ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৫ আগস্ট ২০১৯

 লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জিলহজ মাসের ৩য় তারিখ। সৌদি আরবে একদিন আগে চাঁদ দেখার কারণে ৪র্থ তারিখ। আধুনিককালে ৭ম দিনটি মক্কা শরীফের হাজীদের কাছে অত্যন্ত ব্যস্ততম দিন হিসেবে পরিগণিত। এক সময় ৮ তারিখ সকালেই হাজী সাহেবরা মিনার উদ্দেশে রওনা দিতেন। বর্তমানে রওনা শুরু করেন ৭ তারিখ সন্ধ্যা থেকে। ৮ তারিখ রাতে প্রায় হাজী সাহেবান পবিত্র আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা দেন। পবিত্র হজের অনুষ্ঠানমালা ও আরাফা দিবস মুসলিম উম্মাহর এক সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর শান-শওকতের বহির্প্রকাশ ঘটে। মসজিদে নামিরায় যে খোৎবা উচ্চারিত হয় তাতে উম্মাহর ধমনিতে নতুন ইমানি শক্তির সঞ্চার হয়, বিক্ষিপ্ত উম্মাহ হয় সুসংহত। এ ছাড়াও বহু কল্যাণ, উপকারিতা এবং হিকমত হজের মধ্যে নিহিত রয়েছে। উল্লেখ্য, অষ্টম হিজরী সালে হুজুরে আকরামের (স.) মক্কা বিজয়ের পর নবম হিজরীর সময়-কালটা ছিল মুসলমানদের জন্য খোলামেলাভাবে হজের অনুষ্ঠানসমূহ পালন করার সর্বপ্রথম অবারিত সুযোগ। এ বছর হযরত মুহাম্মদ (স.) আপন সাহাবীদের সঠিক পদ্ধতিতে হজ করার শিক্ষাদান করে হযরত আবু বকরকে (রাদি:) তিনশ’ সাহাবীর নেতৃত্ব দিয়ে মক্কায় হজ করতে প্রেরণ করেন। ১০ম হিজরী সালে আঁ-হযরত (স.) নবগঠিত মদিনা রাষ্ট্র নিয়ে বেশ ব্যস্ত জীবন কাটান। এ বছরেই শেষের দিকে হজের সময় হলে হুজুর নিজে হজব্রত পালনের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন। হযরতের এ ঘোষণায়, তাঁর সঙ্গে হজে যাওয়ার ব্যাকুলতায় পুরো মদিনা শহরের লোকজন উদ্বেল-উম্মাতাল হয়ে ওঠে। তিনি রওনা হয়েছেন মক্কার পানে আর তাঁর সঙ্গে এসে মিশেছে লাখো জিয়ারতকারীর অগণিত কাফেলা। সে এক অপরূপ দৃশ্য। এখানে ধনী-নির্ধন কোন ভেদাভেদ নেই, নেই মুহাজির-আনসারদের মাঝে কোন পৃথকীচিহ্ন, সবাই তাওহীদবাদী মুসলমান, সাদা শুভ্র বসনে এক আল্লাহর ঘরের মেহমান, আর তাদের সঙ্গে আছেন আখেরি জামানার মহান পয়গাম্বর নূর নবী হযরত। ক্রমাগত এসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বরকতপূর্ণ এ কাফেলাটি মক্কার অদূরে জুলহুলাইফা নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করলেন। পরের দিন আবার কাফেলার যাত্রা হলো শুরু। আঁ হযরত (স.) উটের পিঠে আরোহণ করেই উচ্চস্বরে হজের বিশেষ দোয়া তালবিয়া পড়তে আরম্ভ করলেন। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, সম্মুখে পাহাড়-পর্বত আর অনন্ত বালুকারাশির মাঝখানে মনে হলো যেন চতুর্দিক থেকেই সমস্বরে তালবিয়ার প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক... হাজির হে মহামহিম প্রভু, হাজির তোমার দরবারে...। ইতিহাসে রয়েছে যে, মদিনা থেকে রওনা হলে একাধারে দশ দিন পথ চলার পর আখেরি নবী (স.) সফর সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা মোয়াজ্জামায় উপস্থিত হন। চোখের সামনে পবিত্র কাবা দেখতে পেয়ে নবী পাক (স.) পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে দুহাত উঁচু করে বলতে লাগলেন: হে রাব্বুল আলামীন, এ তোমার পবিত্র গৃহ, তুমি আপন রহমত ও মহিমায় এ ঘর উজ্জ্বল কর। আর সুখ শান্তি দান কর তাদের- যারা এই পবিত্র গৃহ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে হজ করার জন্য আগমন করে। তিনি কাবার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে সকলকে নিয়ে পবিত্র কাবা ঘর সাতবার তাওয়াফ করেন। এ সময় পবিত্র হজ দিবসের প্রাক্কালে কাবার চত্বর আবার মুখরিত হয়ে উঠলো। সাহাবিদের সম্মিলিত লাব্বাইক ধ্বনিতে। দীর্ঘকাল যেখানে পুতুল পূজার বেসারতি চলে আসছিল আজ তা আল্লাহু আকবার (আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ) ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে মুখরিতে হয়ে উঠছে বারবার, প্রতিক্ষণে। এভাবে এমনি দিনে আঁ হযরতের বিখ্যাত বিদায় হজের পবিত্র অনুষ্ঠানমালা চলতে থাকে। আজ যা আমরা একইভাবে আমল করে চলেছি।
×