ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

টুঙ্গিপাড়ার সমাধি পাশে

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৩ আগস্ট ২০১৯

টুঙ্গিপাড়ার সমাধি পাশে

: বঙ্গবন্ধু : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী : বাঙালীর অবিসংবাদী নেতা : বাঙালীর জাতিরাষ্ট্রের পিতা : ইতিহাসের মহানায়ক : স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান প্রতিষ্ঠাতা : তৃতীয় বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের নেতা : গণতান্ত্রিক বিশ্বের মহান পথ প্রদর্শক : লড়াই করে বাঁচতে হয়-এর মহান শিক্ষক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : আল্লাহ আপনার সমাধিকে বেহেশতের বাগান বানিয়ে দিন জনাব, আপনি আমাদের মাঝে নেই আজ আর। ১৯৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখ কালরাতে মিলিটারি হায়েনার দল আপনাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সত্য; কিন্তু আপনার আদর্শ, মত-পথ, সাহস, সংগ্রাম, বীরত্ব, ত্যাগ, অর্জন, মানুষের প্রতি ভালবাসা আজও বেঁচে আছে। থাকবে অনন্তকাল। শারীরিকভাবে রাতের অন্ধকারে বুলেট দিয়ে কেড়ে নেয়া যায়; কিন্তু আদর্শ কেড়ে নেয়া যায় না। তাই তো মুষ্টিমেয় রাজাকার-আলবদর-আলশামস, স্বাধীনতাবিরোধীকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দেশের উন্নয়নে আপনারই কন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন অকুতোভয়ে। আপনি তাঁকে দোয়া করবেন। আমরাও সেই দোয়ায় শামিল হতে চাই। শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার ১ আগস্ট আমরা একদল সাংবাদিক টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি পাশে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এই দোয়া চেয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছি। আমাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান ফারুক, সৈয়দ আহমেদুজ্জামান, শেখ মামুন, জিহাদুর রহমান জিহাদ, মান্না ও বিভিন্ন অঙ্গ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে যাত্রা শুরু করে মাওয়া ফেরি হয়ে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত বিশাল কর্মযজ্ঞের মাঝ দিয়ে যাওয়ার পথে ফেরি থেকে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর পিলার আর স্প্যান দেখে মনটা ভরে উঠেছিল এবং সেই ভরা মন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কত বাধা, কত গুজব, কিন্তু কোন কিছুই আপনার আদরের কন্যা শেখ হাসিনাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। তিনি আজ আপনারই মতো বিশ্বনেতা। উন্নয়নে-আয়োজনে আপনার বাংলাদেশকে এমন এক উচ্চতায় তুলে নির্মাণ করে চলেছেন যা দেখে অনেকেই হিংসায়-পরশ্রীকাতরতায় জ্বলছে। জ্বলছে জ্বলুক। তাকে কে রুখবে? কত চক্রান্তই না করা হয়েছে, হচ্ছে। এই পদ্মা সেতু নিয়ে প্রথমে চক্রান্ত করল বিশ্বব্যাংক। বলল দুর্নীতি হয়েছে। অতএব, বিশ্বব্যাংক এতে অর্থায়ন করবে না। কিন্তু তা ছিল বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগ। কানাডার আদালতেই প্রমাণ হলো এটি মিথ্যে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন- So What, We will build Padma Setu on our own money.’ দেশাভ্যন্তরে মানুষ তার এই ঘোষণায় বিস্মিত হলো, বিশ্ববাসী বিস্মিত হলো, আমাদের নয়াপল্টন-গুলশানের বিএনপি সার্বিকভাবে হতাশ হলো। তো এখন কী করা যায়? তারা শুরু করল মিথ্যে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার গোয়েবলসীয় কৌশল। খোদ নেত্রী খালেদা জিয়া বললেন, ‘ওরা যত কথাই বলুক পদ্মা সেতু বানাতে পারবে না।’ যখন কাজ শুরু হলো এবং একটার পর একটা স্প্যান বসিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে যেতে লাগল তখন বললেন- এই সেতুতে কেউ উঠবেন না। ওটি ভেঙ্গে পড়বে, ওটি জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে...। কী হাস্যকর কথাবার্তা? একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী যখন এই ধরনের প্রলাপ বকেন তখন তাকে কি বলা যাবে জনগণই বিচার করবেন। তারপর, দেশব্যাপী এক ভয়ানক সর্বনাশা গুজব- ‘পদ্মা সেতু শিশুর রক্ত চায়’, ‘পদ্মা সেতু কল্লা চায়’। ওরা এত ক্যালকুলেটিভ যে, ওরা জানত এই গুজব খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া ছড়াবে। হলোও তাই। দেশে যখন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, এরই মধ্যে হাজারো মানুষ নারী-পুরুষ-শিশু আক্রান্ত হয়েছে, কয়েকজন মৃত্যুবরণও করেছে, ডাক্তার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার স্ত্রী পর্যন্ত মারা গেছেন, ঠিক তখনই ওই গুজবটি ডালপালা ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে শুরু করেছে কিছু বেক্কল এবং নির্বোধ মানুষ। বিশেষ করে নারীদের ওপর ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে হত্যার উল্লাস শুরু করে। ঢাকার বাড্ডায় সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে যেভাবে পিটিয়ে মারল ভদ্র মহিলাকে তা কোন মানুষ করতে পারে না। আমার এলাকা ফরিদগঞ্জেও এমন এক নারীকে ছেলেধরা বলে পেটাতে শুরু করলে আশপাশ থেকে মানুষ এসে তাকে রক্ষা করে। এসব ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ঠিকই; কিন্তু পুলিশের তদন্ত বা চার্জশীট দিতে দিতে যত সময়ক্ষেপণ করবে ততদিনে ওই মামলাটি হারিয়ে যাবে। জনশ্রুতি হলো যতদিন না পুলিশের পেটভরানো হবে ততদিন চার্জশীট হবে না। এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যখন ফেরি থেকে পদ্মা সেতুর স্প্যানগুলো দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিল আমরা বাংলাদেশে আছি না অন্য কোথাও? হ্যাঁ, বাংলাদেশেই আছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে এমন মর্যাদার আসনে তুলে এনে দিয়েছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো গুজবের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। সাম্প্রতিককালে আরেকটা বিষয় খুব ভাবিয়ে তুলেছে। মাদ্রাসার সুপার বা অধ্যক্ষ নারী নির্যাতনের দায়ে পুলিশের হাতে ধরা। শুনলাম মাদ্রাসার এক অধ্যক্ষ তারই ২০ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। লোকটি বলাৎকারও করেছে। তাকে নাকি এসব করতে উদ্বুদ্ধ করেছে ইবলিস শয়তান। আরেকটি যন্ত্রণার নাম মাদকাসক্তি। এটিকেও একই ট্রিটমেন্ট দেয়া উচিত। তারপরও বলব পুলিশ অনেক ভাল কাজ করছে। পুলিশকে সহায়তা করাও আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। যারা গুজব ছড়ায় তাদের ধরে বেঁধে নিয়ে থানায় সোপর্দ করা উচিত। ফেরিতে বসে কেবলই মনে পড়ছিল কবে নাগাদ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে, ঢাকা-টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে এবং আমরা বাসে-ট্রেনে করে কবে নাগাদ টুঙ্গিপাড়া যাব। দিনে দিনে ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ আমাদের এই স্বপ্নও পূরণ হবে। শোকের মাসের প্রথম দিনেই আমরা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানালাম। দেখলাম এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেতে শুরু করেছে। ফেরার পথে ফেরিতে গাড়িতে বসে ভাবছিলাম পদ্মা সেতু, সেতুর ওপর ট্রেন ও গাড়ি চলাচল শুরু হলেও টুঙ্গিপাড়া মানুষের ঢল কিভাবে সামলাবে। যে মিলিটারী হায়েনা জাতির পিতাকে হত্যা করল এবং মৃত্যুর পর তার নাম যাতে কেউ না নেয় বা কেউ সেখানে না যায়, সে জন্য ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর দেহ সমাহিত না করে টুঙ্গিপাড়ার মতো পাড়াগাঁয়ে করা হলো। তাদের ধারণা ছিল এভাবে বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্থলে মিলিটারি জিয়াকে ঢাকার সংসদ ভবনের লেকের পাড়ে কবর দেয়া হয়। তাতে মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভুলে জিয়াকে স্মরণ করবে। কিন্তু তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। জিয়ার করবে এখন দলীয় কিছু নেতাকর্মী ছাড়া আর কেউ যায় না। তাও জিয়ার জন্ম-মৃত্যু প্রভৃতি দিনে। কোথায় বঙ্গবন্ধু আর কোথায় জিয়া। তাও আবার জিয়া খুনী মুশতাকের সহযোগী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যায় তারও হাত রয়েছে বলে আজ বহুল আলোচিত। এমন দিনও আসবে যেদিন জিয়ার করব বিরানভূমিতে পরিণত হবে। আর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি হবে বাঙালী তথা বিশ্বের তাবত শান্তিকামী মানুষের জন্য তীর্থস্থান। কেউ কেউ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়ার তুলনা চলে না। আমি একমত। কিন্তু যে দলে খালেদা-তারেক-মির্জা ফখরুল-রিজভীরা রয়েছে সে দলের সম্পর্কে কাউন্টার বক্তব্য দিতেই হবে। দেয়া দরকার এ জন্য যে, অন্যথায় তারা বারবার বলে একেকটি মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার সুযোগ পাবে। কোন সুযোগ তাতে দেয়া যায় না, জাতির ক্ষতি হবে। ঢাকা-২ আগস্ট ২০১৯ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সংসদ সদস্য: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, সদস্য: তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থানীয় কমিটি, সদস্য : লাইব্রেরী কমিটি, সদস্য : বঙ্গবন্ধু বর্ষ উদ্যাপন সংসদীয় কমিটি, সাবেক সভাপতি/সাঃ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব, সিনেট সদস্য : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]
×