ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গণগ্রন্থাগারে ‘সমুখে শান্তি পারাবার’

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৩ আগস্ট ২০১৯

 গণগ্রন্থাগারে ‘সমুখে শান্তি পারাবার’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রাবণের সন্ধ্যাটি সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয়ে ছড়ায় প্রশান্তির পরশ। গানে গানে কেটে যায় ছুটির দিনের অবসর। আর সেই গানের সূত্র ধরে সামনে আসেন বাঙালীর মননের দিশারী রবীন্দ্রনাথ। তারই সুরমাখা বাণীতে সঙ্গীতসন্ধ্যাটি হয়ে ওঠে সুন্দরের প্রতিচ্ছবি। আসছে বাইশে শ্রাবণ কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে অংশ হিসেবে শুক্রবার থেকে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী এই সঙ্গীতাসর। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে ‘সমুখে শান্তি পারাবার’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। দুই দিনব্যাপী সঙ্গীতায়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতগুরু ও বাংলা খেয়ালের স্রষ্টা ড. আজাদ রহমানকে প্রদান করা হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা স্মারক সম্মাননা। আজাদ রহমানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি শিল্পী তপন মাহমুদ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সম্মাননা দেয়ার কথা থাকলেও সে সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে আজাদ রহমান বলেন, এই সম্মাননা শুধু আমার একার নয়, এই ভূখন্ডে যারা সঙ্গীতের জন্য কাজ করেছেন তারা সবাই এই সম্মাননার অংশীদার। তবে দেশে শুদ্ধা সঙ্গীতের চর্চা না বাড়লে এমন সম্মাননা প্রাপ্তির মধ্যে যে অহঙ্কার থাকে, সেটা অর্থপূর্ণ মনে হয় না। সঙ্গীতাঙ্গনে পরিশীলিত সঙ্গীতচর্চার অনুপস্থিতি প্রবল। শুদ্ধতার বদলে সকলেই যেন চটুল গানের প্রতি ঝুঁকছে। কিন্তু ধারা থেকে বেরিয়ে বিশুদ্ধ সঙ্গীতের পথে ফিরতে হবে। কথার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভাষার মধ্যেই নিহীত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। আমাদের ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই সফল হয়েছে মুক্তিযুদ্ধসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রাম। অথচ অনেকেই সেই ভাষাকেই অবজ্ঞা করে ঝুঁকছে অপসংস্কৃতির পথে। নিজস্ব সত্তার সুরকে বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি আশ্রয়ী সঙ্গীতচর্চার মাধ্যমে শিকড়কে অস্বীকার করছে। আপন জাতিসত্তার স্বকীয়তায় ফিরতে হলে পরিহার করতে হবে এই ধার করা সংস্কৃতিকে। পরিবেশনা পর্বের শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। এরপর অর্ধশতাধিক একক ও সমবেত কণ্ঠে শিল্পী প্রেম, পূজাসহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের গান পরিবেশন করেন। ছিলেন কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীর কণ্ঠে গান ও কবিতা আবৃত্তি। প্রথম দিনে একক পরিবেশনায় অংশ নেন- মাহজাবীন রহিম মৈত্রী, মিতা দে, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, সালমা আকবার, দীপা চৌধুরী, রাবিতা সাবাহ, সীমা সরকার, আঁখি হালদার, মীরা মন্ডল, সুবাহ আকবর, সুমা রায়, রুমঝুম বিজয়া রিসিল, সাজেদ আকবর, গোলাম হায়দার, জয়নন্ত আচার্য্য, শফিকুর রহমান, বিষ্ণু মন্ডল, নকুল চন্দ্র দাস, জীবন চৌধুরী, মতিউর রহমান, অভিক দে, আবদুর রশিদ, কাজল মুখার্জী, সাগরিকা জামালী, রমা মন্ডল, খোকন দাস, বনানী দত্ত, তন্বী সাহা প্রমুখ। শিল্পীরা পরিবেশন করেন- তুমি নব নব রূপে এসো, নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা, মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে, আমার প্রাণের পরে, কতোবার ভেবেছিনু, নিবিড় ঘন আঁধারে, জীবন মরণের সীমানা, শ্রাবণ বরিষণ পার হয়ে, দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়, ভরা থাক স্মৃতির সুধায়, ওগো তুমি পঞ্চদশী, আসা যাওয়ার পথের ধারে, পথের শেষ কোথায়, মাটির বুকের মাঝে, আমার এ পথ চাওয়াতেই আনন্দ, আমি বহু বাসনায়, লহো লহো তুমি লহো, আমার যাবার বেলা প্রভৃতি গান। আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় একই স্থানে শুরু হবে সমাপনী দিনের সঙ্গীতানুষ্ঠান। এদিন একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন তপন মাহমুদ, বুলা মাহমুদ, পীযুষ বড়ুয়া, প্রমোদ দত্ত, মাখন হাওলাদার, মহাদেব ঘোষ, মামুন জাহিদ খান, তানজিমা তমা, সর্ব্বানী চক্রবর্তী, অনিন্দিতা রায়, লিলি ইসলাম, রমা বাড়ৈ, কনক খান, নির্ঝর চৌধুরীসহ অনেকে। সর্বাধিক বিক্রিত বই নিয়ে উৎসব ॥ দেশের প্রথম সারির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক বিক্রিত বই নিয়ে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে বিশেষ বইমেলা শুরু হয়েছে। ‘বেস্ট সেলার বই উৎসব ২০১৯’ শিরোনামের এই উৎসব রাজধানীর কাঁটাবনে ১০৯ কনকর্ড মার্কেটের নিচতলায় শুক্রবার বিকেলে শুরু হয়। এখানে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে বেস্ট সেলার বইগুলো। মেলায় অংশ নেয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্যা, অনুপম প্রকাশনী, কাকলী প্রকাশনী, সন্দেশ, পার্ল পাবলিকেশন্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, চারুলিপি প্রকাশন, নালন্দা, ভাষাচিত্র, বাংলানামা, নওরোজ কিতাবিস্তান, শব্দশৈলী, মুক্তদেশ প্রকাশন, আদর্শ, আফসার ব্রাদার্স, মম প্রকাশ, পাললিক সৌরভ, এশিয়া পাবলিকেশন্স, অক্ষর প্রকাশনী, বিভাস ইত্যাদি। আয়োজক প্রতিষ্ঠান ভাষাচিত্র ও দেশের বইয়ের কর্ণধার খন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ আয়োজনে উপহার হিসেবে বইকে জনপ্রিয় করার জন্যই এই উদ্যোগ। একইসঙ্গে বেস্ট সেলার বইগুলোকে আরও বেশি পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই মেলায়। এ মেলা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া বইমেলায় পাঠকের জন্য রয়েছে শুভেচ্ছা উপহার। মুুক্তিযুদ্ধের নাটক ঠিকানার উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ নাটক মানে নিছক বিনোদন নয়, জীবন আর সমাজের প্রতিফলন। জীবন, সমাজের সঙ্গে ইতিহাস কিংবা ঐতিহ্যের কথাই উঠে আসে নাটকে। সেই সূত্র ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাসকে উপজীব্য করে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। ঠিকানা নামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনাটি মঞ্চে এসেছে লোক নাট্যদল (বনানী)। উৎপল দত্ত রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ড. প্রণবানন্দ। শুক্রবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। বাংলা মঞ্চনাটকের কিংবদন্তি নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক উৎপল দত্ত ‘ঠিকানা’ নাটকটি রচনা করেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালেই ২ আগস্ট ১৯৭১ সালে কলকাতায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রচিত এ নাটকটি বাঙালীর আত্মত্যাগের একটি অসামান্য আখ্যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঠিকানা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যশাস্ত্রে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী লোক নাট্যদলের সিনিয়র সদস্য ড. প্রণবানন্দ চক্রবর্ত্তী লোক নাট্যদলের ২৮তম প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামসাদ বেগম, ইউজিন গমেজ, আবদুল্লাহ আল হারুন, প্রণবানন্দ চক্রবর্ত্তী, হাফিজুর রহমান, মনিকা বিশ্বাস, সুধাংশু নাথ, তানজিনা রহমান, জসিমউদ্দিন খান, বাসুদেব হালদার ও মিনহাজুল হুদা দীপ, সাদেকুল ইসলাম, মোজাক্কির আলম রাফান, সোহেল মাসুদ, আরিফ আহম্মেদ, তনয় মজুমদার, অন্দ্রিলা অদিতি দাস। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন জাহিদুর রহমান পিপলু। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন ঠান্ডু রায়হান। সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন মুজাহিদুল হক লেনিন। পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন কামরুন নূর চৌধুরী।
×