ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিক মৌসুমে ৪ দিনে সাত হাজার নতুন রোগী

ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হতে পারে

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৫ আগস্ট ২০১৯

 ডেঙ্গুর প্রকোপ  দীর্ঘায়িত হতে পারে

নিখিল মানখিন ॥ ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিবছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়ে থাকে। গত ১৮ বছরের সরকারী পরিসংখ্যানে এই তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। এ বছর জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছে অস্বাভাবিক ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুর পিক মৌসুম হিসেবে পরিচিত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস। গত ১৮ বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি বছরেও এই পিক মৌসুমে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের পুনরাবৃত্তি ঘটলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। আর আগস্ট মাসের গত চার দিনেই প্রায় সাত হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের চিত্রটি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া, ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়া, ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণের সঙ্কট, কার্যকর এডিস মশক নিধন কার্যক্রমের অভাব এবং সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ইত্যাদি কারণও ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গুর পিক মৌসুম হিসেবে পরিচিত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। আর ওই বছরের জুনে ২৯৫, জুলাইতে ৯৪৬, আগস্টে ১৭৯৬, সেপ্টেম্বরে ৩০৮৭ ও অক্টোবরে ২৪০৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ২০১৭ ও ২০১৬ সালেও আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি আক্রান্ত হয়েছিল। এভাবে ২০১৫ সালের মার্চে ২, এপ্রিলে ২, মে মাসে ১, জুনে ১৫, জুল্ইায়ে ১৫৬, আগস্টে ৭২৭, সেপ্টেম্বরে ৯৬৫, অক্টোবরে ৮৮০, নবেম্বরে ২৬০ ও ডিসেম্বরে ৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। সূত্রটি আরও জানায়, রাজধানীতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৭, মার্চে ৩, এপ্রিলে ৩, মে মাসে ১২, জুনে ৫০, জুলাইয়ে ১৭২, আগস্টে ৩৩৯, সেপ্টেম্বরে ৩৮৫ এবং অক্টোবরে আক্রান্ত হয় ৫০১ জন। আর ২০১৯ সালে জুনে ১৮৬৩ ও জুলাইয়ে ১৫ হাজার ৬৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর সামনে পড়ে আছে পুরো আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে ৫৫৫১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৯৩ জন, ২০০১ সালে ২৪৩২জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৬২৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১০ জন, ২০০৪ সালে ৩৪৩৪ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৩ জন, ২০০৫ সালে আক্রান্ত ১০৪৮ জন ও মৃত্যু ৪ জন, ২০০৬ সালে আক্রান্ত ২২০০জন ও মৃত্যু ঘটে ১১ জনের। এভাবে ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩জন,২০০৯ সালে ৪৭৪ জন এবং ২০১০ সালে ৪০৯ আক্রান্ত হলেও ওই চার বছরে কেউ মারা যায়নি। আর ২০১১ সালে ১৩৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১ জন, ২০১৩ সালে ১৭৫৯জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ২ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন আক্রান্ত, ২০১৫ সালে ৩১৬২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১৬ সালে ৬০৬০ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৪ জন, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২৭৬৯ ও মৃত্যু ৮ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে। বর্তমান আবহাওয়ার খুব বেশি পরিবর্তন না হলে আগামী শীতের মৌসুম পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইদানীং সারা বছরই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে সমন্বিত উদ্যোগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। জেলা ও উপজেলায় স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা ॥ দেশের সব বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীতে আক্রান্তদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক দু’ প্রকার এডিস মশার মধ্যে ‘এডিস এজিপ্টি’ শহরে এবং ‘ এডিস এ্যালবোপিকটাস’ গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। ফলে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যাচ্ছেন তাদের শরীর থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু টেনে নিয়ে গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতে পারে ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ মশা। এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এ এস এম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকায় আক্রান্তদের অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। ডেঙ্গু মশা দু’ধরনের হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে ছড়ানোর আরেকটি কারণ হলো, ডেঙ্গু বাহক ‘এডিস এজিপ্টি’ মশা যেমন নাগরিক মশা, শহরের মশা। এ ধরনের মশা শহুরে এলাকায় মানুষের বাড়ি-ঘরে থাকে। ডেঙ্গুর আরেকটি বাহক ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ থাকে গ্রামাঞ্চলে। এই এডিস এ্যালবোপিকটাস যদি কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড় দেয় তাহলে এই মশাটিও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই গ্রামে যারা যাচ্ছে তারা গিয়ে সেখানে যে মশার কামড় খাচ্ছে তাতে করে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। ফলে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তারলাভের সুযোগ রয়ে যাচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা বলেন, ঈদ উদযাপন করতে লাখ লাখ শহুরে মানুষ গ্রামে যাবেন । ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগী অথবা রোগীর অজান্তেই প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু রোগী হয়ে যাওয়া লোকজন গ্রামে যাবেন। এমনিতেই ঢাকার বাইরে নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঈদের সময় যখন মানুষ ঢাকা ছাড়বে তখন তারা ‘রিজার্ভার’ হিসেবে কাজ করবেন। যদি এডিস মশা সেসব এলাকায় থাকে, তখন সেসব মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়াবে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ গানিয়া তহমিনা। ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণ সঙ্কট ॥ ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণ বা কীট সঙ্কট রয়েই গেছে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতেই কীট সঙ্কটের চিত্র ফুটে উঠেছে। আর জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে নামমাত্র থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কীটের সরবরাহ নেই বললেই চলে। এ বছর ডেঙ্গুর ধরন ও চিকিৎসা নিয়ে খোদ চিকিৎসকরাই হিমশিম খাচ্ছেন। জ¦রে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর এই সুযোগে যেকোন জ¦রে আক্রান্ত হলেই প্রেসক্রিপশনে ডেঙ্গু টেস্টের কথা লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসকরাও। ফলে হাজার হাজার মানুষ রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে। চিকিৎসকরাও ঝুঁকি না নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে দিচ্ছেন। এতে বাজারে টান পড়েছে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটের। কোন কোন পরীক্ষাগারে কিটের অভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা আপাতত বন্ধ আছে। আবার কোন পরীক্ষাগারে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রেখে কিট সংগ্রহ করার পর আবার পরীক্ষা শুরু করতে হচ্ছে বলেও জানা গেছে। কোন কোন জায়গায় রোগী ভর্তি না হলে পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। এমন সমস্যা বেশি দেখা গেছে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেই কিট সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে কিটের বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বেড়েছে দাম। হাসপাতাল ও পরীক্ষাগারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইউরোপ ও কোরিয়ায় তৈরি ভাল মানের একটি কিট যেখানে ৩২০-৩৫০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটি এখন ৫০০ টাকায় উঠেছে। চীনের তৈরি কিট ছিল দেড় শ’ টাকার মধ্যে। সেটা এখন ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিট সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে বলেন, গণহারে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসছে। জ¦রে আক্রান্তদের সকলেরই ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে না। লোকজন ভয়ে টেস্ট করাতে এসে থাকে। অথচ জ¦রে আক্রান্তের ডেঙ্গু শনাক্তের হার খুব বেশি না। জ¦রে আক্রান্তদের সকলেই টেস্ট করাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ায় সব জায়গায় কিটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে আমরা কিছু জোগাড় করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। ১৪৫ টাকার কিটের দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় কিটের সঙ্কট বেড়েছে বলে জানান ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া। এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কিট আমদানির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়টি মানুষ জানলেও এর যে গতি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন হচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতনতা নেই অনেকের। অনেক চিকিৎসকেরও এ বিষয়ে ভাল ধারণা নেই। ফলে সবাইর এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকা উচিত। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪)। সাধারণত একবার এক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময় আরেকটি দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারও হয়ত ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, কিন্তু ঠিক কোন্ টাইপের ডেঙ্গু তা শনাক্ত করা হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি টাইপিং বের করাটাও জরুঈ। না হলে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের ডেঙ্গুর অবস্থা তুলে ধরে অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ভাইরাসজনিত জ্বর ডেঙ্গু, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম -এই কয়েক ধরনের হয়। ক্লাসিক্যাল বা সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর হয়, যা ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জ্বর দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সঙ্গে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি বা গিঁটে ব্যথা, শরীরে র‌্যাশ থাকতে পারে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হলে তেমন সমস্যা নেই, এতে মৃত্যুর মতো ঘটনা সাধারণত ঘটে না। আর ডেঙ্গু হেমোরেজিকে জ্বর কমে যাওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল র‌্যাশ বা রক্তবিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাড়ি বা নাক দিয়ে আপনা-আপনি রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, কালো রঙের পায়খানা, ফুসফুসে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদি। রক্ত পরীক্ষা করালে দেখা যায়, রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি, যাতে শরীর থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের উপসর্গগুলোর পাশাপাশি রোগীর রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, হাত-পা শীতল হয়ে আসে, রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া উচিত। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত বা অণুচক্রিকাও দিতে হতে পারে। তবে সবার যে এমন হবে, তা কিন্তু নয়। ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ।
×