ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিপক্ষ অতিক্ষুদ্র তবু লড়াই ভীষণ তীব্র

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৩ আগস্ট ২০১৯

 প্রতিপক্ষ অতিক্ষুদ্র  তবু লড়াই  ভীষণ তীব্র

সমুদ্র হক ॥ প্রতিপক্ষ অতিক্ষুদ্র তবু লড়াই ভীষণ তীব্র। ক্ষুদ্র কীট (পোকা) এডিস মশা দেশজুড়ে যে স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে তা দ্রুত কমাতে যুদ্ধে নামতে হয়েছে। মশক নিধন যুদ্ধের একটি বড় অস্ত্র ফগার মেশিন। মশকের সঙ্গে যুদ্ধের মাঠে ওষুধে কুয়াশা (ধোঁয়া) সৃষ্টিকারী এই যন্ত্র নিয়ে প্রস্তÍুত প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। তাদের দেখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নূরে আলম সিদ্দিকী সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে জানালেন, প্রতিপক্ষ অতিক্ষুদ্র তবু লড়াই ভীষণ তীব্র। এই লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হচ্ছে দেশের মানুষকে। সকল জেলা প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সর্বস্তরের মানুষ এখন লড়াইয়ের মাঠে। ক্ষুদ্র এই কীট মানবদেহে যেভাবে আঘাত করছে তা রাসায়নিক ছোবলের মতো। ভাইরাস বহনকারী উড়ন্ত অবস্থায় এই মশাকে ফেলে (নিধন) দিতে ব্যবহার হচ্ছে ফগার মেশিন। ফগারে এ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। এ্যাডাল্টিসাইড হলো সালফার মেট্রিনের সঙ্গে ডিজেলের মিশ্রণ। এক ধরনের ‘হিট টু ট্রান্সফর্ম লিকুয়িড’। বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমান জানালেন, এক লিটার ওষুধের সঙ্গে দশ লিটার ডিজেল মিশিয়ে ফগার মেশিনে ভরে প্রায় এক ঘণ্টা স্প্রে করা যায়। বগুড়ায় সাতটি ফগার মেশিন ছাড়াও ২১ টি ওয়ার্ডে ২১ টি হাত স্প্রে মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনে বেশি মাত্রায় ওষুধ মেশানো হয়। কখনও ব্যবহার হয় ডিজেলের বদলে পেট্রোল ও অকটেন। বর্তমানে জার্মানির তৈরি ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের ভাল একটি ফগার মেশিনের দাম ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোরিয়ার তৈরি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের দাম কম। ফগারম্যান এক-দেড় ঘণ্টার বেশি চালাতে পারেন না। হেঁটে হেঁটে চালাতে অসুবিধা হওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) যান্ত্রিক বিভাগ অল্প সময়ে বেশি এলাকায় স্প্রে করতে এক ধরনের মোটরবাইক উদ্ভাবন করেছে। পেছনের চাকার দুই পাশে ছোট দুই চাকা বসানো হয়েছে। একপাশে কেরিয়ারে ফগার মেশিন এঁটে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি স্প্রে করতে করতে এগিয়ে যাবে। এতে কম শ্রমে ও কম সময়ে অধিক এলাকায় ওষুধ ছিটানো সম্ভব। মশক নিধনের আরেকটি প্রক্রিয়া- মশার লার্ভা (ডিম) ধ্বংসে লার্ভিসাইড ব্যবহার। ফার্নেস ওয়েলের সঙ্গে ডিজেলের মিশ্রণে তৈরি হয় লার্ভিসাইড। এই মিশ্রণ ছিটানো হয় হাত স্প্রের মাধ্যমে ড্রেন, বদ্ধ জায়গায় এবং যেখানে মশার বিস্তার ঘটতে পারে এমন স্থানে। ফগার মেশিন ভাইরাস বহনকারী উড়ন্ত মশাকে ফেলে দিলে সাময়িকভাবে বংশ বিস্তার রোধ করা যায়। তবে উভয় প্রক্রিয়া চলমান রাখা দরকার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে। এই মশা ঘরের আশপাশেই থাকে। এডিসের ডিম ধানের বীজের মতো। শুকনো অবস্থায় ছয় মাস থাকতে পারে। দেশে এই সময়টায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো : গত বছর অক্টোবরের এডিস ডিম এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের অধিক পরিমাণ বৃষ্টিতে ভাইরাস গ্রুপ তৈরি করেছে। পরবর্তী মাসগুলোর বৃষ্টিতে এই ভাইরাস আরও গতি পায়। মশক নিধনে পৌরসভাগুলোতে কোন কীটতত্ত্ববিদ নেই। মহানগরী ঢাকাসহ সকল নগরী ও শহরে কোন না কোন স্থানে নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে চৌবাচ্চা ও বড় ড্রামে রাখা পানিতে এডিসের বিস্তার ঘটে। এদিকে ফগার মেশিনের কুয়াশার মতো ধোঁয়ায় বেশিক্ষণ থাকা যায় না। যদিও বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলেছে,এই ফগ (কুয়াশাচ্ছন্ন ধোঁয়া) সাময়িক। শ^াসপ্রশ^াসে কোন ক্ষতি করে না। বেশিরভাগ ফগার মেশিনে পানির সঙ্গে গ্লাইকল সল্যুশন থাকে। তবে যাদের গলায় ও শ্বাসপ্রশ^াসে বেশি কষ্ট আছে তাদের সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। এই মুহূর্তে মশকের সঙ্গে যুদ্ধে ফগার মেশিন ছাড়া গতিও নেই। একই সঙ্গে মশক নিধনের যুদ্ধে লড়াইয়ের মাঠে থাকতে হবে সকলকে। কেউ ছোট হ্যান্ড স্প্রে কিনে ঘরের আশপাশে ওষুধ স্প্রে করতে পারেন।
×