ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি

প্রকাশিত: ১২:০৩, ৪ আগস্ট ২০১৯

বিশ্ব আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংগ্রামের মাধ্যমেই আদিবাসীরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আদিবাসীদের অধিকার আদায় ও সমস্যা সমাধানে কোন সরকারই আন্তরিক নন। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সব সময়ই আদিবাসীদের প্রতি বৈরি মনোভাব কাজ করে। বাংলাদেশে আদিবাসীদের মানবিক পরিস্থিতি ভাল নয়। তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে শনিবার রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন সন্তু লারমা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং , আইইডির নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নুমান আহমদ খান, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট এক্সপার্ট মেম্বার জান্নাতুল ফেরদৌসি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ, খাসিয়া নেতা এন্ড্র সুলেমার প্রমুখ। ৯ আগস্ট জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। পবিত্র ঈদ-উল-আজহার কারণে এবছর দিবসটির মূল অনুষ্ঠান আগামী ৫ আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পালন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘আদিবাসী ভাষা চর্চা এবং সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন ’। মূল বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের সভাপতি এক সময়কার পাহাড়ের গেরিলা নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করাই হলো আদিবাসী দিবস উৎযাপনের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশে এই কাজগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের দরুন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিবস পালিত না হওয়ার আক্ষেপ ও দুঃখের বহিঃপ্রকাশও করেন পাহাড়ের এই নেতা। সন্তু লারমা আরও বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এবং ‘পপুলেশন ট্রান্সফার’ ও ক্রমাগত উচ্ছেদের ফলে নিজ ভূমি থেকে বাস্তুচূত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, গাজীপুর, মধুপুর বনাঞ্চল, পটুয়াখালী-বরগুনা, খাসিয়া অঞ্চলে সর্বত্র আদিবাসীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আদিবাসীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা এখন আত্মপরিচয়, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই গেরিলা নেতা। এছাড়া মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নৃ-ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় পাওয়া ১৪ বিপন্ন ভাষার কথা উল্লেখ করেন সন্তু লারমা বলেন, খাড়িয়া, কোড়া, সৌরা, মু-ারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও পাত্র ভাষা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে । রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং এই ভাষা চর্চাকারী মানুষদের সংখ্যা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের ক্রমাগত বঞ্চনার ফলেই এই বেহাল দশা বলেও অভিযোগ আদিবাসী ফোরামের সভাপতির। আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট এক্সপার্ট মেম্বার জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার। এই চেতনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক রূপকে ফুটিয়ে তোলার জন্য আদিবাসীদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমদ খান বলেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে কর্তব্য ছিল আর বর্তমান আদিবাসীদের যে হাহাকার বাস্তবতা বেশ বিপরীত। এসডিজির চলমান স্লোগান ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এই নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে প্রান্তিক আদিবাসী জনগণকে উন্নয়নের আলোয় নিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। সকল আদিবাসীর ভাষা ও পরিচয়কে স্বকিৃতি দানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়নেরও দাবি জানান তিনি। দিবসটির কয়েকদিনের কর্মসূচী তুলে ধরে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে ৪ আগস্ট সকাল দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আলোচনা সভা, ৫ আগস্ট সকাল দশটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে প্রতিবছরের ন্যায় সমাবেশ, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ৭ আগস্ট সকাল দশটায় ঢাকার ডব্লিউ ভি.এ মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের যৌথ আয়োজনে আদিবাসী নারী বিষয়ক সেমিনার, ৯ আগস্ট বেলা দুটায় বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় ছাত্র সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ২৭ আগস্ট এএলআরডি ও দশটির অধিক সংগঠন মিলিতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিয়ে সেমিনার আয়োজন করবে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে।
×