ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে চার্টার গার্ডেন পার্কের বাইরে সমাবেশ

এবার বিক্ষোভে সরকারী চাকুরেরা

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ৪ আগস্ট ২০১৯

এবার বিক্ষোভে সরকারী চাকুরেরা

হংকংয়ের আঞ্চলিক সরকারের বিরুদ্ধে এবার বিক্ষোভে নেমেছেন সেখানকার সরকারী চাকরিজীবীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশটির কয়েক হাজার সরকারী কর্মচারী নিজ সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ দেখান। চলতি বছরের জুন মাস থেকে হংকংয়ে চলমান বিক্ষোভে শুক্রবার প্রথমবারের মতো সরকারী কর্মচারীদের যোগ দেয়ার ঘটনাকে একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন। হংকং কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব সরকারী কর্মচারীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়া বিষয়ে প্রথমে সতর্ক করা হয়েছিল। শুক্রবার কর্মচারীরা এই সতর্কতা উপেক্ষা করে হংকংয়ের চার্টার গার্ডেনের পার্কের বাইরের সড়কে জড়ো হয়। আয়োজকদের দাবি, শুক্রবারের বিক্ষোভে সরকারী কর্মচারী ও সাধারণ বিক্ষোভকারীসহ চল্লিশ হাজারের বেশি লোক অংশ নেয়। অবশ্য পুলিশ বলছে, এ সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি হবে না। সরকারী কর্মচারীর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অবসারপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা জোসেপ অং। হংকংয়ের চীন সমর্থিত নেতা ক্যারি লামকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জনগণের এই দাবির প্রতি আপনাকে সাড়া দিতে হবে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর সামনে জোসেপ অং বলেন, আমরা যদি মনে করি যে, আজকের সরকারী কর্মচারী এবং প্রধান নির্বাহী আইনের শাসন লঙ্ঘন করেন অথবা আইনের শাসন মেনে না চলেন তাহলে একজন সরকারী কর্মচারী এবং বেসামরিক লোক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাকে (ক্যারি লাম) বিষয়টি দেখিয়ে দেয়া। শুক্রবারের বিক্ষোভে যোগদানকারীরা বলেন, গত ২১ জুলাই রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভকারীদের ওপর মারধরের ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছে। উল্টো বিক্ষোভে অংশ নেয়া তরুণদেরকেই আটক করেছে। এই ক্ষোভ থেকে তারা আজকের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। ম্যাগি চেং নামে হংকং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী বলেন, সরকার সাধারণ জনগণকে অবহেলা করছে। এ বিষয়টি আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ এখন সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তিনি বলেন, মূলত সাধারণ জনতার সঙ্গে পুলিশের খারাপ আচরণের কারণেই জনরোষ তৈরি হচ্ছে। উল্লেখ্য, হংকংয়ের আইনে সরকারী কর্মচারীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়া সম্পূর্ণ রাষ্ট্রবিরোধী। সেখানকার সরকারী চাকরিজীবীদের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার কথা। হংকং কর্তৃপক্ষ সরকারী কর্মচারীদের এই ধরনের বিক্ষোভে যোগ দেয়া বিষয়ে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করলেও শুক্রবার দিনের বেলায় কিছু কর্মচারী প্রথমে সরকারী দফতরগুলোর সামনে জড়ো হয়। এ সময় কিছু সরকার সমর্থক কর্মচারী এসব দফতরের সামনে জড়ো হওয়া লোকদের বোঝাতে থাকে যে, শুক্রবার রাতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ার পরিণতি ভাল হবে না। যেসব সরকারী কর্মচারী বিক্ষোভে অংশ নেবেন তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। তারপরও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে সরকারকে তাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করার আহ্বান জানান। হংকংয়ের সাবেক চিফ সেক্রেটারি অশোন চানও শুক্রবারের বিক্ষোভে অংশ নেন। বর্তমানে গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন তিনি। অশোন চান বলেন, সরকারের উচিত চলমান জনরোষ ও সহিংসতার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা। সরকারী কর্মচারীদের এই আন্দোলনে অংশ নেয়া ও আইনভঙ্গ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারী কর্মচারীদের আইন ভঙ্গ করা উচিত নয়। আইনের শাসন মানার পাশাপাশি তাদের দেশের আইনের প্রধান রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করা উচিত। তবে এখন হংকংয়ে কী হচ্ছে। এখানে একজন প্রধান নির্বাহীর কাছে বশ্যতা স্বীকার করা হচ্ছে না। তিনিও আইনের উর্ধে নন। চলমান বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার দায়ে গত সপ্তাহে বেজিং সমর্থিত হংকং কর্তৃপক্ষ অন্তত ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধানো ও উস্কানি প্রদানের অভিযোগ আনে। পরদিন বিক্ষোভ নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খোলেন হংকংয়ে নিযুক্ত চীনা সেনাবাহিনীর প্রধান চেন দাও জিয়াং। তিনি হংকংয়ে চীনা সেনাঘাঁটির প্রধান ও পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চেন দাও জিয়াং বলেন, এই বিক্ষোভ মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। এই ধরনের কর্মকা- মেনে নেয়া হবে না। ১৯৯৭ সালে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং চীনের নিয়ন্ত্রণে আসার পর এই প্রথম সেখানে বড় ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় জড়ানোর অপরাধে ৩২ পুরুষ ও ১৭ নারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের এক বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকতে হবে। হংকং সঙ্কট গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাশাপাশি হংকং সীমান্তে চীনা সৈন্য মোতায়েনের বিষয়ে ওয়াশিংটন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
×