ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝুঁকিপূর্ণ পেশা

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৪ আগস্ট ২০১৯

ঝুঁকিপূর্ণ পেশা

সব পেশাতেই কিছু না কিছু ঝুঁকি রয়েছে। তবে মৃত্যুঝুঁকি ভিন্ন বিষয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসাবধানতাবশত কিংবা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষিত নয়। তবে বিদ্যুতকর্মীরা সচেতন বলেই তারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তথা সুরক্ষা গ্রহণ করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে বিদ্যুতকর্মীর অপমৃত্যুর উদাহরণ সমাজে খুব বেশি লক্ষণীয় নয়। বরং নির্মাণ শ্রমিকদের হতাহতের খবর বেশি জানা যায়। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব হচ্ছে একজন নির্মাণ শ্রমিকের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই আইনগত বাধ্যবাধকতা মানা হয় না। ফলে দুর্ঘটনায় আহত নির্মাণ শ্রমিক অনেক সময় চিকিৎসার খরচও পান না মালিকপক্ষের কাছ থেকে। বিষয়গুলো দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কোথাও অন্যায়-অনিয়ম হলে তার প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো অধিকাংশ শ্রমিকই এক্ষেত্রে হন বঞ্চনার শিকার। সম্প্রতি সেপটিক ট্যাংকে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। জয়পুরহাট জেলায় সংঘটিত সর্বশেষ দুর্ঘটনা আমাদের আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, সেপটিক ট্যাঙ্ক বা মনুষ্যবর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা এখনও কতটা উদাসীন। ট্যাঙ্ক ‘পরিষ্কার’ করতে গিয়ে প্রাণহানি বা অসুস্থতা নয়, এক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ট্যাঙ্কের ছাদের শাটারিং খুলতে নেমেছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু বদ্ধ ট্যাঙ্কগুলো যেহেতু বিষাক্ত গ্যাসে ভর্তি বা অক্সিজেনশূন্য অবস্থায় থাকে, সেখানে চেতনা বা প্রাণ হারানো অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ওই ট্যাঙ্কে নেমে চারজন শ্রমিকসহ ট্যাঙ্কের মালিকের পুত্র ও ভাই প্রাণ হারিয়েছেন। একজন শ্রমিক ও মালিকও ট্যাঙ্কে নেমে চেতনা হারিয়েছেন। স্থানীয় দমকল বাহিনীর সদস্যরা ট্যাঙ্ক থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার ও দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। হতাহতের এই ঘটনা মর্মান্তিক। সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে মৃত্যুর খবর প্রায়ই শোনা যায়। এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ম্যানহোল, কূপ, পানির ট্যাঙ্ক ও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৮টি দুর্ঘটনায় উদ্ধারের জন্য দমকল বাহিনীর ডাক পড়েছিল। সেসব দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৩ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ২১ জন। মাটির নিচে ট্যাঙ্ক বা গর্ত দীর্ঘদিন বদ্ধ অবস্থায় থাকলে তার ভেতর এ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, মিথেন, কার্বন মনোক্সাইডসহ নানা ধরনের বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। বদ্ধ থাকার ফলে এসব গ্যাস ক্রমশ ঘন হতে থাকে, সেইসঙ্গে দেখা দেয় অক্সিজেনের ঘাটতি। কখনও কখনও এ ধরনের বদ্ধ কূপ একেবারে অক্সিজেনশূন্য হয়ে যেতে পারে। ফলে মানুষ এসব স্থানে ঢুকলে অক্সিজেনের অভাবে দ্রুত অচেতন হয়ে যেতে পারেন এবং তার জীবন হুমকিতে পড়তে পারে। এ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ধারণা না থাকায় মাঝে-মধ্যেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। বস্তুত এ ধরনের কাজ করার সময় সংশ্লিষ্টদের অক্সিজেন মাস্ক ও অক্সিজেন ডিটেক্টর যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত। এগুলো পাওয়া না গেলে অন্যবিধ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সহজ কিছু উপায়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক, কুয়া বা গভীর কোন গর্ত কতটা নিরাপদ সেটা বোঝা সম্ভব। একটি হারিকেন বা কুপি জ্বালিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে তা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা কূপের ভেতর নামিয়ে দিলে সেটি যদি দ্রুত দপ করে নিভে যায় তাহলে বোঝা যাবে সেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে অথবা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যারা নিয়োজিত তাদের মধ্যে যথাযথ সুরক্ষা জ্ঞান ও সচেতনতা ভালভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সব পেশার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সচেতনতা ও সাবধানতার কোন বিকল্প নেই।
×