ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টি২০তে ইনিংসের শেষ ওভারে মেডেন নিয়ে ঢুকে পড়লেন ইতিহাসে

সাইনির আলোকিত অভিষেক

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ৫ আগস্ট ২০১৯

সাইনির আলোকিত অভিষেক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৩ সাল পর্যন্ত কখনও ডিউক বল ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। দিল্লীর নেটে প্রথমদিন নভদীপ সাইনিকে দেখে চিনতে ভুল করেননি গৌতম গাম্ভীর। লিকলিকে শরীরে দুরন্ত গতির মাঝে ভবিষ্যত দেখা ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্করা তাকে ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপে বিরাট কোহলিদের নেট বোলার হিসেবে। সেই সাইনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করলেন। মার্কিন মুলুকের ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম টি২০তে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। যেখানে শেষ ওভারটি মেডেন নিয়ে ঢুকে গেছেন টি২০’র রেকর্ড বইয়েও। লো-স্কোরিং ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছুড়ে দেয়া ৯৬ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করে ৪ উইকেটের কষ্টের জয়ে ‘নায়ক’ হরিয়ানার হতদরিন্দ্র পরিবার থেকে উঠে আসা ২৬ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার। টি২০’র বিশেষজ্ঞ দল ক্যারিবীয়দের ৯৫/৯-এ থামিয়ে রাখার পথে অভিষিক্ত সাইনির বোলিং বিশ্লেষণ ৪-১-১৭-৩। তখনই চেতন চৌহান ও বিষেণ সিং বেদিকে আক্রমণ করে টুইট করেন গাম্ভীর। কারণ সাইনিকে দিল্লীর রঞ্জি দলে জায়গা দিতে বিরোধিতা করেছিলেন সাবেক দুই ভারতীয় তারকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আর আটকানো যায়নি। টুইটারে গাম্ভীর লেখেন, ‘অসাধারণ সাইনি, প্রথম ম্যাচেই এমন পারফর্মেন্স! সাইনি তুমি ভারতের হয়ে বল শুরু করার আগেই দুটি উইকেট তুলে নিয়েছ! বিষেণ সিংহ বেদি এবং চেতন চৌহানের মিডল স্টাম্প উড়ে গেছে! তুমি মাঠে নামার আগেই ওঁরা তোমার ভবিষ্যত বলে দিয়েছিল। লজ্জা!’ দরিন্দ্র পরিবারের সন্তান সাইনি হরিয়ানার ছেলে। চৌহান ও বেদি তাই তাকে দিল্লীর রঞ্জি দলে জায়গা দিতে চাইছিলেন না। কিন্তু গৌতম গাম্ভীরের সমর্থনে পাওয়া সুযোগ শতভাগ কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। আলোকিত অভেষেক ম্যাচে সাইনির মেডেনটি ছিল আবার ইনিংসের শেষ ওভারে। টি২০তে শেষ ওভারে মেডেন নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য এক কীর্তি। আন্তর্জাতিক টি২০তে সাইনির আগে এ অসাধারণ নজির দেখিয়েছেন মাত্র তিনজন বোলার। নিজের অভিষেক ম্যাচেই চতুর্থ বোলার হিসেবে এ তালিকায় ঢুকে গেছেন সাইনি। অথচ বছর ছয়েক আগেও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বল (ডিউক) ধরেও দেখেননি ভারতের উদীয়মান এ গতিতারকা। পাড়া-মহল্লায় টেপ টেনিস দিয়ে খ্যাপ খেলাই ছিল তার নেশা। বিনিময়ে প্রতি ম্যাচের জন্য পেতেন মাত্র ২০০ রুপী করে। সেই ডানহাতি পেসার সাইনিই এবার ৬ বছরের মাথায় খেলতে নামলেন ভারতের জাতীয় দলের হয়ে এবং প্রথম ম্যাচেই ঢুকে গেলেন অনন্য রেকর্ডে। মালাহাইডে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এদিন নিজের প্রথম তিন ওভারে ১৭ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছিলেন সাইনি। তাই তাকেই শেষ ওভারের জন্য ডাকেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তখন স্ট্রাইকে ছিলেন উইন্ডিজের ইনিংসকে একাই টানতে থাকা কাইরন পোলার্ড, খেলছিলেন ৪৯ রান নিয়ে। নিজের হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকা অবস্থায়ই শেষ ওভারের প্রথম দুই বল ডট খেলেন পোলার্ড। তৃতীয় বলে ধরা পড়েন লেগ বিফোরের ফাঁদে। সাইনির সে ওভারের পরের তিন বল থেকেও কোন রান করতে পারেননি ওশানে থমাস। যার ফলে ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০তে ২০তম ওভারে মেডেন দেয়ার রেকর্ড গড়েন সাইনি। টি২০তে ইনিংসের শেষ ওভারে মেডেন দেয়ার প্রথম ঘটনাটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। ২০০৮ সালের নিউজিল্যান্ডের অফস্পিনার জিতেন প্যাটেল প্রথমবারের মতো দেখিয়েছিলেন এ কীর্তি। শেষ ওভারে ক্যারিবীয়দের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৭ রান। সে ওভার করতে এসে কোন রান না দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন জিতেন। মজার বিষয় হলো এরপর নিউজিল্যান্ডের হয়ে আর টি২০ খেলা হয়নি এ স্পিনারের। বছর দু’য়েক পর ২০১০ সালের বিশ্ব টি২০তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ওভারে মেডেন নেন পাকিস্তানী পেসার মোহাম্মদ আমির। সে ম্যাচে আগে ব্যাট করেছিল অস্ট্রেলিয়া, ১৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রান করে ফেলে তারা। লক্ষ্য ছিল ২০০’র বেশি সংগ্রহ দাঁড় করানো। কিন্তু শেষ ওভার করতে এসে কোন রানই খরচ করেননি আমির, উল্টো ছয় বলের মধ্যে শেষের ৫ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে সবকয়টি উইকেটই আমিরের নয়। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রানআউট হওয়ায় হ্যাটট্রিক হয়নি তার। তবে শেষ ওভারে ৫ উইকেট পড়ার ঘটনাও বেশ সাড়া ফেলেছিল তখন। আর টি২০ ক্রিকেটে শেষ ওভারে মেডেন দেয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি চলতি বছরেরই। দুই সহযোগী দেশ কাতার ও সিঙ্গাপুরের মধ্যকার ম্যাচে এ কীর্তি গড়েন সিঙ্গাপুরের বোলার জানাক প্রকাশ। সাইনি এ তালিকায় চতুর্থ ক্রিকেটার।
×