ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবারও ইন্দোনেশিয়ান কোচ আমদানি ॥ ৩৫ ত্রুটির একটিরও সমাধান মেলেনি

প্রকাশিত: ০৯:১১, ৫ আগস্ট ২০১৯

 আবারও ইন্দোনেশিয়ান কোচ আমদানি ॥ ৩৫ ত্রুটির একটিরও সমাধান মেলেনি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ২০১৪ সালের চুক্তিতে ২০১৬ সালে ইন্দেনেশিয়া থেকে আমদানি করা ১০০ মিটারগেজ কোচ। কোচগুলো যাত্রীসেবার মাত্র দুই মাসের মাথায় ৩৫টি ত্রুটি ধরা পড়লেও সমাধান মেলেনি। এমনকি কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়নি ইন্দোনেশিয়ার ইনকা পিটি। অভিযোগ রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম চুক্তির ১৫০টি কোচ ট্রায়াল শেষে চলাচল শুরু করার মাত্র দুই মাসের মধ্যে বিভিন্ন ৩৫টি ত্রুটি দেখা দেয়। এই কোচগুলোতে ত্রুটির বিষয় জানিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয় ইন্দোনেশিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার মি. সুটোরো’র কাছে বিআর/এডিবি-২/৫০বিজি-এর ব্যাপারে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট । ত্রুটি সংশোধনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে এই প্রজেক্ট ম্যানেজারের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি ইনকা-বিআর-২/০০৮/২০১৭ প্রেরণ করা হয় ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট। ট্রেন চলাচলের মাত্র ২ মাসের মধ্যে প্রথমে ১৪টি ত্রুটি দেখিয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সরদার শাহদাত আলীর পক্ষ থেকে রেলের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এই প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে। ফলে রেল সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ বি এম ফজলে করিম এমপির সভাপতিত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ইন্দোনেশিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার বরাবর চিঠি লেখা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আর এস/ রোলিং স্টক) ও ইন্দোনেশিয়ার ইনকা পিটি ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে আর আগুস এইচ পুরনোমা। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা পি সোয়েমার্নো ও রেলের তৎকালীন মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনসহ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ। উল্লেখ্য থাকে যে, এর আগে ইন্দোনেশিয়ার এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের আরেকটি চুক্তিতে এক হাজার ৮২ কোটি টাকায় ১০০ মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ সরবরাহ করে। এই প্রকল্পের অর্থ এডিবি ৮০০ কোটি টাকা ও সরকার ২৮২ কোটি টাকা সরবরাহ করে। ২০১৬ সালে এসব কোচ সরবরাহ শেষ করে ইন্দোনেশিয়ার ইনকা পিটি। এদিকে, ৩৫টি ত্রুটি দেখা দেয়ার কারণে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট তারিখে ইন্দোনেশিয়ার ইনকা পিটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মি. সুটোরো বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০০ এমজি কোচের চুক্তি নং-বিআর/এডিবি/১০০ এমজি এবং ৫০ বিজি কোচের চুক্তি নং- বিআর/এডিবি/৫০বিজি ক্যারেজের আওতায় দুটি ঠিকাকার্য স্বাক্ষরিত হয় ২০১৪ সালের ২৭ নবেম্বর। এই দুটি চুক্তির আওতায় আসা ১৫০ ইন্দোনেশিয়ান কোচ প্রত্যেকটিতে প্রায় ৩৫ ধরনের ত্রুটি রয়েছে। এসব ত্রুটির মধ্যে রয়েছে টয়লেটে ত্রুটি রয়েছে কমোড, বেসিন, দরজা ও ফ্লোরসহ নয়টি সমস্যা। কোচের দরজা, বডি, জানালা ও কোচের ভেতরে সমস্যা রয়েছে ১২টি। এসি ও ননএসি বার্থগুলোতেও সিট ও টেবিল এমনকি লকগুলোসহ আটটি সমস্যা রয়েছে। বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুত সরবরাহে নয়টি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এসিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। এসি কোচের ভেতরে বাতাসের শব্দ ও চাকার শব্দ পাওয়া যায়। এছাড়াও এসির কম্প্রেসারের শব্দে অনেক সময় মাথাব্যথা করে যাত্রীদের। এদিকে, নন এসি কোচের জানালায় এ্যালুমিনিয়াম সাটার নেই। এছাড়াও প্রত্যেক সিটের সামনে থাকা বোতলের খাঁচা ছোট, তরল সাবানের বোতলের সুইচ কাজ করছে না ও টয়লেট টিস্যু হোল্ডার মান সম্মত নয়। দুটি কোচের মধ্যে ভেতরে চলাচলের জন্য স্থাপিত গ্যাংওয়ে ব্রিজে যাত্রীদের হোঁচট খাওয়ার উপক্রম, বার্থের ভেতরে ওপরের সিটে উঠার সিঁড়িটি ভুল লাগানো হয়েছে, বার্থের ভেতরে লাগানো লুকিং গ্লাসগুলো নিম্নমানের ও প্লাস্টিকের স্ক্রু দিয়ে লাগানোর ফলে ২ মাস যেতে না যেতেই অনেক গ্লাস ফ্রেমসহ খুলে পড়ছে। টয়লেটের সাইজ ছোট, হাই কমোডের ফ্ল্যাশ সিস্টেম ভাল নয়, টয়লেটের দরজায় দেয়া ইন্ডিকেটর কাজ করে না, টয়লেটের কর্নার বেসিনটি লাগানো হয়েছে গ্লু বা গাম দিয়ে, প্যান কমোডের মেঝের ড্রেইন পাইপটি সরু হওয়ার কারণে মেঝেতে সহজে টয়লেটের পানি নির্গত হয় না, প্রতিবন্ধীদের টয়লেটের দরজা নড়ে গেছে, হাই কমোডের পানির ছিটকা গায়ে পড়ে, নামাজ কক্ষের পাশে অজুখানা নেই। প্রকল্প পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি স্টিলবডির যাত্রীবাহী মিটারগেজ কোচ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। ঢাকার রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার ইনকা পিটি ইন্ডাস্ট্রি কারিটা এপিআই (পার্সিরো)। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ৭৩ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা ৫৭৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রত্যেকটি কোচের দাম পড়েছে প্রায় ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে চুক্তিতে ২০ হতে ৩৩ মাসের মধ্যে কোচ সরবরাহের কথা ছিল। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে।
×