ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা

ময়মনসিংহনেত্রকোনা ॥ সড়ক উন্নয়নে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৪ আগস্ট ২০১৯

ময়মনসিংহনেত্রকোনা ॥ সড়ক উন্নয়নে ধীরগতি

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়ক উন্নয়নে ধীরগতির কাজ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের এই দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিযোগ সড়ক বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণেই এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে সড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট সচল রাখার যে তৎপরতা চলছে তার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ সড়ক যোগাযোগ ও সেতু সচিব নজরুল ইসলাম তানভীর কনস্ট্রাকশন লি. এর ঠিকাদারকে তলব করে প্রথমে কার্যাদেশ বাতিলের হুঙ্কার দিলেও পরে গাফিলতির জন্য কারণ দর্শাতে বলেন। তারপরও গতি আসেনি এই কাজের। এ নিয়ে হতাশ নেত্রকোনার সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ নেত্রকোনা সড়কের বেহাল দশার ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার ময়মনসিংহ ও বাকি ২০ কিলোমিটার পড়েছে নেত্রকোনা সড়ক বিভাগের অধীন। সিপিসিএল নাভানা জয়েন্ট ভেনচার ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের অধীন ১৫ কিলোমিটার ও তানভীর কনস্ট্রাকশন লি. নেত্রকোনা সড়ক বিভাগের অধীন ২০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ করছে। ময়মনসিংহ সওজ কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া দুই বছর মেয়াদে সড়কের মজবুত ও প্রশস্তকরণ চরিত্রের এই উন্নয়ন কাজ আগামী ২০২০ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এসময়ে ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি কাজ চলতি সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছে ময়মনসিংহ সওজ। বাংলাদেশ সরকারের ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ চলছে। সওজের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। খুব শীঘ্রই এই কাজ শেষ করতে কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল নাভানা জয়েন্ট ভেনচার-জানান ময়মনসিংহ সড়ক উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আজিজুল হক। শম্ভুগঞ্জ বাজারের রঘুরামপুর গোলচত্বর থেকে নেত্রকোনা অভিমুখে শ্যামগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে বেশিরভাগ কাজ শেষ হলেও রঘুরামপুর, রশিদপুর ও সানুড়া পয়েন্ট একেবাইরেই বেহাল দশায় রয়েছে। সানুড়ায় রাস্তার একপাশ গর্ত করে ফেলা হচ্ছে বালু মাটি। আরেকপাশ এখনও খোঁড়াই হয়নি। খোঁড়াখুঁড়ির যে কাজ চলছে সেখানেও অনিয়ম হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। গর্তের বালু ফেলা অংশে পর্যাপ্ত পানি দেয়া হচ্ছে না। এমনকি রোলার দিয়ে বালু মাটি সমান করাও হচ্ছে না। রঘুরামপুর ও রশিদপুরের দুটি পয়েন্টে পুরনো আধলা ইট ও পুরনো সুরকি বালির মিশ্রণ ফেলে ছোট বড় খানাখন্দ ভরাট করা হচ্ছে। ঈদে সড়ক সচল রাখতেই এই উদ্যোগ জানান সিপিসিএরের স্থানীয় সার্ভেয়ার সোহেল রানা। ঈদে এই তিনটি পয়েন্টে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কের রঘুরামপুর, রশিদপুর, মোদারপুর, মোজাহরদি, দয়রামপুর ও কাশিগঞ্জসহ যেসব অংশ উন্নয়ন কাজ হয়েছে সেখানে যানবহন চলার সময় প্রচ- ঝাকুনি খাচ্ছে যাত্রী সাধারণ ও চালকের। কাশিগঞ্জ বাজারের যে অংশ ঢালাই করে উন্নয়ন কাজ শেষ করা হয়েছে সেখানে সড়কের কার্যাদেশের সিডিউল অনুযায়ী দুপাশ প্রশস্তকরণের কাজ করা হয় না বলে জানায় স্থানীয়রা। শ্যামগঞ্জ বাজার থেকে নেত্রকোনা অভিমুখে কুতুবপুর, ভবেরবাজার ও নারান্দিয়া এই তিনটি পয়েন্টে যানবাহন চলে ঝুঁকি নিয়ে। নেত্রকোনা অংশের ২০ কিলোমিটারের বেশির ভাগ সড়কের কাজ যেমন হয়েছে, তেমনি সড়কের অনেক জায়গা কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখা হয়েছে। ইট সুরকি মিশ্রণে ফেলে রাখা অংশে যানাবহন চলে হেলেদুলে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে প্রসূতি রোগী বাহী যানবাহন। বেশিরভাগ সড়কের কাজ ফেলে রাখায় গাড়ির গতি বাড়াতে পারছে না চালকেরা। ফলে সময় বেশি লাগছে। রাস্তা খারাপের কারণে সিএনজি অটোরিক্সার মতো ছোট ও হালকা যানবাহনে ভাড়াও বেশি লাগছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। আলাদা দুটি প্যাকেজে সড়কের মজবুত ও প্রশস্তকরণে ওভার-লে পদ্ধতিতে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনার ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল গত ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। চলতি সালের গত জুলাই মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও বাকি অনেক কাজ। অভিযোগ গত ঈদকে সামনে রেখে বিলের জন্য ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কিছু কাজ শেষ করলেও এখন গতি নেই এই কাজে। ধীরগতির এই কাজ কবে শেষ হবে জানা নেই কারও। সড়কের যেসব অংশ অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে সেখানে পানি না ছিটানোর কারণে ধুলোবালিতে অন্ধকার অবস্থান চলাচল করছে যানবাহন। এসময় যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এই সড়কের বাস চালক রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ঠিকাদার ও সওজের গাফিলতির কারণেই সময়মতো কাজ শেষ হয়নি। যাত্রী নাজমুল অভিযোগ করে জানান, গত ঈদে তড়িঘড়ি করে কিছুটা কাজ হলেও এরপর গতি নেই কাজে। ফলে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ কমার কোন লক্ষণ নেই। এ নিয়ে নির্বিকার সওজের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যদিও নেত্রকোনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার জানান, দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শেষ হচ্ছে এই কাজ সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি এই নির্বাহী প্রকৌশলী। ময়মনসিংহ জামালপুর চেচুয়া ও ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট সড়কের ফুলপুর থেকে হালুয়াঘাট সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজেও রয়েছে সওজ ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ। ঈদে এসব সড়কেও ঘরমুখো মানুষকে যানজটের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হবে।
×