ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুদ হার এক অঙ্কে নামাতে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৫ আগস্ট ২০১৯

 সুদ হার এক অঙ্কে নামাতে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সুদের হার এক অঙ্কে নামাতে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ১৪, ১৫, ১৬ শতাংশ সুদহার হিসাব করে কী লাভ, দিতে পারবে না; এতে শুধু খেলাপী ঋণই বাড়বে। একই সঙ্গে এখন থেকে সরল সুদে ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এর মাধ্যমে প্রায় এক বছর আগে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর ঘোষণা এবার সার্কুলার জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত বছরের জুলাই থেকে ব্যাংকের মালিকরা ঋণ সর্বোচ্চ ৯ এবং আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (নয়-ছয়) কার্যকরের ঘোষণা দেন। কিন্তু গত ১ বছরেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নি তারা। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামেনি। এর প্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। গবর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বেসরকারী ৪০টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যাংক ব্যবসার অনুমোদন যারা দেয়, তারা বাতিলও করতে পারে। সুতরাং সিঙ্গেল ডিজিটসহ বিভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি। এই মুহূর্তে সরকারীসহ মোট ১৬টি ব্যাংক ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন করেছে। ধীরে ধীরে সব ব্যাংকই সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকরের আওতায় চলে আসবে বলে আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কখন জারি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্কুলারটি শীঘ্রই জারি করবে। তিনি জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ব্যাংক খাতের সকল পরিস্থিতি ভাল হয়ে আসবে। তারল্য সঙ্কট, খেলাপী ঋণসহ ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যা অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মোস্তফা কামাল। ইচ্ছাকৃত খেলাপীদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পূর্বের আইনে তাদের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই, তবে তার মধ্যে থেকেও যতটুকু আইনী ব্যবস্থা নেয়া যায় আমরা তা নিচ্ছি। কিন্তু নতুন ভাবে যে আইন আসছে সেখানে সব কিছুর পরিষ্কার বিবরণ থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত কেউই হবে না বরং সবাই উপকৃত হবে ওই আইনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, যারা টাকা নিয়ে গেছে ফেরত না দেয়ার জন্য, মারার জন্য তাদের অবস্থা ভাল হবে না। তারা সফল হবে না। কারণ তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আমি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য, অপমানিত করার জন্য, লাঞ্ছিত করার জন্য এখানে আসি নাই। কাউকে জেলে ঢোকানোর জন্য এখানে আসি নাই। আমার কথা হচ্ছে আমাদের যে টাকা আজ খেলাপী হয়ে গেছে, সেটা জনগণের টাকা, সরকারের টাকা। এগুলো যেকোন ভাবেই ফেরত পেতে হবে। তবে যে ঋণগুলো ভাল উদ্দেশ্যে নিয়েছে, কিন্তু প্রকৃত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে টাকা ফেরত দিতে পারেনি, তাদের থেকে সরল সুদের বদলে চক্রবৃদ্ধি সুদ আরোপ করা হলে সেটাও দেখা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে আমাদের অর্থনীতি বড় হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছুটা সময় প্রয়োজন। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা সেই জায়গায় পৌঁছতে পারব। আমরা চাইলেই একটি ব্যাংক বন্ধ করে দিতে পারি না, কারণ এগুলো আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা। চাইলেই একটি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংক যখন সঙ্কটের মুখে পড়েছিল তখন আমরা তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। এই মুহূর্তে বেসিক ব্যাংক একটি দুর্দশাগ্রস্ত সময় পার করছে। আমরা তাদেরও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে সবাই মিলেই এগিয়ে যেতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেই সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না।
×