ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৪ আগস্ট ২০১৯

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ অসুন্দর ও অত্যাচারীর বিনাশ করিতে যারা/ জন্ম লয়েছে চির নির্ভীক যৌবন মাতোয়ারা/ তাহাদেরি শুধু আছে অধিকার ঈদগাহে-ময়দানে/ তাহারাই শুধু বকরিদ করে জানমাল কোরবানে- নজরুল। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহা বছর পরিক্রমায় আবার এসে হাজির। মাঝখানে আর কয়েকদিন বাকি এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার। কিন্তু ঈদের নানা আয়োজন ও প্রস্তুতি সারতে সারতে কখন যে এদিনগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে টেরই পাওয়া যাবে না। এরই মধ্যে এখন পবিত্র হজেরও সমস্ত পালা-প্রস্তুতি চূড়ান্ত। কদিন পর থেকে এ অনুষ্ঠানমালা সুসম্পন্ন হবে নবীর দেশের মক্কা নগরীতে। আরবী জিলহজ মাসের আজ দ্বিতীয় তারিখ। সে হিসেবে ইতোমধ্যে আমরা আরও এগারোটি মাস অতিক্রম করে এসেছি। কোরান শরিফের মর্মবাণী অনুযায়ী আরবী মাসের ক্রমবিন্যাস অতি প্রাচীন ও মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছারই প্রতিফলন। এ মাসগুলোর ক্রমধারা ওলট-পালট করাকে কোরানের তীব্র ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। ইসলাম পূর্বযুগে আরব গোত্র ও ধর্মগুলো এ ওলট-পালটে বেশ ওস্তাদ ছিল। আর সে সুবাদে তারা পবিত্র মাসে নানা কুকর্মে লিপ্ত হতো। ধর্মীয় বিধিনিষেধগুলো হয়ে পড়ত অগোছালো। তাই ইসলামের প্রচার-প্রসারের পর আরবী মাসের পরিবর্তন চিরতরে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কারণ হলো, গোটা বিশ্বের সমমনা মানুষের মধ্যে আনন্দ-খুশি, ত্যাগ-তিতীক্ষায়, ইবাদত-বন্দেগী, জীবন-জীবিকায় একটি সমতার রেখাপাত টানা ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করা। সর্বোপরি আল্লাহর দেয়া বিধিবিধান পালনে অভিন্ন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এর লক্ষ্য। আমরা দেখি, মহররম থেকে প্রতিটি মাসে মুসলমানদের জীবনে কতিপয় নির্দিষ্ট করণীয় রয়েছে। ওসব মানতে তারা বদ্ধপরিকর এবং এ সবই তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় আদর্শ, পরিচিতি। এসব ধারাবাহিক পালা-পার্বন আদায়পূর্বক একজন মুসলমান স্রষ্টার নৈকট্য লাভে সমর্থ হয়। আরবী বা হিজরী সনের শেষ মাসে রয়েছে হজ ও কোরবানি। এ দুটো অনুষ্ঠানে ঘটে মুসলমানদের জাগরণ ও ত্যাগের বহির্প্রকাশ। মুসলমানদের চিত্তপরিশুদ্ধ করে তোলে হজ ও কোরবানি। হজের ব্যাপারে বলা হয়েছে : এটি তাদের এমনভাবে নির্মল নিষ্কলুষ করে কা-ইয়াওমিন ওয়ালাদাতহু উম্মুহু... যেমন কাউকে তার মা জননী ভূমিষ্ঠকালীন দিনে (নিষ্পাপভাবে) জন্ম দেয়। (আল হাদীস)। কোরবানি সম্পর্কে আঁ-হযরত (সা) ইরশাদ করেছেন : এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের সুন্নাত-কোরবানির মৌসুমে আল্লাহর কাছে কোরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন জিনিস নেই। অন্যত্র বলা হয়েছে, ইন্নামাল আ’মালু বিল খায়াতিন-‘সব ভাল তার শেষ ভাল যার।’ (আল হাদীস)। বছরের এ সমাপনী দিনগুলোতে আমরা নিজেকে কতটুকু কর্তব্যনিষ্ঠ ধর্মপরায়ণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি তা-ই বিবেচনায় আনার বিষয়।
×