ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় থানার ভেতরে গৃহবধূ, সাভারে নারী শ্রমিক ধর্ষিত

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৬ আগস্ট ২০১৯

খুলনায় থানার ভেতরে গৃহবধূ, সাভারে নারী শ্রমিক ধর্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় এক নারীকে (২১) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নিজেই আদালতে গণধর্ষণের অভিযোগ করেছেন ৩ সন্তানের জননী ওই নারী। আদালতের নির্দেশে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য রবিবার রাতে ওই নারীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও সময় স্বল্পতার কারণে পরীক্ষা করা হয়নি। সোমবার দুপুরে তার ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট পেতে কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ শফিকুজ্জামান। এদিকে, খুলনা জিআরপি থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় ঘটনা তদন্তের জন্য রেলওয়ে পাকশীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ এবং সদস্য কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ.ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ বাহারুল ইসলাম। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বড় বোন হোসনে আরা জানান, তার বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। ৩ সন্তানের মা সে। শুক্রবার খুলনাগামী ট্রেনে আসার সময় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীররাতে জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি পাঠান তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরও চার পুলিশ সদস্য পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার পুলিশ পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ মামলা দিয়ে খুলনা অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করায়। তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি তুলে ধরে। তখন আদালতের বিচারক তার ডাক্তারী পরীক্ষার নির্দেশ দেন। ওসি ছাড়া বাকি চার পুলিশ সদস্যের নাম জানাতে পারেনি ভুক্তভোগী ও তার পরিবার। ওই গৃহবধূর ভাই জানান, তার বোনকে জিআরপি থানায় আটক করে রাখার খবর পেয়ে সেখানে গেলে ওসি তাকে বলেন, তোমার বোনকে মোবাইল চুরির জন্য ধরে আনা হয়েছে। এরপর বলেন, ‘যা বাসা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আয়। তা না হলে ওকে ছাড়ব না।’ এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি ওইখানে অপেক্ষায় থাকেন। টাকা আনার জন্য বার বার ভয়-ভীতি দেখানো হলে তিনি চলে আসেন। পরেরদিন সকালে গেলে টাকা নিয়ে গেছেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। ‘গরিব মানুষ এত টাকা পাব কোথায় বলার পর বলে তোর বোন এবার জেলের ঘানি টানুক।’ এর কিছু সময় পর আমার বোন আমারে জড়িয়ে ধরে বলে, ভাইয়া আমার ব্যাগে পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়েছে। আমি বলি এটা কি করলেন? এরপর পুলিশ বলে, ‘এই বেডা বেশি কথা কবি না। আমি তখন একা ছিলাম। ভয়ে আমি আর তখন কিছু বলিনি।’ এ বিষয়ে খুলনার জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, জিআরপির দুই মহিলা সদস্য তাকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ শুক্রবার আটক করে থানায় নিয়ে আসে। শনিবার তাকে আদালতে তোলা হয়। ওই মামলা থেকে বাঁচার জন্য সে আদালতে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছে। তিনি বলেন, থানায় রাতে তিনজন নারী পুলিশসহ ৮ জন পুলিশ পাহারায় থাকে। সেখানে তাকে ধর্ষণের কোন সুযোগ নেই। এদিকে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি সমঝোতার জন্য ওই নারীর পরিবারকে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় তিনি হুমকি দিচ্ছেন বলেও তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। দিনমজুর নারী শ্রমিক গণধর্ষণের শিকার ॥ সংবাদদাতা সাভার থেকে জানান, সাভারে এক নারী দিনমজুর শ্রমিক গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নিজে বাদী হয়ে সোমবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ঘটেছে সাভারের ডগরমোড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে। সোমবার দুপুর থেকে সাভারের ডগরমোড়া ও রেডিও কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। আটককৃতরা হলো, জামালপুর জেলার টাঙালীপাড়ার ইলিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ আরিফ, একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আমিনুল, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার টইছড়া গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে বাদল, শিমুলবাড়ি গ্রামের গোলজার রহমানের ছেলে আলমগীর এবং কুমারবাড়ি এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে কবীর। জানা যায়, ৪ আগস্ট সকালে ভুক্তভোগী নারী সাভার বাসস্ট্যান্ডে অন্য দিনমজুরদের সঙ্গে কাজ পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় অভিযুক্ত ৫ জন ৫০০ টাকা মজুরিতে তাকে কাজের কথা বলে ডগরমোড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের আচরণ দেখে সন্দেহ হলে ওই নারী চলে আসতে চায়। কিন্তু তাকে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পাঁচজন নির্মাণ শ্রমিক। পুলিশ জানায়, গণধর্ষণের শিকার নারী শ্রমিককে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। মাত্র ১৫ দিন আগে পাবনা থেকে এসে কাজের আশায় সাভারের সবুজবাগ এলাকায় বসবাস শুরু করেছিলেন ওই নারী।
×