ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কথা কম বলে বেশি বেশি কাজ করতে হবে ॥ ও. কাদের

প্রকাশিত: ১১:১০, ৪ আগস্ট ২০১৯

কথা কম বলে বেশি বেশি কাজ করতে হবে ॥ ও. কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা নয়; বিএনপি যে সঙ্কটে আছে তা থেকে দলটিকে উদ্ধার করার জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে অতি কথা দেশের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনতে পারে। তাই ডেঙ্গুর অত্যন্ত সংবেদনশীল এ সময়ে অতিকথন থেকে দলের দায়িত্বশীলদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে সারাদেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের নিয়ে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ সেল ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা, শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, কোন অবহেলা হচ্ছে কিনা, এসব বিষয় দেখবে বলে জানান। শনিবার রাজধানীর ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে বেলা সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগের ডেঙ্গু প্রতিরোধ, পরিচ্ছন্নতামূলক অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কর্মকা-ের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচীর শেষদিনে ওবায়দুুল কাদের এসব কথা বলেন। এদিকে রবিবারের মধ্যেই মশার নতুন ওষুধের নমুনা পৌঁছবে ও খুব দ্রুত এ ওষুধ দুই ধাপে পরীক্ষা করে মশা মারতে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের তিন দিনের দলীয় কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, আহমদ হোসেন, মেজবা উদ্দিন সিরাজ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ডেঙ্গু আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সময় অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা কথা কম বলব, কাজ বেশি করব। এই সময় অতি কথা দেশের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনতে পারে। তিনি অতিকথন থেকে দায়িত্বশীলদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কথা কম বলে আমাদের বেশি বেশি করে কাজ করতে হবে। মানুষকে বাঁচাতে হবে, আতঙ্ক থেকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ডেঙ্গু নিয়ে রাজনীতি করছে। তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে নেই, ভয়াবহ অবস্থায় থাকা বন্যার্তদের পাশে নেই। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে কোথাও তারা নেই। দল হিসেবে বিরোধী দলেরও এখানে দায়িত্ব আছে। তারা কখনও বলে মহামারী ঘোষণা কর, কখনও বলে জরুরী অবস্থা ঘোষণা কর। জরুরী অবস্থা তাদের দরকার, যারা জরুরী সঙ্কটে আছে। এ নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। ‘শেখ হাসিনার নির্দেশ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ স্লোগানেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশকে সম্পূর্ণ ডেঙ্গুমুক্ত ও নির্মূল না করা পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান চলবে। অভিযান সফল করতে তিনি সমাজের সকল স্তরের লোকের পাশাপাশি দলীয় সকল নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল হিসেবে ব্যর্থতার দগদগে ঘা যাদের, যারা নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ, গত দেড় বছরে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেড় মিনিটও আন্দোলন করতে পারেনি। বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণে ব্যর্থ। দেশের মানুষ কাজ চায়, দেশের মানুষ নাম চায় না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সেল গঠন করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত না পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ, ডেঙ্গু মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব ততদিন আমাদের লড়াই চলবে। সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করে ঈদে বাড়ি যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা মহল আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, যেন ঈদের সময় বাড়িঘরে না যায়। আপনার বাড়িঘরে আপনি কেন যাবেন না? সবারই ইচ্ছা আছে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার। সবাই বাড়ি যাবেন, কিন্তু সতর্ক থাকবেন। এটা হলো আমাদের অনুরোধ। ডেঙ্গু সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মূলত যারা কাজ করে না, তারাই আজ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যারা বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ায় না, তারাই বন্যাদুর্গতদের নিয়ে রাজনীতি করে। যত দোষ নন্দ ঘোষ, সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপায়। অথচ তারা কিছুই করে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মনিটরিং সেল করা হচ্ছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসকদের দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করছে আওয়ামী লীগ। ডেঙ্গু ও এডিস মশা প্রতিরোধকে একটা লড়াই হিসেবে নিয়েছি আমরা। মনিটরিং সেল নিয়ে মন্ত্রী বলেন, শুক্রবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়েছে। সারা বাংলাদেশে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। সারা দেশের সর্বত্রই এই মনিটরিং সেল ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা, শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ঠিকমত হচ্ছে কিনা, কোন অবহেলা হচ্ছে কিনা, এসব বিষয় দেখবে। অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে দিনরাত কাজ করছি। রবিবারের মধ্যেই মশার ওষুধের নমুনা এসে পৌঁছবে। এসব ওষুধ সাধারণত দুই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়। একটি ফিল্ড টেস্ট অপরটি ল্যাব টেস্ট। প্রথমে ফিল্ড টেস্ট করে পরে ল্যাব টেস্ট করব। এরপরই এসব ওষুধ কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হলে ও পরিবেশবান্ধব হলেই কেবল আমরা মশা মারতে এই নতুন ওষুধ ব্যবহার শুরু করব। কারণ ডোজ বাড়িয়ে দিলেও এসব ওষুধের একটা সাইড ইফেক্ট রয়েছে। যার প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। কবে নাগাদ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সময় নির্ধারণ না করা গেলেও আশা করি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেই নতুন ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। আতিকুল ইসলাম বলেন, মূলত ডেঙ্গু রোগী একবার দেখছি বাড়ছে অন্যবার দেখছি চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছেন। তবে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভারতের ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা নেতৃবৃন্দ ও অভিজ্ঞদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজেদের মতামত বিনিময় করব। কিভাবে অতি দ্রুতই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার সবকিছুই করা হবে। এক সময় চিকুনগুনিয়া ছিল মোকাবেলা করেছি, এখন ডেঙ্গু এসেছে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপের রকমও অনেক পাল্টেছে। তাই সবার সচেতনতার মাধ্যমেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
×