ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে প্রত্যাবর্তনে উদ্ভাসিত স্টিভেন স্মিথ

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ৩ আগস্ট ২০১৯

 টেস্টে প্রত্যাবর্তনে উদ্ভাসিত স্টিভেন স্মিথ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৪২ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখা হয়েছে। স্টিভেন স্মিথের এমন ফেরা নিশ্চিত করেই তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে। বহুল আলোচিত বল টেম্পারিংয়ের অপরাধে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন এক বছরের জন্য। অস্ট্রেলিয়া তো বটেই ওই ঘটনায় পুরো ক্রিকেটবিশ্বই কেঁপে উঠেছিল। বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন, তবে তার দেশ শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি। এবার দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে টেস্ট প্রতাবর্তনটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন স্মিথ। এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ্যাশজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১২২ রানে ৮ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া যে শেষ পর্যন্ত ২৮৪ রানের স্কোর গড়ে সেখানে ২১৯ বলে ১৬ চার ও ২ ছক্কায় স্মিথ একাই করেন ১৪৪! প্রথমদিনের খেলা শেষে অকপটে স্বীকার করেছেন এটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। টেস্টে দ্রুত ২৪ সেঞ্চুরির পথে বিরাট কোহলিকে পেছনে ফেলে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পেছনেই জায়গা করে নিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। এজবাস্টনের প্রতিকূল গ্যালারি থেকে ভেসে আসা দুয়ো ধ্বনি, কঠিন উইকেট, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়- টেস্ট প্রত্যাবর্তনে এ সবকিছুই মোকাবেলা করতে হয়েছে স্মিথকে। ৪৪ ওভারের মধ্যে ১২২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ একপাশ আগলে উইলো দিয়ে লিখেছেন ১৪৪ রানের ‘মহাকাব্য’। দুই টেলএন্ডার পিটার সিডল (৪৪) ও লেওনের (১২) কাছ থেকে পেয়েছেন সাহায্য। ১২২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলটাকে কোথায় নিয়ে গেলেন স্মিথ। নবম উইকেটে ৮৮ আর শেষ উইকেট জুটিতে ৭৪ রান যোগ করে ইংলিশদের ধৈর্যের চরম পরীক্ষা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৪৪ ওভারে ৮ উইকেট ফেলে দেয়ার পর বাকি দুই উইকেটের জন্য জেমস এ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ড ব্রডদের যে আরও ৩৭ ওভার বল করতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অষ্টম উইকেট যখন পড়ে স্মিথ অন্যপ্রান্তে ৪২ রানে অপরাজিত। সেখান থেকেই সিডলের সঙ্গে ১৪০ রানের জুটি। শেষ ব্যাটসম্যান লেওনকে পেয়েও ভাবেননি সব শেষ। এ দুটি জুটিতে উঠেছে মোট ১৬২ রান, স্মিথের একার অবদানই ১০২! দিনের খেলা শেষে স্মিথ বলেন, ‘অনেকদিন পর আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরি পেলাম। এটা দারুণ মুহূর্ত ছিল। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি আসলে কি বলব জানি না। এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। এভাবে ফিরতে পেরে সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ। আবার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলছি যা আমি পছন্দ করি। আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চাই, জনগণকে গর্বিত করতে চাই।’ এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে বিপিএল দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেই চোট পেয়েছিলেন কনুইয়ে। করাতে হয়েছিল অস্ত্রোপচারও। কঠিন সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি আরও যোগ করেন, ‘গত ১৫ মাসে এমন সময় কেটেছে যখন আমি জানতাম না আবার ক্রিকেট খেলতে পারব। একটা পর্যায়ে খেলার প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বিশেষ করে কনুইয়ে অস্ত্রোপচারের সময়। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত, যেদিন ব্যান্ডেজ খুললাম সেদিন খেলার প্রতি আবার ভালবাসা ফিরে পেলাম।’ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভেন স্মিথ অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ফেরেন বিশ্বকাপ দিয়ে। এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই বিশ্বকাপে তাকে দুয়ো দিয়েছিলেন ইংলিশ সমর্থকরা। একই দৃশ্য দেখা গেছে তার টেস্টে ফেরার দিনেও। গত বছর মার্চ-এপ্রিলে নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে কেঁদেছিলেন স্মিথ, তার সেই কাঁদো কাঁদো চেহারার মুখোশ পরেও গ্যালারিতে ছিলেন কিছু ইংলিশ সমর্থক। তবে ব্যাপারটি তাকে বিরক্ত করেনি, ‘এটা আমাকে বিরক্ত করেনি। আমি জানি আমি ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের সমর্থন পেয়েছি এবং আমার কাছে এটাই বড় বিষয়। যখন সেঞ্চুরি পেলাম, ওরা ব্যালকনিতে ঝুঁকে পড়ছিল। এটা আমার ভেতর অন্যরকম একটা অনুভূতি এনে দিয়েছিল।’ ১৬ মাস পর কেবল ফেরার জন্যই ফেরা নয়, ঠিক যেন রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। গড়েছেন ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া যে কোন এ্যাশেজের প্রথমদিনে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ৬৫ টেস্টের মাত্র ১১৮ ইনিংসে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম ২৪তম সেঞ্চুরির মালিক বনে গেছেন স্মিথ, পেছনে ফেলে দিয়েছেন ১২৩ ইনিংসে ২৪তম সেঞ্চুরি করা সময়ের সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরাট কোহলিকে। মাত্র ৬৬ ইনিংসে ২৪তম সেঞ্চুরি করে যথারীতি এ তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছেন স্মিথের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। এছাড়া ক্যারিয়ারের ২৪তম হলেও এ্যাশেজে স্মিথের এটি নবম সেঞ্চুরি। মর্যাদার এ সিরিজে তারচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে কেবল স্যার ডনেরই (১৯), স্যার জ্যাক হবস (১২) এবং স্টিভ ওয়াহর (১০)। সমান ৯টি করে সেঞ্চুরি নিয়ে এ তালিকার চতুর্থ স্থানে ওয়ালি হ্যামন্ড এবং ডেভিড গাওয়ারের সঙ্গী হয়েছেন স্মিথ।
×