ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফল

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৪ আগস্ট ২০১৯

আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, এ বছর কোন ঋতুতেই আবহাওয়ার আচরণ স্বভাবিক ছিল না। এখনও নেই। তারা বলছেন, এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে এডিস মশাসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ বেড়ে যাওয়ার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ষা শুরুর আগে এডিস মশার যে সংখ্যা ছিল বর্ষা শুরু হওয়ার পর তা ছয়গুণ বেড়ে গেছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবেই এডিস মশার মতো নানা ধরনের কীটপতঙ্গের অস্বাভাবিক প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এদিকে শনিবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৯১৯ জনে দাঁড়িয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১ হাজার ৬৪৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীর শনাক্তের হার গত ২ দিনে কিছুটা হলেও কমেছে। এখনও তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু ১৮ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জনকণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর হার বাড়ছে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ৬৮০ জন। গত চারদিনে মাদারীপুরে চার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এবারের বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত নেই। কিন্তু শীত শেষে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই ধরনের উল্টাপাল্টা আবহাওয়ার কারণে এবারে এডিস মশার মতো কীটপতঙ্গের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘ডেঙ্গু, জনসংখ্যা ও আমাদের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছেÑ গত দশকে দেশে সাড়ে ৩২ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। যেখানে চলতি বছরই প্রায় ২৩ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে গত দশ বছরে দেশে ডেঙ্গুজ্বর বেড়েছে নয় গুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি ডেঙ্গুর লাগাম টেনে ধরা না যায় তবে দ্রুতই এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করবে। ডেঙ্গুরোগের বিস্তৃতির প্রধান কারণ হিসেবে তারা বলছেনÑ সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার অভাব, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং নগর উন্নয়ন আইনের বাস্তবায়নসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা। সেই সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তারে পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে বলে তারা জানান। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এসএম মিজানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের আবহাওয়া যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে, বৃষ্টির মৌসুম যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তার সঙ্গে এডিস মশাসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ বেড়ে যাওয়ার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বৈশ্বিক এই উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে উষ্ণম-লীয় এবং অ-উষ্ণম-লীয় যেসব পোকামাকড়, তাদের প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে। গরমের সময়টা যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে মশা বা কীটের জীবনকালে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। প্রজননকাল দীর্ঘ হচ্ছে। সাম্প্রতিক বর্ষা আসার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হচ্ছে। বর্ষা যত দীর্ঘ হচ্ছে মশার প্রজননকাল তত দীর্ঘ হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঋতুবৈচিত্রের ধরন বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, শীতকালের ব্যাপ্তি কমে আসছে। বর্ষা আসার আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হচ্ছে। কিন্তু বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। কিন্ত এর বিদায়বেলায় বৃষ্টি ঝড়ছে। এটা আবহাওয়ার একটি অস্বাভবিক আচরণ। এবারের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শীতকালে পর্যাপ্ত শীত ছিল না। কিন্তু শীত শেষেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আবার বর্ষায় আবহাওয়া সঠিক আচরণ করছে না। এই বিরূপ আবহাওয়ার কারণেই এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। এদিকে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও পরিস্থিতি উন্নতির কোন লক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও কাজের কাজ হয়েছে কমই। শুধু সচেতনতার উদ্যোগ ছাড়া এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ওষুধের ব্যবহার নেই। এই ফাঁকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে দেশের ৬৪ জেলায়। জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। ঢাকা আক্রান্ত হয়ে যেমন অনেক রোগী এলাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তেমনি স্থানীয়ভাবে অনেকের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে মাদারীপুর ॥ ডেঙ্গু জ্বরে গত ৪ দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে মাদারীপুরে ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শুক্রবার মধ্যরাতে নাদিরা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূ কালকিনি হাসপাতালে মারা গেছেন। নাদিরা কালকিনি পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের আলমগীর মোড়লের স্ত্রী। আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শারমিন আক্তার (২২) নামের এক তরুণী ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। শারমিন রাজৈর উপজেলার টেকেরহাটের রুবেল মিয়ার মেয়ে। অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় ফারুক খান (২২) নামের এক যুবক ঢাকার ইসলামিয়া হাসপাতালে মারা যান। ফারুক শিবচর উপজেলার পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার সলুবেপারিকান্দি গ্রামের বাবু খানের ছেলে। মঙ্গলবার ঢাকায় মারা গেছেন জুলহাস বেপারি (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। তিনি কালকিনি উপজেলার পৌরসভার ঠেঙ্গামারা গ্রামের বারেক বেপারির ছেলে। এ নিয়ে চারদিনে মাদারীপুর জেলায় ৪ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। আর শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক। বর্তমানে সদর হাসপাতালে ৯, কালকিনিতে ৪, রাজৈরে ২ এবং শিবচরে ২জনসহ ১৭জন ভর্তি আছেন। বরগুনা ॥ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তাওহীদ (দেড় বছর) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন হুমায়ুন শাহিন খান জানিয়েছেন, বরগুনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩৭ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাকিদের মধ্যে ১৩ জন বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ও একজন আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। নড়াইল ॥ নড়াইলে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নড়ইলে দুই শিশুসহ মোট ১৫ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে নড়াইল সদর হাসপাতালে শনিবার সকাল পর্যন্ত ১৩ এবং কালিয়ায় ১জন ও লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন ভর্তি আছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে ৪ জন স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত আছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় শুক্রবার নড়াইল-২ আসনের এমপি ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তোজা ৬শ’ কিটস পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ৩শ’ সদর হাসপাতালের জন্য এবং ৩শ’ কিটস লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেয়া হয়েছে। আরও ৪শ’ কিটস জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে রোগীদের জন্য মশারির স্ট্যান্ড সরবরাহ করা হয়েছে। পটুয়াখালী ॥ বেড়ে চলছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ২৩ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ জন। গত ২১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত পটুয়াখালী হাসপাতালে মোট ৪১ রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১৮ রোগীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালে এ রোগের কোন পরীক্ষা- নিরীক্ষার সুব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রোগীর স্বজনদের এসব ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাটোর ॥ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে আসা রোগী ছাড়াও স্থানীয়রাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত নাটোর সদর হাসপাতালে ৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ রোগী। এর মধ্যে ৬ রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এদিকে ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে মানুষ এলাকায় এলে আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে শহরের বেসরকারী সততা ক্লিনিকে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ২৩ জন। তবে আতঙ্কের কারণ হলো স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়া। পঞ্চগড় ॥ দেশের সর্ব উত্তরের এই জেলায় ডেঙ্গু জ¦র আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকায় জ¦রে আক্রান্ত হয়ে কয়েক রোগী পঞ্চগড় এসে সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়াদের মধ্যে হাবিব (২১) নামে এক রোগীকে শনাক্ত করা হয়। ঢাকা থেকে হাবিব জ¦র নিয়ে গত ২৯ জুলাই পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে টেস্টের পর তার শরীরে ডেঙ্গুবাহী জীবাণু পাওয়া যায়। গাইবান্ধা ॥ ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে সিভিল সার্জন জানিয়েছে, গোটা গাইবান্ধা জেলায় এ পর্যন্ত ১৮ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এই ভয়ে সামান্য সর্দি, জ্বর, কাশি, ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত রোগীরাও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০০ বেডের গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে বেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং করিডরে ভর্তিকৃত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। নীলফামারী ॥ সদর আধুনিক হাসপাতাল ও সৈয়দপুর ও ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শনিবার (৩ আগস্ট) চার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা সাত জন। সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন, এ পর্যন্ত ১৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে জেলায়। তারা সকলে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। ডেঙ্গু যাতে না ছড়ায় সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা (মেডিক্যাল টিম) মাঠে কাজ করছেন। সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। জ্বর হলে সরকারী হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রাজশাহী ॥ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হঠাৎ করে চাপ বেড়েছে ডেঙ্গু পরীক্ষার। জ¦র, মাথা ব্যথা হলেই মানুষ ছুটছে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য। গত দুই দিন থেকে এ নিয়ে চাপ বেড়েছে অস্বাভাবিক। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় সবচেয়ে চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ডেঙ্গু নিয়ে সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এই উদ্বেগের সঙ্গে বেড়েছে সচেতনতাও। অনেকেই নিজ বাড়ি পরিষ্কার রাখার জন্য যেমন চেষ্টা করছেন, তেমনি কোনভাবেই যাতে মশায় কামড় দিতে না পারে সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ২০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। রামেক হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। তাদের মধ্যে ২ রোগী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লক্ষ্মীপুর ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরে। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এ জেলায়। প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে আসছে রোগীরা। গত ৮দিনে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তÍ ৪৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২২ ডেঙ্গু রোগী। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আনোয়ার হোসেন জানান, আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগই ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে আসা এবং স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত ৪ মহিলা ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যশোর ॥ জেলায় নতুন আরও ১৪ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে দাঁড়াল ১৪৮জন। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। রোগ নির্ণয় উপকরণ সঙ্কট ও দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরবরাহ নিশ্চিত ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে। যশোরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ইমদাদুল হক রাজু বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনটি মনিটরিং টিম গঠন, একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর চাপের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। রোগীর চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিটস আমদানিকারকরা তিন/চারগুণ দাম বৃদ্ধি করেছে। কুড়িগ্রাম ॥ ফুলবাডীতে সুমি বেগম (২৬) নামের এক গৃহিণী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোপূর্বে এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া না গেলেও এখন গ্রামাঞ্চলের নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী ধারণা করছেন ঢাকায় বসবাসরত অনেকেই ঈদে বাড়িতে আসছেন। এছাড়াও ঢাকা থেকে ফুলবাড়ীগামী নাইটকোচ ও যানবাহনের মাধ্যমে এডিস মশা এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। ফরিদপুর ॥ হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১৪০ রোগী। এদের মধ্যে গত শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদিকে প্রতিদিনই জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলার সরকারী হাসপাতাল ও প্রাইভেট বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। এসব রোগীর বেশিরভাগই এসেছে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে। টাঙ্গাইল ॥ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নতুন ২৪ রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগে ভর্তি ছিল ৪৪ জন। এ নিয়ে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ জনে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনরা জানায়, সরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। গুরুতর রোগী নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে। এতে করে রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। শনিবার এ হাসপাতালে ১৩ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল ১১৪ জন। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৫ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
×