ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদীয় কমিটির আলোচনায় কোন অনুসন্ধান কূপ নেই

বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রেই উন্নয়ন কূপ খননের নতুন পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১১:১১, ৪ আগস্ট ২০১৯

বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রেই উন্নয়ন কূপ খননের নতুন পরিকল্পনা

রশিদ মামুন ॥ টানা ব্যর্থতার মধ্যে আবার বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রেই উন্নয়ন কূপ খনন করার নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। স্থলভাগে নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন করা এর মধ্য দিয়ে থমকে গেল। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আলোচনায় ২০২৩ সাল মেয়াদী যে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে কোন অনুসন্ধান কূপ নেই। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০০৯ সালের পর দেশে জ্বালানি সঙ্কট শুরু হলে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। তখন বিদ্যমান গ্যাস খনিতে কূপ খনন করে সঙ্কট সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ অনুসন্ধান কূপে ব্যর্থ হওয়ার পর পুরাতন পরিকল্পনা গত বছর বাতিল করে দেয় জ্বালানি বিভাগ। তবে এখন যে নতুন পরিকল্পনার কথা বলছে তারা তাতে কোন অনুসন্ধান কূপ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী পাঁচ বছর পর যদি একেবারেই অনুসন্ধান কূপ খনন না করা হয় সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরও বিপাকে পড়তে হতে পারে। জ্বালনি বিভাগ সংসদীয় কমিটিতে যে পরিকল্পনা জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে ২০১৩ সাল নাগাদ ছয়টি কূপের ওয়ার্ক ওভার করা হবে। কূপগুলো হচ্ছে সিলেট-৮, কৈলাসটিলা-৭, বিয়ানীবাজার-১, শ্রীকাইল-৪, ফেঞ্চুগঞ্জ-৩ এবং ৪। এছাড়া ছয়টি মূল্যায়ন এবং উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে। কূপগুলো হচ্ছে সিলেট-৯, তিতাস-২৮, তিতাস-২৯, বেগমগঞ্জ-৪ ভোলা (উত্তর)- ২ এবং ৩। জ্বালানি বিভাগ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আগামী কয়েক বছরে বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন স্বাভাবিক নিয়ম কমবে। এর বিপরীতে নতুন গ্যাস প্রাপ্তির জন্য অনুসন্ধান উন্নয়ন জোরদার করার কথা বলা হলেও ওই প্রতিবেদনে কোন অনুসন্ধান কূপ নেই। গত ১০ বছরে গড়ে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে বাপেক্স। এর মধ্যে ছয়টিতে অনুসন্ধান কূপেই ব্যর্থ হয়েছে বাপেক্স। দুটিতে সামান্য গ্যাস পেয়েছে অবশ্য এর মধ্যে দুটি খনিতে ভাল মজুদ পাওয়া গেছে। তবে গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে দুটিতেই ব্যর্থতার পর বাপেক্সকে আবার বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন বাপেক্স এর থেকে কারও কারও বিদেশী কোম্পানির প্রতি ঝোঁক বেশি। যেখানে কম সম্ভাবনার সেখানেই বাপেক্সকে বলা হচ্ছে কূপ খনন করতে আর যেখানে গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে খনন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ প্রকাশ্যে অনেক বছর ধরেই চলছে। বাপেক্স যেহেতু সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না কেবল নির্দেশ মতো কাজ করে তাই বাপেক্সের ওপর এককভাবে এই দায় চাপানো যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, একটি বিদেশী কোম্পানির খনন করা গ্যাস কূপ বুঝে পেতে গিয়ে বাপেক্সকে নানাভাবে বেগ পেতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। জ্বালানি বিভাগের এই পরিকল্পনা বলছে, মুখে অনুসন্ধানের কথা বলা হলেও গ্যাস অনুসন্ধানে খুব একটা মন নেই জ্বালানি বিভাগের। গত বছর নবেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদা-৪ এবং কসবা-১ কূপে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পায়নি বাপেক্স। সরকারের দাবি, দেশে গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য মজুদ রয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ টিসিএফ-এর মধ্যে ১৬ দশমিক টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ১১ টিসিএফের মতো। পেট্রোবাংলার হাইড্রোকার্বন ইউনিট গত বছর এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের সব বড় ক্ষেত্রের গ্যাস শেষ হবে। তাই সরকার প্রাথমিকভাবে জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। বিকল্প হিসেবে সরকার জ্বালানি আমদানি করছে। সংসদীয় কমিটিতে দেয়া প্রতিবেদনে বলছে দেশে গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়াতে ১১টি কূপের মুখে কম্প্রেসার স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ গ্যাসের চাপ কমে যাওয়াতে ওই কূপের অভ্যন্তরে চাপ সৃষ্টি করে গ্যাস তুলতে হবে। এটি একটি গ্যাস কূপের শেষ ধাপ। এরপর আর ওই কূপ থেকে কোন গ্যাস পাওয়া যাবে না।
×