ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ১০:০৮, ৩ আগস্ট ২০১৯

 শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরো বড়ো/ করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন/ জাতির জনক যিনি অতর্কিতে তাঁরেই নিধন/ নিধন সর্বাংশে হয়ে সেই পাপ আরো গুরুতর/...বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক/ ধিক্কারে মুখর হও/ হাত ধুয়ে এড়াও নরক।” ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ট্র্যাজিক মৃত্যুর অব্যবহিত পরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে’ শিরোনামে কবিতাটি লেখেন প্রখ্যাত কবি অন্নদাশঙ্কর রায়। বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগস্টের আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্রই শোকের আবহ। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিশাল বিশাল কালো পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাতে নানা স্লোগান-কবিতা শোভা পাচ্ছে। শোকের মাসে বাঙালী জাতি এবার পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি এবং খুনীদের নেপথ্যের দোসর-মদদদাতাদের মুখোশ উন্মোচন করতে জাতীয় কমিশন গঠনের দাবিতে সোচ্চার। গণমানুষের দাবির মুখে শুক্রবার মেহেরপুরের মুজিবনগরের এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঘোষণা করেছেন- আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করতে পারিনি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করতে পারব। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্নস্থানে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগস্ট বাঙালীর জীবনে শুধু শোকের নয় একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। এ মাসেই ঘটেছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দেশে থাকলে তাদেরও জীবন দিতে হতো নরহন্তারক কাপুরুষদের হাতে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আজও হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তার পিছু ছাড়ে না। বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে। চলে একের পর এক নগ্ন হামলা। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার এক সমাবেশে চলে আরেকটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। মূলত শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশেই ঘাতকরা ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। কিন্তু গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি আবারও মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে রক্ষা পান। তবে নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড প্রাণসংহার করে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীর। তাই বর্ষ পরিক্রমায় আগস্ট এলেই সেই রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো দেশবাসীর মনে ভেসে ওঠে। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোকাতুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকের নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ’৭৫-এ ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে বাঙালী ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং পুরো মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবস এবং ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। যে পথে ঘাতকের ট্যাঙ্ক গিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করে জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে, সেই পথে আলোর মিছিল করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মানিক মিয়া এভিনিউর টিএ্যান্ডটি মাঠের সামনের যাত্রী ছাউনি থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৪৪টি মশাল নিয়ে আলোর মিছিলের যাত্রা শুরু করে ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে শেষ করে। আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দ ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।
×