ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় শোক দিবসের বিশেষ নাটক ‘মৃতের আত্মহত্যা’

প্রকাশিত: ১২:৪২, ৪ আগস্ট ২০১৯

জাতীয় শোক দিবসের বিশেষ নাটক ‘মৃতের আত্মহত্যা’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশের জন্য রক্তে রঞ্জিত সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডির দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এইদিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ক্ষত-বিক্ষত হয় বাঙালীর হৃদয়। খানখান ভগ্ন হৃদয়ের রক্তক্ষরণে সমগ্র জাতি মৃত মানুষের মতো নীরব, নিস্তব্ধ, নিস্তেজ ও চলতশক্তি হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন আবুল ফজল তার অপূর্ব সৃষ্টি ‘মৃতের আত্মহত্যা’ গল্পের মূল চরিত্র সোহেলীর মধ্য দিয়ে। এটা ইতিহাসের বর্ণনানির্ভর কোন গল্প নয়। তবে ইতিহাসের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পরিণতিতে দগ্ধ, পীড়িত ও ক্ষুব্ধ হওয়া একজন নারীর করুণ বিয়োগান্তক ঘটনার হৃদয়ফাঁটা চিত্রায়ন। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তার মধ্য থেকে বিদেশে পালিয়ে থাকা একজন খুনীর স্ত্রী, গল্পের নায়িকা সোহেলীর চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালী জাতির দগ্ধ প্রাণের পরিস্ফুটন ঘটিয়েছেন আবুল ফজল। এ বছর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা নিবেদনকল্পে একুশে টেলিভিশনের নিজস্ব প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে বিশেষ নাটক ’মৃতের আত্মহত্যা’। নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন মাসুম রেজা এবং পরিচালনা করেছেন গোলাম সোহরাব দোদুল। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিন জাহান, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুষমা সরকার, মাস্টার তূর্য ও একটি বিশেষ চরিত্রে ইরেশ যাকের। নাটকটি আগামী ১৫ আগস্ট রাত ১০টায় একুশে টেলিভিশনে প্রচার হবে। ‘মৃতের আত্মহত্যা’ নাটকের গল্পের মূল চরিত্রের নাম সোহেলী। সে এমন একজন লোকের স্ত্রী যে ১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়ের অন্যতম নিষ্ঠুর হত্যাকারী, নাম ইউনুস। সোহেলী দশ বছরের একমাত্র ছেলে বকুলকে নিয়ে স্বামী ইউনুসের সঙ্গে বিদেশে নির্জন মরুভূমিতে পলাতক জীবনযাপন করছে। এই হত্যাকারীদের আরেক নিষ্ঠুর ঘাতক রাকিব। সেও স্ত্রী আফরোজাকে নিয়ে মরুভূমির দেশে পলাতক। ইউনুস ও রাকিব দু’জনেই ১৫ আগস্টের হত্যাকারী। নির্দোষ স্ত্রীদ্বয় ও শিশুটি কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও স্বামীদের অপরাধের কারণে পরভূমে দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে। আফরোজা মেনে নিতে পারলেও সোহেলী কোনভাবেই স্বামীর এই নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা- মেনে নিতে পারেনি। ১৫ আগস্টের রাতে সোহেলীর স্বামী ইউনুস শুধু জাতির জনককেই হত্যা করেনি, হত্যা করেছে বঙ্গমাতাসহ পুরো পরিবার, নিষ্পাপ ছোট্ট শিশু এবং হাতে সদ্য মেহেদী রাঙানো দুইজন নববধূকে। তাই সেদিনের পর থেকে প্রায়ই স্বামীর রক্তস্রাত চেহারা বারবার সোহেলীর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তখন সে নিজেকে স্থির রাখতে পারে না। সোহেলীর কাছে মনে হয় ১৫ আগস্টে তারও মৃত্যু হয়ে গেছে, জ্যান্ত মানুষের মতো চলাফেরা করলেও তার হৃদয়, মন, আবেগ, অনুভূতি সবকিছু মরে গেছে। স্বামীর একান্ত ডাকেও তার মন, হৃদয় আর সাড়া দেয় না। সোহেলী বেঁচে থাকা আর না থাকার মাঝে কোন পার্থক্য খুঁজে পায় না। তাইতো জাতির পিতার হন্তাকারক স্বামীর কোন প্রভাব যেন সন্তানের ওপর না পড়ে তার জন্য পাঁজড়ভাঙ্গা বেদনার মধ্য দিয়ে ছেলে বকুলকে নিজ বাবা-মায়ের কাছে দেশে পাঠিয়ে দেয়। তারপর শেষ সিদ্ধান্ত নেয় সোহেলী, বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ, আর এর মধ্য দিয়ে ঘটে ‘মৃতের আত্মহত্যা’।
×