ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ

শিশুর দুধপানে ঘাটতি অসঙ্গতি দূর করা গেলে সাফল্য অর্জন সম্ভব

প্রকাশিত: ১২:০৯, ৪ আগস্ট ২০১৯

শিশুর দুধপানে ঘাটতি অসঙ্গতি দূর করা গেলে সাফল্য অর্জন সম্ভব

সমুদ্র হক ॥ শিশুকে মায়ের বুকের দুধ (মাতৃদুগ্ধ) পান করানোর ঘাটতিগুলো দূর না করায় এখন শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশ জনমিতিক স্বাস্থ্য জরিপে এই হার ৬৫ শতাংশ। ২০১১ সালে ছিল ৬৪ শতাংশ। একটি পর্যায়ে গিয়ে থমকে আছে। এগোচ্ছে না। এরপরও বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে এখনও সন্তোষজনক নয়। জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্মসূচী জানিয়েছে, ঘাটতি ও অসঙ্গতিগুলো দূর করা গেলে শিশুর মায়ের বুকের দুধ পানের হার ৯০ শতাংশে পৌঁছানো সম্ভব। শিশু (নবজাতক) জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান শুরু করে টানা ছয় মাস শুধুই মায়ের বুকের দুধ এবং দুই বছর বুকের দুধের পাশাপশি হালকা নরম খাবার দিলে শিশু মৃত্যু হার অনেক কমে যাবে। জন্ম থেকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে অনেক শিশু নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বুকের দুধ পায় না। এ জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা যায়নি। প্রতিবছর ১-৭ আগস্ট মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহে দায়সারা গোছের সচেতনতা চলে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে মাতা পিতাকে উৎসাহিত করুন’। ইউনিসেফ (জাতিসংঘ শিশু তহবিল) সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জরিপ করে দেখেছে দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেই হারে ডে-কেয়ার সেন্টার (দিবা যতœ কেন্দ্র) নেই। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর মাতৃকালীন ছয় মাস ছুটির নিয়ম চালু আছে। কাজে ফেরার পর সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন শিশুকে বুকের দুধ পান করা নিয়ে। কারণ কোন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার সেন্টার নেই। ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে নারী পুরুষের আয় সমতায় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে যেতে শিশু দিবাযতœ কেন্দ্রের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গর্ভবতী মা সন্তান ভূমিষ্ঠের সম্ভাব্য তারিখের দুই মাস বা এক মাস আগে মাতৃকালীন ছুটি শুরু করতে পারেন। ভূমিষ্ঠের পর ছুটির ৪ বা ৫ মাস নবজাতককে সময়মতো বুকের দুধ পান করানোর সঙ্গে পরিচর্যা করতে পারেন। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে। নবজাতককে ঘরে রেখে আসতে হয়। সময়মতো বুকের দুধ পায় না। মা নিজে বিশেষ ব্যবস্থায় বুকের দুধ নির্দিষ্ট পাত্রে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারেন। পরে সময়মতো শিশুকে পান করানো হয়। এই ব্যবস্থা দেশে এখনও প্রচার পায়নি এবং চালু হয়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানী ঢাকায় কিছু পরিবার এভাবে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণ করে শিশুকে পান করাচ্ছেন। এক শ’ বিলিয়ন নিওরন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর মেধার বিকাশ ৮০ শতাংশ ঘটে তিন বছরের মধ্যে। এই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে স্বজন না থাকলে দিনের বড় একটা সময় শিশুকে কাটাতে হয় গৃহকর্মীর (কাজের বুয়া) কাছে। ঢাকাসহ প্রতিটি শহরের বাসা বাড়িতে বিশ্বস্ত গৃহকর্মী পাওয়া কঠিন। ঘরের একেকটি কাজের জন্য তাদের আলাদা রেট। গৃহকর্মীর কাছে সন্তান রেখে আসা কতটা নিরাপদ এ নিয়েও ভাবতে হয়। অনেকে পাশের বাড়ির পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে শিশুকে রেখে আসেন। এমনই অবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠছে এ প্রজন্মের শিশু। বর্তমানের শিশুরা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বা একক পরিবার বেড়ে উঠছে। ¯েœœহ মমত্ব বিমুখ হয়ে একাকিত্বের মানসিকতায় (ইন্ট্রোভার্ট) নিজেকে তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছে। সূত্র জানায়, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বাড়িভাড়া করে ৫০টি দিবাযতœ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। বছর চারেক আগে কয়েকটি ব্যাংক ঢাকার মতিঝিলে একটি পরে কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক যৌথ উদ্যোগে মতিঝিলে আরেকটি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র গড়ে তোলে। শ্রম আইনে বলা আছে যে প্রতিষ্ঠানে ৪০ বা ৪০’র বেশি নারী কর্মরত আছে সেই প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের সুযোগ-সুবিধাসহ সুপরিসর এক বা একাধিক উপযুক্ত কক্ষ থাকতে হবে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ নারী কর্মরত আছে পোশাক শিল্পে। সেখানে কোন শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এক সূত্র জানায়, ব্যক্তি মালিকানায় ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদফতর আইনের খসড়া তৈরি করেছে। বলা হয়েছে, শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র বিষয়টি স্পর্শকাতর। নজরদারির মধ্যে লাইসেন্স দিতে পারে মন্ত্রণালয়। বেসরকারীভাবে এ ধরনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ গড়ে তুললে অথবা কেন্দ্রে কোন ধরনের অনিয়ম হলে আইনী ব্যবস্থাও নেয়া যাবে।
×