ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট : বনজসম্পদ দখলের হিড়িক

প্রকাশিত: ০২:৪৩, ৫ আগস্ট ২০১৯

রোহিঙ্গা সঙ্কট : বনজসম্পদ দখলের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারিরা উখিয়ায় দখল করেছে বনজসম্পদ। ঝুপড়ি তৈরী করতে গিয়ে এমনিতে রোহিঙ্গারা সাবাড় করে ফেলেছে বহু বনপাহাড়। ওসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে দোকানঘর-বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রচুর মুনাফা হচ্ছে দেখে ইয়াবা কারবারিদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে বনজসম্পদের ওপর। বনবিট কর্মকর্তাকে বশে এনে তারা রাতারাতি ঘেরা দিয়ে দখল করে চলেছে গাছগাছালিতে ভরপুর সামাজিক বনায়ন। সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে আশ্রয়স্থল বা ঝুপড়ি তৈরী করতে গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে সংরক্ষিত বনের বহু মূল্যবান গাছ। পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে রোহিঙ্গারা। এতে সরকারের বনবিভাগের প্রায় ২হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে বাজার, দোকান ও বাসাভাড়া দিতে অনেকে অবৈধ দখল করে নির্মাণ করেছে বিভিন্ন স্থাপনা। এখানে একটা বিষয় পরিস্কার যে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য সরকার স্থান নির্ধারণ করে দিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পশ্চিম পাশে। রাস্তার পূর্ভপাশে সৃজিত বাগান ও বনসম্পদ অক্ষত ছিল। াাশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এবার ইয়াবা কারবারিরা সড়কের পূর্বপাশে দখল করে নিচ্ছে। উখিয়ার বালুখালী ঢালার পর থাইংখালী বনবিটের অধীনে আবু তাহের নামে এক ইয়াবা সম্রাট দখলে নিয়েছে প্রায় ৪একর বনজসম্পদ। স্থানীয়রা জানান, অবৈধ দখলকৃত বনজসম্পদটি প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় আবু তাহের তার বাহিনী দিয়ে রবিবার ভোর হওয়ার আগেই ঘেরা দিয়ে ফেলেছে। বালুখালী ও থাইংখালী বনবিটের দায়িত্বে থাকা বিট কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে রাতের আঁধারে দখল করা হয়েছে বহু মূল্যবান ওই বনজসম্পদ। সূত্র আরও জানায়, টেকনাফ উখিয়ার বনভূমিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সরকার ৬হাজার একরের বেশী বনভূমি বরাদ্দ করেছে। বনবিভাগের নমনীয়তার সুযোগে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ও বিভিন্ন এনজিওর স্থাপনা তৈরীতে ইতোমধ্যে ধবংস করা হয়েছে আরও কয়েক’শ একর বনজসম্পদ। তবে গত দুই বছরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পূর্বপার্শ্বে খুবই কম জায়গা দখলে গেছে। উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবির স্থাপন করা হয়েছে প্রধান সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে। প্রধানসড়ক সংলগ্ন ক্যাম্প স্থাপিত হওয়ায় পূর্বপাশের জমিতেও স্থানীয়দের মধ্যে দোকান-ঘর নির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এঅবস্থায় অবৈধবাবে বনজসম্পদ দখলে হিড়িক পড়েছে। উখিয়ার বালুখালী-২ ক্যাম্প নং-১২এর পাশে ইয়াবা কারবারি আবু তাহের দখলে নিয়েছে প্রায় ৪একর বনজসম্পদ। প্রধান সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা করতে অবৈধ দখলের দৃশ্যটি সকলের দৃষ্টি কাড়লেও বনবিভাগ যেন দেখেও দেখেনা। সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার থেকে যানবাহনে করে টেকনাফ যেতে উখিয়ার বালুখালী-২ ক্যাম্প নং-১২এর পূর্বপাশে চোখে পড়ে ঘেরা দিয়ে বিশাল জায়গা দখলের দৃশ্য। ইয়াবা কারবারি আবু তাহের দখলে নিয়েছে প্রায় ৪একর বনজসম্পদ। সামাজিক বনায়নের চতুর্দিকে বাশের ঘেরা দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দুইটি ঘরও তৈরী করা হয়েছে। চিরস্থায়ী নয়-সাময়িকভাবে দখলে নেয়ার কথা স্বীকার করে আবু তাহের বলেন, বিষয়টি স্থানীয় বনবিটকর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত দখলে রাখা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিটকর্মকর্তা পরামর্শ দিয়েছে একটা গাছও যেন না কাটা হয়। গত দুই বছর ধরে সরকার উখিয়ায় প্রধান সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির তৈরী করে পূর্বপাশের বনজসম্পদ অক্ষত রেখেছিল। ইদানিং ইয়াবা কারবারি ও সন্ত্রাসীদের কারণে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই বনজসম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল।
×