ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে ১৮৭০ নতুন ডেঙ্গু রোগী

প্রকাশিত: ১০:২৬, ৫ আগস্ট ২০১৯

হাসপাতালে ১৮৭০ নতুন ডেঙ্গু রোগী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার খেলা চলছে। রবিবারও নতুন রেকর্ড হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের। এদিন নতুন ১৮৭০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ ঘণ্টায় গড়ে ৭৯ জন। দেশের ৬৪ জেলায় অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কিট সঙ্কটে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। রবিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দীন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার (৫৪) মারা গেছেন। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রবিবার বিকাল সোয়া তিনটায় দিপালী আক্তার (২৩) নামে একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন। আর ঢাকার বাইরে খুলনায় দুইজন, নোয়াখালীতে দুইজন ও বরগুনায় এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। খাগড়াছড়ি, রাজশাহী, নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারী হিসেবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ জন হলেও সারাদেশে ইতোমধ্যে ৫৫ জনের বেশি মারা গেছে বলে বেসরকারী সূত্রসমূহ দাবি করেছে। রবিবার পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরে পহেলা জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশে শনাক্তকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৮০৪ এবং এই সময়ের মধ্যে ছাড়প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ৭,৩৯৮ জন। আর ঢাকার ৩৭টি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ৪,৯৬৯ জন। দেশের অন্য বিভাগে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২,৪২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া নতুন রোগীর সংখ্যা ১,৮৭০ জন এবং এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দীন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার (৫৪) মারা গেছেন। রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে সৈয়দা আক্তারের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্কয়ার হাসপাতালে যান। পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এআইজি একেএম কামরুল আহছান জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি হন সৈয়দা আক্তার। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে শনিবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কোরেশী দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিন ছেলের একজন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও একজন নটরডেম কলেজে পড়ছেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। তিনি পুলিশ লাইন্স পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টারের মেঘনা ভবনে থাকতেন। এআইজি কামরুল আহছান জানান, এ পর্যন্ত দেশে পুলিশ সদস্যসহ তাদের পরিবারের ১৫০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের অর্ধেক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪৮ জন ও ঢাকার বাইরে ২। এর মধ্যে ৩১ জুলাই পুলিশের এসআই কোহিনুর বেগম নীলা (৩৩) মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৩০ জুলাই পুলিশ কনস্টেবল মোঃ দুলাল হোসেনের স্ত্রী রুপা আক্তার (২৭) ঢাকার শ্যামলী ট্রমা সেন্টার এ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শাহাবুদ্দীন কোরেসী সরকারী সফরে এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আজ সোমবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপরই সৈয়দা আক্তারের জানাজার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, দেশের সব ক’টি বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীতে আক্রান্তদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক দু’ প্রকার এডিস মশার মধ্যে ‘এডিস এজিপ্টি’ শহরে এবং ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। ফলে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যাচ্ছেন তাদের শরীর থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু টেনে নিয়ে গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতে পারে ‘ এডিস এ্যালবোপিকটাস’ মশা। এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, রংপুরে কিট সঙ্কটের কারণে সরকারী, বেসরকারী হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা (এনএসওয়ান) ব্যাহত হচ্ছে। সীমিত কিট দিয়ে দুই-একটিতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হলেও তা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ সুলতান আহমেদ বলেন, আমরা নিজস্ব উদ্যোগে হাতেগোনা কিছু কিট এনে মেডিক্যালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করছি। যদি কেউ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসক তার ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য বলেন অবশ্যই তার পরীক্ষা করা হবে। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, খুলনায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক স্কুলছাত্রসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মোঃ মঞ্জুর শেখ (১৫) নামের এক ছাত্র খুলনার একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আর শনিবার রাত ১২টার দিকে মর্জিনা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আব্দুর রাজ্জাক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে খুলনায় এই দুই জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর এটি খুলনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা। খুলনার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩-৪ দিনে খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ১০-১২ জন করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ইতোমধ্যে খুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৮ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৪৫জন। নিজস্ব সংবাদদাতা চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ জন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে রবিবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৩ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৪ জন, ভর্তি আছেন ৯ জন। স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, প্রতিদিনই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর এই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ জন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এ হাসপাতালে সোমবার পর্যন্ত ৭২ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে দুইজন আছেন আইসিইইতে। গেল ১৫ জুলাই থেকে এখানে ১৪৮ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৬ জন। তারা প্রায় সবাই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেবল ফেরদৌস সিদ্দিকী নামে এক সাংবাদিক রাজশাহীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি থেকে জানান, খাগড়াছড়িতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত গত সাত দিনে খাগড়াছড়িতে ২২ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসলেও স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে চারজন। ফলে খাগড়াছড়িতেও ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বর পরীক্ষার কীট না থাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নির্ভর করতে হচ্ছে রোগীদের। