে প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের মাধ্যমেই কেবল ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সিটি কর্পোরেশনের প্রতি পরামর্শ দিয়ে কলকাতার ডেপুটি মেয়র বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলার ধাপ দুটি। এক প্রিভেনটিভ বা প্রতিরোধমূলক দুই কিউরেটিভ বা প্রতিকারমূলক। তবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কলকাতা সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগের উদাহরণ দিয়ে অতীন বলেন, এডিস মশার প্রজননস্থল আমরা খুঁজে বের করে ধ্বংস করে দেই। এর জন্য তৃণমূল পর্যায়ে ওয়ার্ড লেভেল, বোরো লেভেল বা জোন এবং সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় লেভেল, এই তিন স্তর থেকে মনিটরিং করা হয়। এভাবে কোথায় কোথায় কোথায় ডেঙ্গুর প্রজননস্থল আছে তার একটা চিত্র পাই আমরা। আর সেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হয়। ডিডিও কনফারেন্সে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়রিয়ার ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা বোঝা গেলেও ডেঙ্গুর পানিশূন্যতা কিন্তু হঠাৎ করে বোঝা যায় না। তাই এ বিষয়ে চিকিৎসককে সজাগ থাকতে হবে। পানিশূন্যতা নিয়ন্ত্রণ হলে রোগীর শরীর থেকে ডেঙ্গু অনেকটাই কমানো যায়। বাড়িতে থেকেও চিকিৎসা করা যায়। কলকাতা স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ডক্টর স্বপন মুখার্জী বলেন, ডাবের পানি, ফলের রস, ঘন ঘন পানি খেতে হবে। দেখতে হবে সেই রোগী তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর স্বচ্ছ প্রস্রাব করছে কি না। তাহলে ধরে নিতে হবে সেই রোগীর ডেঙ্গু ততটা প্রকট নয়। তিনি বলেন, শীতকালেও কাজ করতে হবে ডেঙ্গু নিয়ে। কারণ ডেঙ্গু বহনকারী মশা পানি ছাড়া যে কোন স্যাঁতসেঁঁতে যদি জায়গায় ডিম পাড়ে তাহলে সে ডিম তিন বছর জীবিত থাকবে। বর্ষার মৌসুম না থাকলেও স্যাঁতসেঁতে বাড়িতে পানির ছোঁয়া পেলে ডিম জেগে উঠবে। পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ধোঁয়া বা কীটনাশক দিয়ে ডেঙ্গু মশা নিধন করা যাবে না। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ করে ডেঙ্গু নিধন নয়। এসব বন্ধ করতে হবে। আর জনগণকে একটা বার্তা দেয়া যায় যে, এ কাজটা শুধু সরকারের তা নয়। এটা জনগণের। এটা বোঝাতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে দেশে আছে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমবে। আমরা শুধু বর্ষাকাল না সারাবছর ধরেই মশার উৎস খুঁজি এবং তা নিধন করি। তা কলকাতা সিটি কর্পোরেশন ১৪৪টি ওয়ার্ডে করে থাকি। আলোচনায় কীটনাশকে মশা নিধনের বিষয়টি উঠলে কলকাতার বিশেষজ্ঞরা এটা ভুল ধারণা বলে জানান। এজন্য শুধু সিটি কর্পোরেশন নয় সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতনতামূলক কাজ করতে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কিভাবে সফলতা এনেছে কলকাতা সিটি কর্পোরেশন তার অভিজ্ঞতা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে ভিডিও কনফারেন্সের অঅয়োজন করেছি। মূলত তাদের দেয়া পরামর্শ অতি দ্রুতই বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে কলকাতা সিটি কর্পোরেশন ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ১০ বছরে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
×