ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ১২:২৮, ২ আগস্ট ২০১৯

কবিতা

মায়াসভ্যতা গোলাম কিবরিয়া পিনু পৃথিবীটাকে আরও বেশি বাসযোগ্য করে রেখে যেতে হবে, সে-কারণে আমিও ভূমি ও ভূমিকা ব্যবহার করি প্রতিনিয়ত! পূর্বসূরিরা তো আমাদের জন্য কত কী রেখে গেছে, কত আবিষ্কার! পিতা -মাতা রেখে যায়, পুত্র-কন্যার জন্য, যতটুকু সাধ্যে থাকে, ততটুকু! নীল আর্মস্ট্রংও রেখে গেছে চাঁদের বুকে পদচিহ্ন, উত্তরসূরির জন্য, পুরনো গুহার দেয়ালে দেখ কত অব্যক্ত ছবি। পূবসূরিদের ছায়ায় আমাদের ছায়া থাকে বলে ছায়া হয়ে ওঠে মায়াময়! মানুষের সভ্যতা যেন একেকটা মায়া সভ্যতা! ** ছায়াসঙ্গী নেই সোহরাব পাশা কথা নেই বাড়ছে গুঞ্জন ঠোঁটে তীক্ষè দুর্বোধ্য হাসির প্ররোচনা বেড়ে যাচ্ছে মেঘের আহ্লাদ, নৈঃশব্দ্যের লোনা জল নিঃশ্বাসের নিবিড় মুদ্রণে পাখিরাও খুঁজে ফেরে জ্যো¯œারং প্রিয় রাত্রির যাপন আলিঙ্গনে লাবণ্যের মগ্ন কোলাহল শরীরের তীব্র ঘ্রাণ অন্ধকার অমীমাংসিত শূন্যতার অন্ধ নদী ভেতরে শেকড় নেই, জল ওড়ে হাওয়ার ডানায় কোথাও পুড়ছে হৃদয় বসন্ত-ভোরের গান, প্রসন্ন বেহালা পুড়ে যাচ্ছে তোমার চোখের আলো-পড়া মানচিত্র তুমি নীরবে মুখস্থ করছো অশ্রুর দীর্ঘ পাঠ অন্য বেলা দূর ডাকে পেছনের নির্জন দুপুর গন্তব্যের ছায়াসঙ্গী আজ বাড়ি নেই বারান্দায় কাত-করা অকেজো মলিন সাইকেল, বড়ো বিষণœ গভীর একাকিত্ব নিয়ে ফিরে যায় ক্লান্ত বিহ্বল পা অন্য কোন প্রান্তরের দিকে ** বৃষ্টি নিয়ে দুটো কবিতা অনুবাদ : মীম মিজান হেনরি ওয়াডসওর্থ লংফেলো (১৮০৭-১৮৮২) একজন প্রকৃতির কবি। আমাদের দেশে যেরকম বৃষ্টিপাত ও বর্ষা হয় অনুরূপ বৃষ্টিপাত ও বর্ষা হয় মার্কিনমুল্লুকে। তবে পার্থক্য অনেক। কী রঙ, রস সেই মার্কিনী বরষা বা বৃষ্টির তা জানতে চমৎকার ছন্দের একটি কবিতা আমরা পড়তে পারি লংফেলো এর। লংফেলোর মতোই আরেক মার্কিনী কবি এমিলি ডিকিনসনও (১৮৩০-১৮৮৬) তার কাব্যে বৃষ্টিকে এক অনন্য অনুষঙ্গ হিসেবে এনেছেন। তার কাব্যিক ছন্দে বৃষ্টি যেন পাঠকের সামনে ঝরছে পাঠমাত্রই। তার উল্লেখযোগ্য পাঠকনন্দিত কবিতার মধ্য থেকে এখানে একটি কবিতা বাঙলায়ন করা হয়েছে। কবিতা দুটি পোয়েম হান্টার ডটকম থেকে সংগৃহীত হয়েছে। ** বৃষ্টিস্নাত দিন হেনরি ওয়াডসওর্থ লংফেলো দিনটি শীতল, আঁধারিয়া আর নিরানন্দ; বৃষ্টি ঝরছে, আর বাতাস কখনওই পরিশ্রান্ত নয়; দ্রাক্ষালতা এখনো ক্ষয়িত দেয়ালে লেগে আছে, কিন্তু প্রত্যেক ঝাপটায় শুষ্ক পল্লব পড়ছে। আর দিবসটি আঁধারিয়া এবং নিরানন্দ। আমার জীবন শীতল, আঁধারিয়া আর নিরানন্দ; বৃষ্টি ঝরছে, আর বাতাস কখনওই পরিশ্রান্ত নয়; আমার চিন্তা এখনো ক্ষয়িত অতীতে লেপ্টে আছে, কিন্তু যুব বয়সের প্রত্যাশা পুরুভাবে পড়ছে বিস্ফারণে, আর দিবসটি আঁধারিয়া এবং নিরানন্দ। অনড় হও, বিষণœ হৃদ, আর অস্থিরতাকে ক্ষান্ত দাও; মেঘের আড়ালে কি এখনো ভানু আলো ছড়াচ্ছে; তোমার ভাগ্যের মতোই সবার ভাগ্য, প্রত্যেক জীবনে কিছু বরিষণ অবশ্যই পড়বে, অবশ্যই কিছু দিবস আঁধারিয়া আর নিরানন্দ। (‘বৃষ্টিস্নাত দিন’ কবিতাটি হেনরি ওয়াডসওর্থ লংফেলো এর ‘দ্য রেইনি ডে’ নামক কবিতার বাঙলায়ন) ** আপেল বৃক্ষের উপর এক ফোঁটা পড়ে এমিলি ডিকিনসন আপেল বৃক্ষের উপর এক ফোঁটা পড়ে অন্য একটি ছাদে; আর অর্ধডজন ঘরের কিনারাকে চুম্বন দিলো, আর বাড়ির ত্রিকোণকে হাসালো। কতিপয় বেরিয়ে পড়েছে ছোট্টনদীকে সাহায্যার্থে, যেগুলী গমন করেছে অর্ণবকে সাহায্যার্থে। আমার মনে হয়, সেগুলী কি মুক্তোদানা ছিল, কী কণ্ঠাভরণ হবে সেটি! ধুলোগুলি প্রতিস্থাপিত হয়েছে উত্তোলিত পথে, বিহঙ্গবৃন্দ প্রফুল সঙ্গীত গাইলো; সূর্যরশ্মি তার সাহেবি টুপি রাস্তায় ছুড়েছে, ফলের বাগানে চুমকি ঝুলানো। মৃদু সমীরণ নিরানন্দ বাঁশির সুর এনেছে, আর তাদেরকে উল্লাসে সিক্ত করেছে; পূর্ব একটি ধ্বজা তুলে ধরেছে, আর উৎসবের পথকে চিহ্নিত করেছে। (‘আপেল বৃক্ষের উপর এক ফোঁটা পড়ে’ কবিতাটি কবি এমিলি ডিকিনসন এর ‘আ ড্রোপ ফেল অন দ্য এ্যাপল ট্রি’ নামক কবিতার বাঙলায়ন)
×