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার নয়নময় ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বর পরীক্ষার কিট না থাকায় কর্তৃপক্ষ বাইরে পরীক্ষা করে চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। তবে এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, মাগুরা সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামে জয়া সাহা নামে এক মহিলা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ রবিবার ভোরে ঢাকায় একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। সে মাগুরা সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামের চঞ্চল সাহার স্ত্রী । এদিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আজ ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই নিয়ে হাসপাতালে ১৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। ১০জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা বরগুনা থেকে জানান, বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তাওহীদ (দেড় বছর) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন শাহিন খান জানান, এ পর্যন্ত বরগুনায় ৩৭টি রোগী পাওয়া গেছে। ২২ জন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীর হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার নোয়াখালীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রেলওয়ে কর্মচারীসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় রবিবার জানায় , গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৪জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ জন, চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন, ৩৪জন। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম রবিবার দুপুরে জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হলেও বেড এবং ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সঙ্কট রয়েছে। অধিকাংশ রোগী ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসলেও নোয়াখালীতেও কয়েক জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, এ জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের কোন দৃশ্যমান চিত্র দেখি না। নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রওশন আরা খানম বলেন, রবিবার পর্যন্ত নওগাঁ হাসপাতালে ৪০ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই ৪০ জনের মধ্যে ৪ জন নওগাঁতেই আক্রান্ত হয়েছে। ৩৬ জন ঢাকা কানেকশন। এর মধ্যে ১০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। ১০ জনকে রাজশাহী মেডিক্যালে রেফার্ড করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২০ জন এখনও নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে। জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া দুজন রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নানামুখী কার্যক্রমের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ, কার্নিশ, ড্রাম, রিজারভার, ফুলের টব ও ছাদ বাগানে পানি জমে থাকলে জরিমানা করা হবে। দুয়েক দিনের মধ্যে এ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। রবিবার চট্টগ্রামে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ১৭ জন। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ২৬৩ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে বলে জানান চসিক মেয়র। এদিকে, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে পৃথক ওয়ার্ড। হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডটিকে গত শনিবার থেকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড হিসেবে চালু করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৩০ শয্যার এ ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার নতুন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১৭ জন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এর আগে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৪১ জন। স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারী হিসাবে নতুন করে আরও ৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন এই ৭ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৫ জনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত বাগেরহাটে জেলায় সরকারী হিসেবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জ জেলায় ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৬১ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৮৫ জন। জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ লুৎফর রহমান জানান, সদর হাসপাতালে মোট ৯৭ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে ৫৬ জন ভর্তি আছে। এছাড়াও ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া দুজন রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে একজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। রবিবার শেবাচিম হাসপাতালে ১৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার এ সংখ্যা ছিল ১১৭ জন। নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রবিবার নতুন করে গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে আরও ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। উল্লেখ্য, এ নিয়ে এ পর্যন্ত গাইবান্ধায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৩ জন। নিজস্ব সংবাদদাতা পটুয়াখালী থেকে জানান, পটুয়াখালীতে নতুন ৫ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ৫৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ১৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা নড়াইল থেকে জানান, নড়াইলে প্রতিদিন ডেঙ্গু অক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নড়াইলে ৩ শিশুসহ এ পর্যন্ত মোট ২৬ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে ১০ জন। ২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নড়াইলের সিভিল সার্জন ডাঃ আসাদ-উজ-জামান মুন্সি জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত আছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২০জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, গত ২০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৬০ জন। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ৪৫ জন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে পাঁচ জনকে। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৯ জন (রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত)। সিভিল সার্জন এনামুল হক বলেন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে আপাতত ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করার কিটের সমস্যা নেই। তবে বিভিন্ন সুপারিশের কারণে কিটের অপব্যবহার হচ্ছে। ‘চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা যাতে করতে না হয় সে বিষয়ে তিনি সকল মহলের সহযোগিতা করেন করেন। নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, ঝালকাঠিতে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে ২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় কেউ আসলে তাকে বরিশাল পাঠানো হয়। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে এ পর্যন্ত ২৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষা করাসহ ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শাহিনুর রহমান সরদার জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ডেঙ্গু কর্নার খুলে সেখানে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
×