ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

প্রদর্শনীতে শখের ডাকটিকেট

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ৩ আগস্ট ২০১৯

প্রদর্শনীতে শখের ডাকটিকেট

ডাকটিকেট। শব্দটা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে চিঠির খামের ছবি, যার এক কোনায় লাগানো থাকবে সুন্দর দেখতে ডাকটিকেট। ডাকটিকেট সংগ্রহ অনেকেরই শখ। তোমরাও কেউ কেউ হয়ত ডাকটিকেট জমাও। আচ্ছা, যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন জমাও ডাকটিকেট? কী বলবে? হয়ত বলবে, শখ, কিংবা ভাললাগে তাই। কেউ বলবে, ডাকটিকেটে একটা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিশেষ দিবস উপলক্ষে ডাকটিকেট বের হয়। ডাকটিকেটে থাকে একটা দেশের ফুল-ফল, পর্যটন এলাকা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্বসহ অনেক ছবি। সব মিলিয়ে ডাকটিকেট যেন একটা দেশেরই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু ডাকটিকেট জমিয়ে যদি তুমি একাই দেখ, তাহলে কীভাবে হবে? তাই শখের ডাকটিকেটগুলো যেন সবাইকে দেখানো যায়, এজন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা আয়োজন করে ডাকটিকেট প্রদর্শনীর। গত ২৭-২৯ জুলাই জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত হয় এমনই এক ডাকটিকেট প্রদর্শনী। বাংলাপেক্স নামক জাতীয় ডাকটিকেট প্রদর্শনী ২০১৯-এর আয়োজক বাংলাদেশ ফিলাটেলিক ফেডারেশন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর সংস্থাটি এমন এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকেট বের হয়। সেই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর ২৯ জুলাই ডাকটিকেট দিবস হিসেবে পালিত হয় বাংলাদেশে। এই ডাকটিকেট দিবস উপলক্ষেই বাংলাদেশ ফিলাটেলিক ফেডারেশন প্রদর্শনীটা এই সময়ে আয়োজন করেছে। এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন ৫৮ জন ডাকটিকেট সংগ্রাহক। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশী নয়, আছেন নেপাল ও ভারত থেকে আসা সংগ্রাহকও। প্রত্যেকেই নিজের পছন্দমতো বিষয়ের ওপর ডাকটিকেটের সংগ্রহ প্রদর্শন করেছে এই প্রদর্শনীতে। কেউ বাংলাদেশের প্রকৃতি নিয়ে ডাকটিকেট সাজিয়েছে, কেউ প্রাণীবৈচিত্র্য নিয়ে, আবার কেউ সুন্দর পাহাড়-পর্বত নিয়ে। কেউ আবার কার্টুনবিষয়ক সব ডাকটিকেট সাজিয়েছে। এভাবে নিজের পছন্দের বিষয়ে জমানো ডাকটিকেট প্রদর্শন করেছে সংগ্রাহকরা। আর হ্যাঁ, তোমার ডাকটিকেটের সংগ্রহ কিন্তু তোমাকে পুরস্কারও এনে দিতে পারে। বাংলাপেক্সে প্রদর্শনীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার আয়োজনও ছিল। সাতটি বিভাগে হয়েছে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ৫৬ জন সংগ্রাহক, আর বাকে দুজন ছিলেন অতিথি প্রদর্শক। ২১ বছরের উর্ধে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ৪৯ জন সংগ্রাহক। ২১ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের জন্য ছিল আলাদা একটি বিভাগ। এই বিভাগে অংশ নেয় ৭ জন। এদের মধ্যে ৪১ জন জিতে নেন ভার্মিল, সিলভার, সিলভার ব্রোঞ্জ, ব্রোঞ্জ ও বিশেষ পুরস্কার। মজার বিষয় হচ্ছে, ইয়ুথ ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়া ৭ জনই জিতে নিয়েছে পুরস্কার! শুধু কিন্তু এটুকুই নয়। অনেকেই ভাবে, ডাকটিকেট বুঝি হারিয়েই যাচ্ছে। তাদের ধারণা, ইমেইলের এই যুগে চিঠির প্রয়োজন কমে আসছে, তাই কমে আসছে ডাকটিকেটের চাহিদাও। কিন্তু এটা একদম ভুল ধারণা। এই প্রদর্শনীই কিন্তু তার প্রমাণ। প্রদর্শনীর প্রথম দিন, ২৭ জুলাই একটা ওভারপ্রিন্ট ডাকটিকেট অবমুক্ত করা হয়। সেই ডাকটিকেটের সঙ্গে অবমুক্ত করা হয় একটি উদ্বোধনী খামও। দ্বিতীয় দিন ২৮ জুলাই অবমুক্ত করা হয় বন্ধুত্ব দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ খাম। তৃতীয় দিন ২৯ জুলাই ডাকটিকেট দিবস উপলক্ষে একটি ডাকটিকেট ও তার উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করা হয়, একইদিনে অবমুক্ত করা হয় একটি বিশেষ খামও। তাহলে বুঝতেই পারছ, ডাকটিকেট কিন্তু হারিয়ে যায়নি। ডাকটিকেট এখনও সগৌরবে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তিন দিনব্যাপী এই ডাকটিকেট প্রদর্শনীতে কিন্তু শুধু ডাকটিকেট প্রদর্শন হয়নি, ছিল বিভিন্ন দেশের ডাকটিকেট, ব্যাংক নোট, ম্যাচবক্স, উদ্বোধনী খাম, বিভিন্ন স্যুভেনিরসহ নানা জিনিস কেনার ব্যবস্থাও। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, তুমি যদি ডাকটিকেট জমাতে ভালবাস, তাহলে তোমার এই শখ কিন্তু মোটেও শুধু একটা সাধারণ শখ না। ডাকটিকেট জমানোর শখের একটা আভিধানিক নামও আছে। সেটা হচ্ছে ‘ফিলাটেলি।’ আর ডাকটিকেট বা ডাক সংক্রান্ত জিনিসের সংগ্রাহকদের বলা হয় ‘ফিলাটেলিস্ট।’ ডাকটিকেট নিয়ে তো অনেক জানলে। প্রদর্শনীর কথাও জানলে। ডাকটিকেট যদি আগে থেকেই তোমার পছন্দের হয়ে থাকে, বা যদি এখন তোমার ডাকটিকেট ভাল লাগতে শুরু করে, তাহলে তুমিও কিন্তু আস্তে আস্তে হয়ে যেতে পার একজন বড় ফিলাটেলিস্ট! এজন্য তোমাকে কঠিন কোন কাজ করতে হবে না। তোমার পছন্দমতো একটা বিষয় ঠিক করে সেই বিষয়ের উপর ডাকটিকেট জমাতে শুরু কর। একদিন দেখবে তোমার ডাকটিকেটও স্থান পাবে প্রদর্শনীতে, আর তোমার শখের ডাকটিকেটের সংগ্রহ দেখতে আসবে অনেকে। এভাবে তুমিও হয়ে উঠবে একজন অসাধারণ ফিলাটেলিস্ট!
×