ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাকিব-মুশফিকদের চুক্তি অবৈধ

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ৫ আগস্ট ২০১৯

 সাকিব-মুশফিকদের চুক্তি অবৈধ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বেশ কয়েকদিন আগেই আসন্ন সপ্তম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সেই মোতাবেক আগামী ৬ ডিসেম্বর বিপিএলের সপ্তম আসরের খেলা মাঠে গড়াবে। তবে সেই মাঠের লড়াইয়ে নামবে কোন দলগুলো তা এখনও নিশ্চিত নয়! কারণ নিয়ম অনুসারে আপাতত কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিরই অস্তিত্ব নেই। রবিবার বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের সংবাদ সম্মেলনের পর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। বিসিবির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম জানিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে ৬ আসরের জন্য চুক্তি ছিল। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে দলগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতায় নতুন করে পরবর্তী চারটি আসরের জন্য চুক্তি হবে। ইতোমধ্যেই চিটাগং ভাইকিংস সরে দাঁড়ানোয় তাদের জন্য এবং নতুন করে অষ্টম আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি পেতে বিসিবি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। যেহেতু কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিরই আপাতত নতুন চুক্তি নেই, সে কারণে যারা ইতোমধ্যে নিজ উদ্যোগে খেলোয়াড় নিয়েছেন তা বিপিএল আইন অনুসারে অবৈধ বলে জানিয়েছেন মাহবুব আনাম। অর্থাৎ সাকিব আল হাসান রংপুর রাইডার্সে, মুশফিকুর রহীম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে যাওয়ার চুক্তি অবৈধ। আগামী ডিসেম্বরে বিপিএলের সপ্তম আসর শুরু হবে। মাহবুব আনাম রবিবারের বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ঘোষণা অনুসারে ৬ ডিসেম্বরই সপ্তম বিপিএল শুরু হবে। আর সে কারণেই এবার আগেভাগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো দল গড়তে শুরু করে দিয়েছিল। টানা তিন মৌসুম ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলা সাকিবকে রংপুর রাইডার্স নেয়ার ঘোষণা দেয়। দলবদলের বাজারে জোর গুঞ্জন তামিম ইকবাল যাচ্ছেন খুলনা টাইটানসে, তার জায়গায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স নিশ্চিত করে মুশফিকুর রহীমকে নেয়া। ঢাকা ডায়নামাইটস দলে টেনেছে ইয়ন মরগানকে। রাজশাহী কিংস জেপি ডুমিনি, খুলনা টাইটান্স শেন ওয়াটসনকে নেয়ার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু এসব চুক্তিগুলো এখন বাতিল বলেই গণ্য হবে। কারণ বিপিএল পরিচালনা কমিটি বলেই দিয়েছে, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে চুক্তি ছিল ষষ্ঠ বিপিএল পর্যন্ত। এরপর নতুন চুক্তি করতে হবে সবাইকে। আর নতুন চুক্তির আগে কোন দলই একজন খেলোয়াড়কেও দলে টানার অধিকার রাখে না। অর্থাৎ ইতোমধ্যে দল বদলের যে খবরগুলো শোনা গেছে সবই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। যেহেতু ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে আপাতত বিসিবির চুক্তিই নেই, তাই বিপিএলে আপাতত কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির অস্তিত্বই নেই। গত আসরে যে ৭ দল খেলেছে তাদের মধ্যে চিটাগং ইতোমধ্যেই সরে দাঁড়িয়েছে। এবার একটি দল বাড়াতে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিসিবি এবং চিটাগংয়ের জন্যও ফ্র্যাঞ্চাইজি চেয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেক্ষেত্রে কেন বিসিবি নতুন করে সব ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়নি? বিসিবির পক্ষে মাহবুব আনাম জানালেন, অনেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে আগ্রহ জানিয়েছে। তাই বিপিএলে কেউ ফ্র্যাঞ্চাইজি রাখতে না চাইলেও সমস্যা হবে না। বরং এবার আটটি দল নিয়েই সপ্তম আসর হবে। মাহবুব আনাম বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে দলগুলোকে চিঠি দিয়েছি। চট্টগ্রাম তাদের মালিকানা ছেড়ে দিয়েছে। এর বাইরে আরেকটি দল আসতে পারে। সর্বোচ্চ আটটি দলকে নিয়ে চার বছরের চুক্তি হবে। দলের সংখ্যা কমও হতে পারে। আশাকরি এ মাসের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’ গত আসরের বাকি ৬ দলের সঙ্গে নতুন চুক্তির জন্য দু’য়েকদিনের মধ্যেই বসবে বিসিবি। সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম আসরের জন্য চুক্তি হবে। সেখানে এ ছয়টি দল থাকতে চাইলে সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। এ কারণেই কেউ খেলোয়াড় নিতে পারবে না, আবার গত আসরে খেলা কাউকে ধরেও রাখতে পারবে না। এবার সম্পূর্ণ নতুন করে প্রথম আসরের মতো করে খেলোয়াড় টানতে হবে চুক্তিবদ্ধ দলগুলোকে। এ মাসের মধ্যেই দলগুলো চূড়ান্ত করা হবে এবং তারপর উন্মুক্ত প্লেয়ার্স ড্রাফট ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গোছাতে হবে। আগ্রহী বিদেশী ক্রিকেটারদের ও দেশী ক্রিকেটারদের তালিকা দেবে বিসিবি প্লেয়ার্স ড্রাফটের জন্য। সাকিব, মুশফিক, মরগান, ডুমিনি, ওয়াটসনসহ যারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দলে গেছেন তা বাতিল হবে। তারাও প্লেয়ার্স ড্রাফটেই থাকবেন এমনটাই জানা গেল মাহবুব আনামের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘৬ মৌসুমের চুক্তি শেষে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে আমাদের নতুন চুক্তি হয়নি। তাহলে কিভাবে দলগুলো খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করে? কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি কার সঙ্গে চুক্তি করল সেটা আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না।’ ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরেই অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গে ছয় আসরের জন্য চুক্তি করেছিল বিসিবি। যারা দুই বছর আগেও ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে এসেছে তাদেরও মেয়াদ এই ষষ্ঠ আসর পর্যন্তই শেষ। এবার চার বছরের নতুন চুক্তি হলে বোঝা যাবে সপ্তম আসরে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে। মাহবুব আনাম আরও বলেন, ‘প্রতিটি দলকে বিসিবির সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। এরপরই দলগুলো খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। কেউ চাইলে দল গুছিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল সেটা বিবেচনা করবে না। দলগুলোর সঙ্গে চুক্তির পরই গবর্নিং কাউন্সিল সবকিছু আমলে নেবে।’ মাহবুব আনামের এ বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট যে, কেউ খেলোয়াড় ধরে রাখতেও পারছে না এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের আগে কেউ নতুন ক্রিকেটারকে দলেও নিতে পারছে না। পরবর্তী আসর থেকে আবার খেলোয়াড় ধরে রাখা এবং আগে ভাগে দল গোছানোর সুযোগ থাকবে।
×